নিলয় ধর,স্টাফ রিপোর্টার(যশোর) :
অবশেষে যশোরে কাঙ্খিত ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম চালু হয়েছে। ইতিমধ্যে সাত জন যশোর অফিস থেকে এই পাসপোর্ট গ্রহণ করেছে ও প্রক্রিয়াধীন আছে শতাধিক আবেদন। গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে যশোরে আনুষ্ঠানিকভাবে এই কার্যক্রম চালু হয়। করোনা মহামারির কারণে এ কার্যক্রম দুই মাস পিছিয়ে ছিল। একইসাথে চালু রয়েছে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট কার্যক্রম। সূত্র জানা যায়, ২০১৬ সালের ২৪ এপ্রিল পাসপোর্ট সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ই-পাসপোর্ট কার্যক্রমের ঘোষণা দেন। ই-পাসপোর্ট এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে বিদ্যমান বইয়ের সঙ্গে একটি ডিজিটাল পাতা (ডাটা পেজ) জুড়ে দেওয়া রয়েছে। ওই ডিজিটাল পাতায় উন্নতমানের মেশিন রিডেবল চিপ বসানো রয়েছে। এতে সংরক্ষিত থাকবে পাসপোর্টধারীর সব তথ্য।
ডাটা পেজে থাকবে পাসপোর্টধারীর ৩ ধরনের ছবি, ১০ আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের আইরিশ। ভ্রমণকালে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ কম্পিউটারের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে পাসপোর্টধারীর সব তথ্য-উপাত্ত জানতে পারবেন। এতে সবচেয়ে বড় সুবিধা হবে বিভিন্ন বিমানবন্দরে ভিসা চেকিংয়ে। পৃথিবীর ১২০টি দেশে বর্তমানে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম চালু আছে। চলতি বছরের ২৮ জুন থেকে দেশের বিভাগীয় অফিসগুলোতে এই কার্যক্রম চালু হবার কথা ছিল। এর ১৫ দিন পর জেলা অফিসগুলোতে ই-পাসপোর্টের কাজ শুরু হবে বলে নিদের্শনা পাঠানো হয়। কিন্তু করোনায় গোটা দেশ বিপর্যস্থ হয়ে পড়ে। ফলে অন্যান্য অফিস আদালতের ন্যায় পাসপোর্ট অফিসও কিছুদিন বন্ধ ছিল। এই কারণে স্বাভাবিক কার্যক্রমে ধীরগতি আসে। পরবর্তীতে সরকারের নির্দেশে পাসপোর্ট অফিস খোলা হলেও নতুন আবেদন ও সংশোধন কার্যক্রম বন্ধ ছিল। শুধুমাত্র চালু ছিল কোন পরিবর্তন ছাড়াই নবায়ন কার্যক্রম। এরপর গত সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরে যায় দেশের পাসপোর্ট অফিসগুলো। ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে যশোরে চালু হয় ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম। এরপর গত ১৫ দিনে যশোর অফিস থেকে ৭ জনের ই-পাসপোর্ট প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া আবেদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে আরো শতাধিক বলে অফিস সূত্র জানানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, যশোর অফিস থেকে ই-পাসপোর্ট ৫ ও ১০ বছর মেয়াদী প্রদান করা হচ্ছে। এই ক্ষেত্রে কয়েকটি শর্ত রয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, ১৮ বছরের নীচে ও ৬০ বছর বয়সের অধিক ব্যক্তিরা ৫ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্টের আবেদন করতে পারবেন। এই বয়সের বাইরের মানুষ ১০ বছর মেয়াদি পাসপোর্টের আবেদন করতে পারবেন। ৪৮ পাতার দশ বছর মেয়াদী সাধারণ (২১ দিন) ই-পাসপোর্টের ফি ৫ হাজার ৭৫০ টাকা, জরুরি (১০ দিন)মেয়াদের ফি ৬ হাজার ৩২৫ টাকা ও অতি জরুরি (২ দিন)মেয়াদের ফি ৮ হাজার ৬২৫ টাকা। একই পাসপোর্টের পাঁচ বছর মেয়াদী সাধারণ ফি ৪ হাজার ২৫ টাকা, জরুরি ফি ৬ হাজার ৩২৫ টাকা ও অতি জরুরি ফি ৮ হাজার ৬২৫ টাকা।
এছাড়া, ৬৪ পাতার ই-পাসপোর্টের দশ বছর মেয়াদী ফি সাধারণ(২১ দিন)৮ হাজার ৫০ টাকা, জরুরি ফি (১০ দিন) ১০ হাজার ৩৫০ টাকা ও অতি জরুরি ফি (২ দিন) ১৩ হাজার ৮শত টাকা। একই পাসপোর্টের পাঁচ বছর মেয়াদী ফি সাধারণ ৬ হাজার ৩২৫ টাকা, জরুরি ফি ৮ হাজার ৬২৫ টাকা ও অতি জরুরি ফি ১২ হাজার ৭৫ টাকা। একইসাথে চালু রয়েছে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি)কার্যক্রম। এই পাসপোর্ট আবেদনের সাধারণ ফি(২১ দিন) ৩ হাজার ৪৪৫ টাকা।
এদিকে, ই-পাসপোর্টের আবেদন ও জমা সবকিছুই অনলাইনে করতে হবে। প্রথমেই অনলাইনে প্রবেশ করে নির্দিষ্ট ফরমে আবেদন পূরণ করতে হবে। এরপর চাইলে আবেদনের সাথেই অনলাইনে নির্দিষ্ট ফি জমা দেয়া যাবে। এসময় অনলাইনেই আবেদনকারীকে অফিসে ফরম জমা দেয়ার তারিখ ও সময় জানিয়ে দেয়া হবে। এরপর আবেদনকারী নির্দিষ্ট তারিখে যশোর পাসপোর্ট অফিসে ফরম জমা দিতে পারবেন। এর বাইরে অন্য দিনে গেলে তিনি আবেদন জমা দিতে পারবেন না। অনলাইন ছাড়াও পাসপোর্ট আবেদনের ফি সোনালী ব্যাংক, যশোর কর্পোরেট শাখাসহ নির্দিষ্ট কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকে জমা দেওয়া যায়।
এসব ব্যাপারে যশোর পাসপোর্ট অফিসে সদ্য আসা সহকারী পরিচালক মোবারক হোসেনের সাথে কয়েকবার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তারস্থলে মোবাইল রিসিভ করেন অফিসের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর। তিনি বলেছেন, স্যার রুমের বাইরে আছেন। আর পাসপোর্ট সংক্রান্ত সব তথ্য ওয়েবসাইটে রয়েছে। ওখান থেকে দেখে নিন, সব তথ্য পেয়ে যাবেন। এর ২ ঘন্টা পর দুপুর ২টা ৫১ মিনিটে ফের ফোন করা হলে অপরপ্রান্ত থেকে একই কথা বলা হয়েছে।।