রোকনুজ্জামান সবুজ জামালপুরঃ
একজন ইউপি চেয়ারম্যানের মাসিক সম্মানিত ভাতা ১০ হাজার টাকা। যা একজনের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর বেতনের চাইতেও কম। এই ভাতায় দ্রব্যমূলের উর্ধ্বগতির যুগে চেয়ারম্যানরা এতো বিলাসি জীবন যাপন করে কি করে? কি করেই বা বাড়ি গাড়ী ও সম্পদের মালিক হন? এমন প্রশ্ন ইউনিয়ন বাসীর।
সাম্প্রতিক কালে লক্ষ্য করা যায় যে, জনসেবা করতে আসা স্থানীয় সরকার পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরা মেয়াদান্তেই (বিশেষ করে ইউপি চেয়ারম্যান) বাড়ি গাড়ী ও ব্যবসা বাণিজ্যের মালিক বনে যায়। অথচ তারা অনেকেই আসেন শূন্য হাতে।
জামালপুর জেলার মেলান্দহ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ৩নং মাহমুদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ব্যাপারে তেমন অভিযোগ উঠেছে।
ইউনিয়নবাসীর পক্ষে, চারাইলদার গ্রামের সুরুজ প্রামাণিকের ছেলে, মনির হোসেন জুইস বলেন, জিন্নাহ যখন প্রথম চেয়ারম্যান হন তখন তার কিছুই ছিল না। বউয়ের পরিবার কল্পনা দপ্তরের ভিজিটরের চাকুরী আর পৈত্রিকসূত্রে পাওয়া ৪/৫ কাঠা জমি ছিল তার সম্পদ। সেই জিন্নাহ একাধারে ৩ বার চেয়ারম্যান হওয়ার পর আজ তিনি অসামঞ্জস্য সম্পদের মালিক। বৃদ্ধি পেয়েছে আবাদি জমি, কিনেছেন মাহমুদ বাজারের মতো জায়গায় জমি,ঢাকা ময়মনসিংহে ফ্ল্যাট বাড়ি, নান্দিনায় ফিলিং স্টেশন, চড়েন ৩০ লক্ষাধিক টাকার অধিক মূল্যের গাড়ীতে। যাপন করেন বিলাসবহুল জীবন।
ব্যয় বহুল জীবন যাপনের যুগে একজন সৎ চেয়ারম্যানের পক্ষে শুধু সম্মানি দিয়ে এমন দৃশ্যমান সম্পদের মালিক হওয়া কি সম্ভব?
মাহমুদপুর ইউপির সাবেক পরিষদসূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ১২ অগাস্ট দুর্নীতি,অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে মাহমুদপুর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর প্রতি অনাস্থা দিয়েছিলেন ওই ইউনিয়নের ৯জন সদস্য। অনাস্থা প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়, ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ মাহমুদপুর বাজারের পুরনো ইউপি ভবনের জায়গায় নির্মিত দোকানপাটের জামানত, ভাড়া, ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের হাট-বাজারের আদায়কৃত ট্যাক্স,এলজিএসপি প্রকল্পের টাকা,ইউপি সদস্যদের সম্মানী ভাতা,শ্রমিকদের ১০০ দিনের কর্মসূচির টাকা ও টিআর কাবিখার টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
পরে চেয়ারম্যান তার পদ ও মান বাঁচাতে মেম্বারদের মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে কিনে অনাস্থার প্রত্যাহার করান।
এব্যাপারে অনাস্থাকারীদের একজন,সাবেক ইউপি সদস্য আঃ হামেদ বলেন,টাকার বিনিময়ে নয়,আওয়ামী লীগের সাংগঠিক সম্পাদক ও মেলান্দহ মাদারগঞ্জের এমপি মির্জা আজমের চাপে এবং ভয়ে আমরা চেয়ারম্যানের সাথে আপোষ করতে বাধ্য হয়েছিলাম।
জিন্নাহর এক সময়ের রাজনৈতিক সহচর জনৈক যুব লীগ নেতা জানান,জিন্নাহ একজন বিচক্ষণ ও চৌকস রাজনীতিক। তার রয়েছে অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতা। কিন্তু,তিনি যখন তার ভাই টুলু মেম্বার ও ভূমিখেকো ডানোর মাধ্যমে জমি সিন্ডিকেট গঠন ও কালো টাকা উপার্যনের পথে হাঁটতে শুরু করেন তখন থেকে আমি তার সঙ্গ ছেড়ে দিয়েছি।
এব্যাপারে মাহমুদপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ তাকে ঘিরে জনমনে সৃষ্ট প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে বলেন,প্রশ্নকারি নিজেই একজন মন্দ লোক। তার অনেক অপকর্মের কথা জানেন মাহমুদপুরবাসী। তদুপরি,আমি কোনো অপব্যায়কারি নই। আমার মদ,জুয়া,নারী বা অন্যকোনো নেশা নেই। আমার বাবার সম্পত্তি,আমার দোকান ভাড়া ও স্ত্রীর বেতন ভাতা থেকে যা আয় করেছি তা দিয়েই আমি স্বচ্ছল জীবন যাপন করেছি। আমার গাড়ী ও ফিলিং স্টেশন ঋণের টাকায় করা। আমি যদি অন্য নেতাদের মতো অবৈধ উপায়ে কালো টাকা উপার্যন করতাম তাহলে আমিও তাদের মতো পালিয়ে যেতাম।
অতএব, আমার বিরুদ্ধে উত্থাপিত প্রশ্ন প্রতিহিংসার প্রতিফলন মাত্র।