মো. আব্দুল করিম, ফেনী প্রতিনিধিঃ
ফেনীর সোনাগাজীর আলোচিত মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও পিবিআই প্রধান বনজ কুমারের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে আসামিদের স্বজন ও এলাকাবাসী।
(০৮ অক্টোবর) শনিবার দুপুরে পৌর শহরের জিরো পয়েন্টে অনুষ্ঠিত এ কর্মসূচিতে নুসরাত হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৬ আসামির পরিবার পরিজন ও স্বজনসহ আওয়ামী লীগের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী এতে অংশগ্রহণ করেন।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা মিডিয়া ট্রায়াল, ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব ও আত্মহত্যা করবে বলে আসামি আবসার উদ্দিনকে পাঠানো নুসরাতের সেই এসএমএস গায়েব করে আত্মহত্যার ঘটনাকে হত্যায় রূপ দেওয়ার জন্য পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদারদাকে দায়ী করেন।
তাদের দাবি, ঢাকায় বসে কোটি টাকার বিনিময়ে বনজ কুমার আসামিরা জবানবন্দি দেওয়ার আগেই তারা দোষ স্বীকার করেছে বলে গণমাধ্যমে তথ্য প্রকাশ করে। তার সরাসরি নির্দেশনায় ফেনীর পিবিআই কর্মকর্তারা অভিযুক্তদের রিমান্ডে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে, ড্রিল মেশিন দিয়ে পা ছিদ্র করে ও নারী আসামিদের বিবস্ত্র করে যৌন হয়রানির মাধ্যমে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করেন। রিমান্ডে আসামিদের নির্যাতন করে তাদের পরিবার থেকে লাখ লাখ টাকা আদায়ের জন্য বনজ কুমার মজুমদারকে সরাসরি অভিযুক্ত করেন। মামলাটি পুনঃতদন্তের ব্যবস্থা করে ন্যায় বিচার করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহ্বান জানান তারা।
ভুক্তোভোগী পরিবারের দাবি, রায়ের আগে ও পরে সোনাগাজীতে মানববন্ধন করতে চাইলে প্রশাসন ও পিবিআইয়ের বাধায় তা করা সম্ভব হয়নি। তারা কাফনের কাপড় পড়ে মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন।
মামলাটি সাজানো ও আসামিদের নির্দোষ দাবি করে তারা বলেন, দীর্ঘ প্রায় ৪ বছর যাবত তাদের বুক ফাটা আর্তনাদ কেউ শোনেনি, তাই তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ন্যায়বিচার দাবি করেন । মামলাটি পুনরায় তদন্তের মাধ্যমে নির্দোষ ব্যক্তিদের মুক্তি দাবি করেন।
মৃত্যদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক পৌর কাউন্সিলর মকসুদ আলমের ছেলে বলেন, পিবিআই কর্মকর্তা শাহআলম রিমান্ডে আমার বাবাকে বর্বর নির্যাতন করে বনজ কুমারের কথা বলে ৫০ লাখ টাকা দাবি করেন। নির্যাতন থেকে বাঁচাতে বাধ্য হয়ে ৪০ লাখ টাকা দিতে হয়েছে। টাকা আদায়ের যাবতীয় প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আবসার উদ্দিনের স্ত্রী সুরাইয়া হোসেন বলেন, অগ্নিদগ্ধ হওয়ার তিনদিন আগে নুসরাত আত্মহত্যার চেষ্টা করে যাহা এলাকার সবাই জানে। ঘটনার আগের দিন সে আমার স্বামীর কাছে অধ্যক্ষ সিরাজের জামিন ঠেকাতে প্রয়োজনে আত্মহত্যা করবে বলে এসএসএম দেয়। আমার স্বামী পিবিআইকে সেই এসএমএম দেখালে তারা সেগুলো গায়েব করে আমার স্বামীকে ফাঁসিয়ে দেয়।
মানববন্ধনে আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত থেকে মুহুর্মুহু শ্লোগান দিয়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সবার মুক্তি দাবী করেন। পরে মানববন্ধনে অংশগ্রহনকারীরা ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড বহন করে মৃত্যদন্ডপ্রাপ্তদের দ্রুত মুক্তি ও বনজ কুমারের বিচার এবং শাস্তি চেয়ে শ্লোগান দিয়ে পুরো পৌর এলাকা প্রদক্ষিন করে কর্মসূচি সমাপ্ত করা হয়। এ ছাড়াও এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ এবং প্রতিবাদ জানান সাধারন জনগন সহ সমস্ত এলাকাবাসী।