রফিকুল ইসলাম জসিম: মৌলভীবাজারের ঐতিহ্যমন্ডিত প্রাচীনতম ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র মৌলভীবাজার টাউন কামিল মাদরাসা প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সত্য, ন্যায় ও ইসলামী শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। গতকাল ১০ ফেব্রুয়ারী (সোমবার) মাদ্রাসার কামিল (১৯৯৮- ২০২২) সেশনে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ সম্মাননা পাগড়ি ও আবা প্রদান করেছেন৷ উক্ত অনুষ্ঠানে দেশের একমাত্র ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী মুসলিম মণিপুরী পাঙান সম্প্রদায়ের আট জন মুহাদ্দিস-মাওলানাকে সুনামের সাথে পাগড়ি ও আবা পড়ে সম্মাননা পেয়েছেন৷
ইসলামি আরবী বিশ্ববিদ্যালয় এর অধীনে মৌলভীবাজার টাউন কামিল মাদরাসা হাদিস বিভাগ থেকে কামিল হাদিস বিভাগ পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যারা পাগড়ি পেয়েছেন মুসলিম মণিপুরী সম্প্রদায়ের মধ্যেই তারা হলেন, আলহাজ্ব ক্বারী মাওলানা মোঃ গোলাম রব্বানী, হাফেজ মাওলানা সাদেক রহমান, ক্বারী মাওলানা আব্দুল বারী, হাফেজ মাওলানা যোবায়ের আহমদ, হাফেজ মাওলানা জামাল উদ্দিন, হাফেজ মাওলানা কাউকাব উদ্দিন, হাফেজ মাওলানা আব্দুল মতিন ও আলেমা মোছা: সালেহা বেগম।
উক্ত সম্মাননা অনুষ্ঠানে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ও সিনিয়র শিক্ষকগণ শিক্ষার্থীদের আলেম ও মুহাদ্দিস বলে সম্বোধন করে সবাইকে দ্বীনের খেদমতে আঞ্জাম দেয়ার নসিহত করেন। তারা সকলেই দেশ ও জাতির খেদমত করার অঙ্গীকারাবদ্ধ এবং সকলের দোয়া ও সহযোগিতা চেয়েছেন।
সম্মাননা পাওয়া আলহাজ্ব ক্বারী মাওলানা মোঃ গোলাম রব্বানী বলেন, একসাথে মুসলিম মণিপুরি
৮ মুহাদ্দিস-মাওলানা সম্মাননা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করায় আমরা অনেক খুশি হয়েছি। এত সুন্দর আয়োজন করে মাথায় পাগড়ি আর গায়ে আবা এবং হাতে স্মারক তুলে দেওয়ার দৃশ্য জীবনের প্রথম আনন্দ, যা কখনো ভোলার মত নয়। সামনের দিনগুলিতে এ সম্মান ও মর্যাদা অক্ষুণ্ন রেখে চলার চেষ্টা করব, ইনশাল্লাহ।
মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের এতদিনের প্রধান পেশা ছিল মাদ্রাসায় শিক্ষকতা, মসজিদে ইমামতি করা, বেশি হলে হাই স্কুল ও কলেজের ধর্মীয় শিক্ষক। তবে বর্তমানে মণিপুরি মুসলমানদের মধ্যে ৮ জন মাওলানা মধ্যে ২ জন কোরআনের হাফেজ হয়েও মাদ্রাসা থেকে পাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় ভূর্তি পরীক্ষায় চান্স পেয়ে সাফল্যের সাথে অনার্স এবং মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন।
তারা হলেন, হাফেজ মাওলানা কাউকাব উদ্দিন ও হাফেজ মাওলানা যোবায়ের আহমদ।
পাগাড়ি পাওয়া মধ্যেই মুসলিম মণিপুরী সম্প্রদায়ের প্রথম মহিলা মুহাদ্দিস আলেমা মোছা: সালেহা বেগম তার কথা, ‘‘সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি আমি মাদ্রাসায় পড়ার কারণে ইসলামি শিক্ষাও পেয়েছি৷ এটা আমার জীবন গঠনে সহায়তা করেছে৷ আমি তো মনে করি মাদ্রাসায় পড়ার কারণে আমি অনেক বেশি সহনশীল৷ ’প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য জ্ঞানার্জন করা ফরজ। সুতরাং ইসলাম নারী-পুরুষ নির্বেশেষে সবার জন্য শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেছে।
মুসলিম মণিপুরি (পাঙাল) সম্প্রদায় হচ্ছে বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীসমূহের মধ্যে একমাত্র ইসলাম ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায় যাদের অধিকাংশের বসবাস মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায়। এটি বাংলাদেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানসহ নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতিকে যুগ যুগ ধরে লালন করে আসছে।
বাংলাদেশের আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জন্য সর্বোচ্চ সরকারি পরীক্ষা কামিল(হাদিস বিভাগ) মাদ্রাসা পরীক্ষা ভালো ফলাফল অর্জন করায় তাদের পাগড়ি ও আবা পড়িয়ে মাওলানা, আলেম ও মুহাদ্দিস হিসেবে মুসলিম মণিপুরী সমাজে এখন তারা প্রশংসনীয়। বর্তমানে জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমাজের মাদ্রাসার কৃতি সন্তানদের পদচারণা উল্লেখযোগ্য হারে তাদের নানামুখী ভূমিকা দেশ ও জাতির মর্যাদা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।