রাফিউল ইসলাম (রাব্বি) রংপুর ব্যুরো:
রংপুরে মাইগ্রেশনসহ বিভিন্ন দাবিতে বুড়িরহাট-গঙ্গাচড়া সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন নর্দান প্রাইভেট মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করার সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের লোকজনের হামলায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কয়েকজন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে গুরুতর আহত অবস্থায় সিহাব নামে এক শিক্ষার্থীকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সোমবার (১ মার্চ) দুপুর ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধসহ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ।
এদিকে এই কর্মসূচি চলাকালে নর্দান প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের লোকজন শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্তিক হামলা চালায়। এতে সিহাব নামে এক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন। এছাড়াও প্রখর রোদের মধ্যে সড়কে বসে দীর্ঘ সময় বিক্ষোভ করায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন আরও আট শিক্ষার্থী।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, ২০১৩ সালের পর থেকেই কলেজটির বাংলাদেশ মেডিকেল ডেন্টাল কাউন্সিলের কোনো অনুমোদন নেই। এছাড়াও হাসপাতাল না থাকা এবং পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় তাদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনের কথা বিবেচনায় কোনো শর্ত ছাড়াই মূল কাগজপত্র প্রদানসহ অন্য মেডিকেল কলেজে স্থানান্তরের দাবি জানান তারা। গত ২৪ দিন ধরে মাইগ্রেশনসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন তারা। কর্তৃপক্ষের প্রতারণা ও উদাসীনতায় তাদের শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। দাবি আদায়ে প্রধানমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন শিক্ষার্থীরা।
২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সোহাইব মোহাম্মদ সোয়েব জানান, নর্দান প্রাইভেট মেডিকেল কলেজে শিক্ষক ও হাসপাতাল নেই। বাংলাদেশ মেডিকেল ডেন্টাল কাউন্সিল ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন না থাকা সত্ত্বেও এখানে তিন শতাধিক দেশি-বিদেশি শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দিয়ে কলেজ চালালেও এখন পর্যন্ত অনুমোদন আনতে পারেনি।
লোক দেখানো রোগী ও শিক্ষক দিয়ে ক্লাস করিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে শিক্ষাজীবন ধ্বংস করা হয়েছে দাবি করে শেষবর্ষের শিক্ষার্থী মোহাইমিন আহমেদ ইমন জানান, তাদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ সমস্যা নিরসনে অন্য মেডিকেল কলেজে মাইগ্রেশনের সুযোগ দেয়ার জন্য আন্দোলন করছেন তারা। তাদের সঙ্গে ভারত ও নেপালের ৫৫ শিক্ষার্থীও যোগ দিয়েছেন। এদের অনেকেই ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। যাদের এমবিবিএস শেষ হয়েছে এক বছর হলো, কিন্তু ইন্টার্ন করতে পারছেন না। ইন্টার্ন ছাড়া মেডিকেলের পড়ালেখা শেষ হবে না।
এর আগে বেলা ১১টার দিকে বিভিন্ন দাবি নিয়ে শিক্ষার্থীরা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. খলিলুর রহমানের কাছে গেলে তিনি কোনো কথা না বলে কলেজ ছেড়ে দ্রুত পালিয়ে যান। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অধ্যক্ষের অনুসারীদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
এদিকে সড়ক অবরোধের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল গিয়ে মহানগর পুলিশের কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন অভিযোগ শোনেন। পরে তাদেরকে সড়ক থেকে সরে যেতে অনুরোধ করাসহ হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তাদের অবস্থানে অনড় থাকেন।
এ ব্যাপারে নগরীর কোতোয়ালি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রশীদ জানান, নর্দান প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে মাইগ্রেশনসহ বেশ কিছু দাবিতে আন্দোলন করছেন। এদের মধ্যে ভারত ও নেপালসহ বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীও রয়েছেন। সোমবার তারা একই দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
ওসি আরও জানান, নর্দান প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে ২১ শিক্ষার্থীর মাইগ্রেশনের ব্যবস্থা করেছে। বাকিদের বিষয়টি নিয়ে আমরা কথা বলেছি। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া মেনে নিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
এদিকে বেলা আড়াইটার দিকে জনদুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পুলিশের অনুরোধে সড়ক ছেড়ে ক্যাম্পাসের ফটকে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে হাসপাতালের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে দাবি আদায়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা। এ সময় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে নর্দান প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশের উপস্থিতি দেখা গেছে।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালি জোন) আলতাফ হোসেন জানান, শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে সড়ক ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে। আমরা কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। এখন পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। আপাতত শিক্ষার্থীরা সড়ক ছেড়ে দিয়েছেন। যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।