এজি লাভলু, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
উত্তরবঙ্গের সীমান্তঘেঁষা কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ফুলসাগর লেকটি। উপজেলা সদর থেকে উত্তরে মাত্র ৭০০ মিটার দূরে প্রায় ৩৭ একর আয়তন নিয়ে এটি অবস্থিত। লেকের পাশে বসে ভোরের আকাশে সূর্যের উদিত হওয়া কিংবা সন্ধ্যার গোধূলি বেলায় সূর্যাস্তের দৃশ্য যে কাউকে মুগ্ধ করবে।
ফুলসাগর লেকের ব্যাপারে এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, এক সময় ফুলসাগর লেকটিকে সবাই ফুলবাড়ীর ছড়া নামে চিনত। ভারতের কোচবিহার জেলার দিনহাটা থানার কুর্শাহাটের দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে উপজেলার গোরকমন্ডল সীমান্ত দিয়ে বারোমাসিয়া নাম নিয়ে একটি নদী সরাসরি ধরলা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। সেই বারোমাসিয়া নদীর একটি স্রোত প্রবাহিত নালা নীলকুমর নাম ধারণ করে উপজেলার সীমান্তবর্তী নন্দিরকুটি গ্রামের কোলঘেঁষে ছাইতন তলা হয়ে সরাসরি উপজেলা সদরের পাশে এসে ফুলবাড়ীর ছড়ার ওপর দিয়ে বয়ে গিয়ে নীলকমল নদী হয়ে ধরলা নদীতে মিলিত হয়। ভারতে নদীটি ক্ষরসে স্রোত হওয়ায় ফুলবাড়ীর ছড়াটি গভীরতা বৃদ্ধি পায়। পরবর্তীতে ১৯৭৭ সালে তৎকালীন সরকার ও স্থানীয় সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম সামছুল হক সরকার, কালিনাথ সরকার, মোক্তার মেম্বার, কোটন মেম্বার, আবুল মেম্বার, খগেন্দ্র নাথ মেম্বারসহ এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ফুলবাড়ীর ছড়াটি খনন করা হয়। পরে এটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ফুলসাগর। সেই থেকে সরকারিভাবে এর নাম ব্যবহার হচ্ছে ফুলসাগর লেক।
এলাকাবাসীরা জানান, লেকটির কাঁচা ভাঙা-চোরা পাড় সংস্কার করে একটু প্রশস্ত করে পাকা করতে পারলে একদিকে যেমন মানুষ চলাচলের পাশাপাশি মোটরবাইক, মাইক্রোবাস, অটোরিকশা যাওয়ার উপযোগী হবে। অপরদিকে সুন্দর ও সুসজ্জিত হয়ে উঠবে। এভাবে ধীরে ধীরে ফুলসাগরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের দূর-দূরান্তের জেলা-উপজেলা থেকে লোকজন এই ফুলবাড়ীর ফুলসাগর লেকটি শুধু এক নজর দেখার জন্য ছুটে আসবে। বর্তমান ফুলসাগর লেকটি উপজেলা মৎস্য অধিদফতরের অধীনে আছে। মৎস্য অধিদফতরের মাধ্যমে জেলেরা প্রতি বছরে তাদের কাছ থেকে লিজ নিয়ে মাছ চাষ করে আসছে।
ফুলবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী সরকার জানান, ফুলসাগর লেকটি আমাদের ফুলবাড়ীর ঐতিহ্য। ফুলসাগর নাম শুনে বিভিন্ন স্থানের মানুষ এখানে ঘুরতে আসে কিন্তু তাদের সামনে আশ্চর্যজনক ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় যে, লেকটির নাম ফুলসাগর হলেও এখানে নেই কোনো ফুল বা ফুলের গাছ! নামের সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। লেকটি থেকে প্রতি বছর লাখ লাখ টাকা মৎস্য অফিসের মাধ্যমে আয় হয়। লেকটিকে পর্যটনকেন্দ্র হলে সরকার এখান থেকে বর্তমান আয়ের চেয়ে চারগুণ বেশি রাজস্ব পাবে।
ফুলবাড়ী উপজেলা মৎস্য অফিসার মাহমুদুন্নবী মিঠু বলেন, ফুলসাগর লেকটি থেকে সরকার বার্ষিক আয়কর ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা লিজ মূল্য পায়। বর্তমানে ফুলসাগরের অবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে। প্রত্যেক বছর বর্ষায় এর চারপাশের পাড় ভেঙে যায়। খুব শিগগিরই জেলা মৎস্য অধিদফতরের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সরকারের পর্যটন মন্ত্রী বরাবরে লেকটিকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার আবেদন জানান হবে বলে জানান তিনি।
ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাছুমা আরেফিন জানান, শুধু ফুলবাড়ীবাসীর স্বার্থে নয় বরং দেশের উন্নয়নের স্বার্থে লেকটি পর্যটনকেন্দ্র হলে ভালো হয়। বিষয়টি জেলা প্রশাসককে অবহিত করবো।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০