মুহাম্মদ ফারুক আজম :
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু হয় কক্সবাজারের মহেশখালির মাতারবাড়ি সংযোগ সড়কের সংস্কার কাজ। এরপর প্রত্যাশী সংস্থা এলজিইডির গাফেলতি ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ধীর গতির কারনে কেটে গেছে দুই বছর। কিন্তু তবুও শেষ হয়নি উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের চালিয়াতলী চিতাখোলা রাস্তার মাথা হতে মাতারবাড়ি ইউনিয়নের রাজঘাট ব্রীজ পর্যন্ত প্রায় ৫ কি.মি. সড়কের সংস্কার কাজ নাগাদ। কবে নাগাদ শেষ হবে তার নিশ্চয়তা দিতে পারছেনা সংশ্লিষ্ঠরা।
জেলা প্রশাসন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ও স্থানীয়দের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ৫ কি.মি. দীর্ঘ মাতারবাড়ি সংযোগ সড়কে সংস্কারের কাজ শুরু হয়। ৬ টি ব্রীজ, সড়কের দুপাশে গাইড ওয়াল নির্মাণ, মাটি ভরাট সহ রাস্তা সংস্কার কাজে ব্যয়ভার ধরা হয়েছে ৪৫ কোটি টাকা। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তত্বাবধায়নে কাজটি দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাস্তবায়ন করছে। এরমধ্যে একটি কক্সবাজারের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আসাদ এন্টারপ্রাইজ ও অপরটি চট্টগ্রামের রাউজানের নূর এন্টারপ্রাইজ।
সরেজমিনে পরির্দশনে গিয়ে দেখা যায়, মাতারবাড়ির সংযোগ সড়কে মাটি ভরাটের জন্য রাস্তার সাথে লাগানো ঘোনা থেকেই ভেকু দিয়ে মাটি তুলে স্তুপ করছেন শ্রমিকরা। পাশাপাশি চলছে গাইড ওয়াল নির্মানের কাজ। তবে কাজ চলছে খুবই ধীরগতিতে।
এবিষয়ে কালারমারছড়া ইউনিয়নের উত্তর নলবিলা গ্রামের চালিয়াতলীর বাসিন্দা সিএনজি চালক শওকত আলম (২৭) বলেন, চালিয়াতলী টু রাজঘাট সড়কে আমি সিএনজি চালাই। এই সড়কে এখন এত বেশি খানাখন্দক যে ঝুকিঁ নিয়েই চলাচল করি।
তিনি আরো বলেন, সড়কটি ভরাটের জন্য রাস্তার পাশ থেকে ভেকু দিয়ে মাটি নিচ্ছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ফলে বর্ষা মৌসুমের জোয়ারের কারণে সড়কের গাইড ওয়াল ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১১ই নভেম্বর মাতারবাড়িতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনসভা উপলক্ষ্যে তড়িঘড়ি করে সংস্কার করা হয়েছিল সড়কটি। কিন্তু সংস্কারের মাস না যেতেই সড়কে তৈরি হয়েছে অসংখ্য খানা খন্দক ও গর্ত।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, টেন্ডার হওয়ার দীর্ঘদিন পরে এই সড়কের নির্মান কাজ শুরু হয়। এরপরেও খুবই ধীর গতিতে অদৃশ্য ক্ষমতায় কাজ করছেন ঠিকাদাররা। বেশ কয়েকবার তাগাদা দেওয়া সত্বেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কিংবা এলজিইডির টনক নড়েনি।
এবিষয়ে মাতারবাড়ির ইউপি চেয়ারম্যান আবু হায়দার বলেন,মাতারবাড়ি একমাত্র সংযোগ সড়কের সংস্কারের কাজ খুবই ধীরগতিতে চলছে। সড়কের অনেকাংশে খানাখন্দক ও গর্ত তৈরি হয়ছে। ফলে ঝুঁিক নিয়েই চলাচল করতে হচ্ছে দ্বীপবাসীকে। বিষয়টি আমি চলতি সপ্তাহেও সংশ্লিষ্ঠদের অবহিত করেছি।
এবিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘আসাদ এন্টারপ্রাইজ’ এর পরিচালক মো. আসাদ উল্লাহ বলেন, দুটি কারণে এই সড়ক সংস্কারে এত সময় লাগছে। এই সড়ক দেশের অন্যান্য সড়কের মত নয়। এখানে নিয়মিত জোয়ারের পানি আসে। তাই জোয়ার ভাটা দেখেই কাজ করতে হয়। এছাড়া এই সড়কে সংস্কারে কিছু জমি ব্যক্তি মালিকাধীন রয়েছে। ওইসব জমি অধিগ্রহন করার কথা থাকলেও এখনো এলজিইডি তা করেনি। তাই জনরোষ থেকে বাঁচতে কাজ বন্ধ রাখতে হয়।
তিনি আরো বলেন, জমি অধিগ্রহনের বিষয়টি আমি কয়েক দফা প্রত্যাশী সংস্থা ও জেলা প্রশাসনকে অবহিত করেছি। এমনকি তাদেরকে জানিয়েছি তাঁরা যদি আমাকে চলতি বছরের মধ্যে রাস্তার জন্য জমি বুঝিয়ে দিতে না পারেন তবে আমি কাজটি ছেড়ে দিব।
এবিষয়ে মহেশখালি উপজেলা প্রকৌশলী সবুজ কুমার দে বলেন, সড়ক সংস্কারের মাটি রাস্তার পাশ থেকে তোলার বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
তিনি আরো বলেন, সড়ক সংস্কারের কাজটি দ্বিতীয় দফার মেয়াদে চলছে। যার মেয়াদ ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত রয়েছে। ইতিমধ্যেই সংস্কারের ৬০% কাজ শেষ করা হয়েছে। বাকি কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য ঠিকাদার কে বার-বার তাগিদ দেওয়া হচ্ছে।
জমি অধিগ্রহনের বিষয়ে তিনি বলেন, জমির কারণে কাজ বন্ধ রাখার সুযোগ নেই। অধিগ্রহন তো হবে প্রথমদিকের ১ কিলোমিটারের জন্য। তবুও বিষয়টি আমি উর্ধত্বণ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।
এবিষয়ে কক্সবাজারের এলজিইডি’র নির্বাহি প্রকৌশলী মো. মামুন খান বলেন, সড়কের দুই পাশ দিয়ে জোয়ারের পানি আসে। তাই নির্মান কাজে সময় লাগছে। তবে গাইড ওয়াল নির্মাণ কাজ শেষ । এখন যেই কাজ আছে আশা করছি চলতি শুস্ক মৌসুমেই শেষ করা সম্ভব হবে।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ ছেড়ে দেওয়ার হুশায়ারি দিয়েছেন স্বীকার করে তিনি আরো বলেন, জমি অধিগ্রহনের বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এখনো ৪ ধারার নোটিশ ইস্যু করা হয়নি। তবে আমরা বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে অবহিত করেছি। প্রশাসন আমাদের কাছে কিছু বিষয় জানতে চেয়েছিল। যা আমরা লিখিতভাবে গেল সোমবার জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছেন। আশা করছি খুব দ্রুতই জমি অধিগ্রহন করা সম্ভব হবে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, জমি অধিগ্রহনের বিষয়টি কোন পর্যায়ে রয়েছে আমার জানা নেই। প্রত্যাশী সংস্থা বিষয়টি সরাসরি আমাকে জানালেও তো এতদিনে জমির সমস্যা সমাধান হয়ে যেতো। তবুও বিষয়টি আমি খোঁজ খবর নিয়ে জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহন করব।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০