রাকিবুল আওয়াল পাপুল, শেরপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
শেরপুরে এবারের বন্যায় ৫ উপজেলার মাছ চাষীদের মাথায় হাত। মাছের ছোট/ বড় বিভিন্ন ঘের থেকে ভেসে গেছে ৭১ কোটি টাকার মাছ। ৭১ কোটি টাকার মাছের ক্ষতির কথা জানিয়েছে জেলা মৎস্য বিভাগ। এদিকে চাষিরা বলছেন, ঠিক সময়ে বন্যার পূর্বাভাস পেলে ক্ষতি কমানো যেতো।
টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরে সৃষ্ট বন্যার সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। গতকাল দুপুরের পর থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় এ উন্নতি হয়েছে। জেলার চারটি পাহাড়ি নদীর পানি আরও কমেছে। এসব নদীর পানি এখন বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে শেরপুরের ৫ উপজেলায় পানিবন্দীর সংখ্যা কমে দাড়িয়েছে ৫০ হাজারে।
তবে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ব্রহ্মপুত্র, দশানী ও মৃগী নদীতে। পানি বৃদ্ধি পেলেও এসব নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। এদিকে গত চারদিনে বন্যার পানিতে নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও নকলা উপজেলায় মোট ১১ জন মারা গেছেন।
ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে হঠাৎ বন্যায় বিপর্যস্ত শেরপুর। তলিয়ে গেছে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ও ফসলি জমি। তবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য খাত।
মাছচাষী মমিন মিয়া বলেন, বন্যার পূর্বাভাস না থাকায় কোনো প্রস্তুতি নিতে পারি নাই। এজন্যই ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে। আমাদের প্রজেক্টের মাছ বাইরে চলে গেছে আর এদিকে বিভিন্ন জায়গা থেকে মেরে বিক্রি করতাছে। আর মানুষ কমদামে পেয়ে আনন্দ করে কিনতাছে। কিন্তু আমরা তো বুঝতাছি কেমন ক্ষতি হইছে আমাদের।
মাছচাষী রুস্তম মিয়া বলেন, ‘বহু মাছ চলে গেছে। দুই-আড়াই ঘণ্টার মধ্যে সব তলিয়ে গেছে। যত প্রজেক্ট আছে এখানে সব মাছ ভেসে চলে গেছে।’
মাছ চাষি আনোয়ার বলেন, আগে যদি আমরা জানতাম বা কেউ যদি জানাতো তাহলে আমাদের এতো ক্ষতি হতো না। আগে জানলে তো আর এই অবস্থায় থাকতো না। সব জাল দিয়ে ঘিরে রাখতাম। আমার ৫ লাখ টাকার মাছ ছিলো। সব শেষ।
জেলা মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে, এবছর শেরপুরে ৩৩ হাজার ১৭৯টি পুকুরে মাছ চাষ করছেন ১৮ হাজার ১৩৫ জন চাষী। আর প্রতি বছর এ জেলায় উৎপাদন হয় গড়ে ৩৫ হাজার ২৪০ মেট্রিক টন মাছ। বন্যায় ভেসে গেছে ৭ হাজার ৩০০ পুকুরের ৭১ কোটি টাকার মাছ। এবারই স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে এই অঞ্চলের মৎস্য চাষীরা। ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে মৎস্য বিভাগ।
শেরপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রণব কুমার কর্মকার বলেন, ‘ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নিরূপণ করে আমরা এরই মধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি। তারা এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তারা যদি সরকারি ব্যাংকগুলো থেকে আমাদের কোনো সহযোগিতা দেয় তাহলে মৎস্য অধিদপ্তর সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০