ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে ভাঁঙন দেখা দিয়েছে মহেশখালীর মাতারবাড়ী-ধলঘাটা বেড়িবাঁধ। ভাঁঙনে প্রায় অর্ধ হাজার ঘরবাড়ি-দোকানপাট বিলিন হয়ে গেছে। প্লাবিত হয়েছে গ্রামের পর গ্রামের। পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙা অংশে মাটির বস্তা ফেলে ভাঁঙন রোধের চেষ্টা করলেও তা কাজে আসছে না। তবে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো) দায়ী করছেন এলাকাবাসী।
বুধবার সরজমিনে দেখা যায়, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পূর্ণিমার কারণে সমুদ্রের পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে ৫-৬ ফুট বেড়ে যাওয়ার কারণে মাতারবাড়ী-ধলঘাটার বেড়িবাঁধের ভাঁঙা অংশ দিয়ে ও জিওব্যাগের উপর দিয়ে লোকালয়ে মানুষ প্রবেশ করে। ধ্বস নেমে পড়ছে বেড়িবাঁধে। এতে অনেকের ঘরবাড়ি তলিয়ে যায়। সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েন অনেক মানুষ।
এই দিকে মহেশখালীর গোরকঘাটা, ঘটিভাঙ্গা, সোনাদিয়া গ্রামে পানি প্রবেশ করাই সবমিলিয়ে পানি বন্দী হাজারো পরিবার এবং আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন মহেশখালীর লক্ষাধিক মানুষের দু’লক্ষ চোখ। রাতের জোয়ারে কোথাব যাবে জানে না তারা। গত মঙ্গলবার তীব্র বাতাসে গাছ পড়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে মাতারবাড়ীতে।
ভাঙন কবলিত এলাকার ছবি তুলতে গেলে ক্ষোভ প্রকাশ করে মাতারবাড়ীর নয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দারা বলেন,ছবি তুলে কি লাভ,ভাঙন ঠেকালে আমরা আশ্রয় নিতে পারতাম। আমাদের সর্বস্ব শেষ হয়ে গেছে। আমাদের বাঁচান।
স্থানীয়রা জানান, বেড়িবাঁধের এই ভাঙন অব্যাহত থাকলে মাতারবাড়ী-ধলঘাটা ইউনিয়ন কক্সবাজারের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে। দায় এড়াতে ভাঙন রোধে পাউবো চেষ্টা চালিয়ে গেলেও কোন মতেই ভাঙন বন্ধ হচ্ছে না। ভাঙনের এঅবস্থা দেখে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন মানুষ।
ক্ষতিগ্রস্ত খতিজা বেগম বলেন, ঘরের ভিতরে পানি ডুকে পড়ছে। কোন কিছু বাহির করতে পারি নাই।
ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হওয়া জমিলা জানান, জোয়ারের পানিতে ২ টি ঘর তলিয়ে গেছে। শরীরের কাপড় ছাড়া কিছু নাই। রাত্রিবেলা কোথায় থাকব এটা জানি না।
মাতারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাষ্টার মোহাম্মদ উল্লাহ জানান, অনেক ঘরবাড়িতে পানি ডুকে পড়ছে। মাতারবাড়ীতে ২০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন দরিদ্র মানুষ।
মহেশখালী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান জানান, বেড়িবাঁধের তীরবর্তী মানুষ গুলোকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের মাঝে সরকারি সহযোগিতা পৌঁছে দিয়েছি। আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষ যতদিন থাকবেন তাদের জন্য প্রতিদিনের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
এইদিকে মাতারবাড়ী বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ পরিদর্শন করতে আসছেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মামুনুর রশিদসহ মহেশখালী উপজেলা প্রশাসন, মহেশখালী-কুতুবদিয়ার সার্কেল এএসপি জাহিদুল ইসলাম, মহেশখালী থানার ওসি আবদুল হাই, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ।
ক্ষতিগ্রস্থদের কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয় বলে জানা যায়।