নিউমার্কেটে সংঘর্ষে নিহত নাহিদ
নিউজ ডেস্ক :
‘কীভাবে সবকিছু ওলটপালট হয়ে গেল। দুঃস্বপ্নের মতো লাগছে। এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না আমার ছেলে নেই। আমরা নিরীহ মানুষ। কারও সঙ্গে ঝামেলার মধ্যে নেই। কে মারল, কেন মারল আমার ছেলেকে। ওর তো কোনো অপরাধ নেই। কারও কাছে বিচার চাই না। বিচার চেয়ে কী হবে। কার কাছে বিচার চাইব। মামলাও করতে চাই না। এটাই তো কপালে লেখা ছিল।’
কথাগুলো বলছিলেন গত মঙ্গলবার রাজধানীর নিউমার্কেটে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও দোকান কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে নিহত নাহিদ হাসানের (২০) বাবা নাদিম হোসেন।
গতকাল বুধবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নাহিদের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। তার লাশ দাফন করা হয় আজিমপুর কবরস্থানে। জানা যায়, মাস ছয়েক আগে যুবক নাদিম বিয়ে করেন। পরিবার নিয়ে তিনি কামরাঙ্গীরচরে বসবাস করতেন। এলিফ্যান্ট রোডের মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের একটি কম্পিউটার সরঞ্জামের দোকানে ডেলিভারিম্যানের কাজ করতেন নাহিদ।
মঙ্গলবার সকালে কামরাঙ্গীরচরের রনি মার্কেট সংলগ্ন এলাকার বাসা থেকে বের হয়ে নিউমার্কেট হয়ে মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু নুরজাহান মার্কেটের সামনে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুরুতর আহত হন নাহিদ। এরপর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
নাহিদের বাবা বলেন, সংসারে অভাব-অনটনের কারণে কিশোর বয়স থেকেই পরিবারের হাল ধরার চেষ্টা করে ছেলে। বেশিদূর লেখাপড়া করা হয়নি। প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়েছে। এক সময় কাপড়ের দোকানে বিক্রয়কর্মী হিসেবেও কাজ করত। ধীরে ধীরে সংসারের অভাবের বোঝাটা হালকা করার দায়িত্ব নিচ্ছিল। এর মধ্যে এত বড় অঘটন।
ছেলের বউটাকে কীভাবে সামলাব। তাকে কী জবাব দেব। কাজে যাওয়ার পথে এমন মৃত্যু! শুনেছি অনেকে মিলে ওকে বেদম পিটিয়েছে। ও তো কোনো পক্ষের লোক না। নিউমার্কেটের হকারও না, কলেজের ছাত্রও না। এসব বলতে বলতে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন তিনি।
হাসপাতাল ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার রক্তাক্ত অবস্থায় নুরজাহান মার্কেটের সামনে পড়ে থাকতে দেখে পথচারীরা নাহিদকে উদ্ধার করে মেডিকেলে নেয়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে। তার মাথায় চারটি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। শরীরের বিভিন্ন অংশে ফোলা ও জখম ছিল।