মো:জাবেদুল আনোয়ার
স্টাফ রিপোর্টার কক্সবাজার।
স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর ফ্যাসিবাদ ব্যবস্থার বিলোপ এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ও নতুন বাংলাদেশ বিনির্মানে প্রয়োজনীয় যৌক্তিক সংস্কার উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরন ও দ্রুত বিচার, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন সহ ৭দফা দাবী নিয়ে ২৯ ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় মুক্তিযুদ্ধা কমপ্লেক্সে এ সাংবাদ সম্মেলন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রামু উপজেলা।
সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আহসানুল জুবাইর,মইনুর রশিদ,যায়েদ বিন,সাইফুল ইসলাম,সাজ্জাদ হোসেন,মো এমদাদ,হাসান মারওয়ান,মো মনির,নজরুল ইসলাম
সহ রামু উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন প্রতিনিধিবৃন্দ।
আসসালামু আলাইকুম
জাতির বিবেক সম্মানিত সাংবাদিক বন্ধুদের বিজয়ের মাসে বিপ্লবী শুভেচ্ছা।
শুরুতেই শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি ও মাগফিরাত কামনা করছি জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের। স্মরণ করছি, অন্তত ২০ হাজার আহত ছাত্র-জনতার ত্যাগের প্রতি।
আমরা অত্যন্ত দুঃখ, ক্ষোভ এবং আশাহত হয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি।
২৪ এর গণ-অভ্যুত্থানে “স্বৈরাচার সরকারের পতন, ফ্যাসিবাদ ব্যবস্থার বিলোপ এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত”র স্বপ্ন নিয়ে সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা রাজপথে নেমে এসেছিলো। অন্তত দুই হাজার শহীদ ও অন্তত বিশ হাজার আহতদের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদমুক্ত দ্বিতীয় স্বাধীন বাংলাদেশ।
ছাত্র-জনতার অনুরোধের প্রেক্ষিতে বিশ্ব সমাদৃত, নোবেল জয়ী শ্রদ্ধেয় ড. মোহাম্মদ ইউনুস প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন।
প্রধান উপদেষ্টা তাঁর নেতৃত্ব, চিন্তা-চেতনার অনন্য গুণে ইতোমধ্যে বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনতার মাঝে আস্থার জায়গা তৈরী করেছেন। কিন্তু, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে দায়িত্ব প্রাপ্ত ৩ জন ছাত্র প্রতিনিধি উপদেষ্টা সহ কয়েকজন উপদেষ্টার কার্যক্রম, কর্মতৎপরতা এবং গত সাড়ে চার মাসের অর্জন নিয়ে সন্তুষ্ট হওয়া যায়। অপরদিকে, বাকী অধিকাংশ উপদেষ্টা ২৪ এর গণ-অভ্যুত্থানের স্পিরিট ধারণ করে কিনা যথেষ্ট সন্দেহ তৈরী হয়েছে জনমনে। তার সাথে সাথে তাঁদের কর্মতৎপরতা, অতি মাত্রার সুশীলতা কিংবা কার্যক্রম হতাশাজনক।
যার ফলশ্রুতিতে, আন্দোলনের দ্বিতীয় ধাপে এসে শুরু হয় দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র, আওয়ামী সন্ত্রাসীদের প্রকাশ্য হুমকি ও চিহ্নিত অপরাধীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানো, আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করা ছাত্র-জনতার উপর চোরাগোপ্তা হামলা, কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নির্বাচনের চাপ, প্রশাসনে আমলাদের অসহযোগিতা, আাইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নির্লিপ্ততা বা নিষ্ক্রিয়তা। মোটাদাগে বলা যায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সাড়ে চার মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো রাষ্ট্রের সর্বস্তরে ফ্যাসিবাদ বা ফ্যাসিবাদের দোসররা বসে আছে যার ফলে রাষ্ট্রের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে আছে কিনা তা উদ্বেগ তৈরী করেছে।
স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিল শুধুই নির্বাচনের লক্ষ্যে নই। ফ্যাসিবাদ ব্যবস্থামুক্ত একটি নতুন বাংলাদেশ বিনির্মানের স্বপ্নেই রাজপথে নিজেদের উৎসর্গ করেছিলো, যাতে আর কোন স্বৈরাচার এদেশে আর মাথাচাড়া না দেয়।
সুতরাং, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মানে যৌক্তিক ও প্রয়োজনীয় সংস্কারের কোন বিকল্প নাই। এ সংস্কার কাজ সম্পন্ন না করা পর্যন্ত বাংলাদেশে কোন জাতীয় নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।
প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম, গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের বিচার, নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংসের সাথে জড়িতদের বিচার, দেশের বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার সহ সকল বিচারের ক্ষেত্রে ধীরগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে।
আমরা, রামু উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মনে করছি যে, কল্পিত সংস্কার কার্যক্রম ও নতুন বাংলাদেশ বিনির্মান নিশ্চিতে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন অতীব জরুরী। উপদেষ্টা নিয়োগ প্রক্রিয়া হতে হবে স্বচ্ছ, প্রকাশ্য এবং ছাত্রদের পরামর্শে, যিনি ২৪ এর গণ-অভ্যুত্থানের স্পিরিটকে ধারণ করেন।
উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরন ও দ্রুত বিচার, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন সহ ৭ দফা দাবী নিয়ে রাজপথে আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, রামু উপজেলা।
৭ দফা দাবীঃ
১। মোস্তফা সরওয়ার ফারুকীর পদত্যাগ, স্বরাষ্ট্র ও আইন উপদেষ্টাদের দপ্তর বদল। যাঁরা ব্যর্থ তাঁদের সরিয়ে ছাত্রদের পরামর্শে নতুন উপদেষ্টা নিয়োগ করে বিপ্লবীদের দিয়ে সরকার পুনর্গঠন।
২। জুলাই অভ্যুত্থানের গণহত্যাকারী, সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আওয়ামিলীগ সহ সকল অঙ্গ-সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা এবং অপরাধীদের দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করা।
৩। ২০১৪ বিনা ভোটের নির্বাচন , ২০১৮ সালের রাতের ভোটের নির্বাচন ও ২০২৪ সালের ডেমো নির্বাচনের সাথে জড়িত ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে নির্বাচন কমিশনসহ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মহলে জড়িত সকলকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
৪। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার আইন সংস্কার করে দ্রুত অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের ইতিহাসে সুষ্ঠু নির্বাচনের নজির স্থাপন করা।
৫। রাষ্ট্রের সর্বস্তরে এখনো বহাল তবিয়তে থাকা ফ্যাসিবাদের দোসর আমলাদের দ্রুত চিহ্নিত করে অপসারণ করতে হবে।
৬। ২০১২ সালে রামুতে, ২০১৬ সালে নাসির নগরে সহিংসতাসহ বিগত সরকারের সময়ে সংঘটিত সকল ঘটনার পুনঃতদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা।
৭। সীমান্তে গরু ও মাদকসহ সকল ধরণের চোরাকারবার বন্ধ ও সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা।
সরকারের প্রতি আমাদের জোর দাবী, আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে দাবী মেনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা। সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার প্রতি আহ্বান দেশের প্রয়োজনীয় সংস্কার আদায়ে ৫ আগস্টের আগের ন্যায় রাজপথে থাকা।
ইনকিলাব জিন্দাবাদ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
রামু উপজেলা, কক্সবাজার