মোঃ আবু সঈদ, মানবাধিকার কর্মীঃ
ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি গণহত্যার বীভৎস দৃশ্য আমাকে ব্যতীত করে। শুধু আমি নই, বিশ্বের মুসলিম তৌহিদি জনতাকে কান্নায় বিজড়িত করে। মহান আল্লাহপাকের সৃষ্টি পাখি যেমন আকাশে বিচরণ করে তার পাখায় ভর করে ঠিক তেমনি ইসরায়েলি ইহুদিদের গণহত্যার শিকার হয়ে পাখির মতো আকাশে উড়তে দেখা গেছে মানুষের দেহগুলোকে। মানবতা বিরোধী ধংসাত্মক দৃশ্য দেখে বিশ্ববাসী ব্যতীত। প্রতিটি হৃদয়ে জাগরিত করে হৃদয় বিদারক দৃশ্যগুলো। যাহা মানুষ হিসেবে মানব জাতির জন্য কাম্য নয়।
গাজার নৃশংস হত্যার দৃশ্য মানবজাতির জন্য দুঃখজনক। মা-বাবা,ভাই-বোন,আত্মীয়-স্বজন হারিয়ে শিশুগুলোর কান্নাজড়িত কন্ঠে আল্লাহ আকবার শব্দটি হৃদয়ে শিউরে উঠে। নিশ্চিহ্ন রাফা মাটির সাথে মিশে আছে। যে শিশুগুলো বেঁচে আছে তাদের পাশে কে দাড়াবে? ২য় বিশ্ব যুদ্ধে হিরোসিমা ও নাগাসাকির ধংসাত্মক দৃশ্যকে অতিক্রম করেছে রাফার নিশ্চিহ্ন চিত্র। মর্মাহত বিশ্ব মুসলিম তৌহিদী জনতা।
তারই প্রতিবাদে ৭ এপ্রিল সুনামগঞ্জ জেলার প্রতিটি উপজেলা সহ বাংলাদেশের প্রতিটি শহরে,বন্দরে ও প্রতিপ্রান্তরে তৌহিদি জনতা সেই বীভৎস দৃশ্যের প্রতিবাদ জানিয়ে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলে সারাদেশকে উত্তাল জোয়ারে পরিণত করে।
ফিলিস্তিনের উপর হামলা কেন জাতিসংঘ জবাব চাই,জবাব চাই’ বিশ্বের মুসলিম এক হও লড়াই করো এরকম স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত,
ফিলিস্তিনের জায়নাবাদি ইসরায়েলের গণহত্যার প্রতিবাদে মার্চ ফর প্যালেস্টাইন শ্লোগানটি শান্তিগঞ্জসহ সারা জেলায় সর্বস্তরের তৌহিদি জনতার আয়োজনে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে নারীদের অংশগ্রহণ দৃষ্টিকঠোর।
১৯৪৫ সালের ২৪ অক্টোবর ৫১টি রাষ্ট্র জাতিসংঘ সনদ স্বাক্ষর করার মাধ্যমে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধংশাত্মক বিভীষিকার দৃশ্য অবলোকন করে বিজয়ী মিত্রশক্তি পরবর্তীকালে যাতে যুদ্ধ ও সংঘাত প্রতিরোধ করা যায় এই উদ্দেশ্যে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা করতে উদ্যোগী হয়। ১৯৩৯-১৯৪৫ সালে জার্মানি পোল্যান্ড আক্রমণ করলে ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। গ্রেট ব্রিটেন এবং ফ্রান্স ৩ সেপ্টেম্বর জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে প্রতিক্রিয়া জানায়। পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিশ্বের প্রায় ৩০ টি দেশের ১০ কোটি মানুষ যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করে এবং এতে সাড়ে আট কোটি মানুষ প্রাণ হারায় এর মধ্যে বেসামরিক নাগরিক ছিল সাড়ে পাঁচ কোটি। এটার সূচনা হয়েছিল ১৯১৪ থেকে ১৯১৮ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মীমাংসাকৃত জার্মানির হিটলার ও ইতালীর মুসোলিনির ক্ষতিপূরণের টানাপূরণ হিসেবে। সেই সুবাদে তুরস্ক তাহার স্বাধীনচেতায় নিজেদের ভূখন্ড নির্ণয় করে। তারই ফলশ্রুতিতে যুদ্ধ নয় শান্তি চাই সেই উদ্যোগে ১৯২০ সালে লীগ অব নেশনস নামে প্রথম জাতিসংঘের সূচনা ঘটে।
যে লক্ষ্য উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয় সেই লক্ষ্য উদ্দেশ্যেকে জলাঞ্জলি দিয়ে ২০২৫ সালে এসে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ফিলিস্তিনের মুসলমানদের উপর অতর্কিতভাবে হামলা চালিয়ে তাদেরকে বিধ্বস্ত করে। এটা মানবতার জন্য হুমকিস্বরুপ। পৃথিবীর ইতিহাসে তৃতীয় বিশ্বে তৃতীয় ধ্বংসের ইতিহাস কিন্তু আমরা বাঙালি জাতি, আমরা মুসলিম একটি রাষ্ট্র হিসেবে ওপর মুসলিমদের সুখে-দুঃখে জর্জরিত। জাতিসংঘ শিশু অধিকার সদন আগামী প্রজন্মের কান্ডারী শিশুদের জন্য কি ভূমিকা রাখবে বিশ্ববাসী সেই সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে। খাবারের অভাবে হাহাকার শিশুদের জীবন মানবতার সন্ধিক্ষণ। ধ্বংসস্তূপে শিশুদের কান্নায় আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হচ্ছে। আমরা আমাদের নিজ থেকে মহান আল্লাহ পাকের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করব। মহান আল্লাহপাক প্রকৃত হেফাজতকারী। আমরা অনুতপ্ত, আমরা কান্না জড়িত, আমরা বেদনায় বিমোহিত বলে ফিলিস্তিনের শোকে শোকাহত।
আমাদের দাবি হোক আমাদের দেশের সরকার প্রধানদের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর কাছে শান্তির পরিবেশ সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করা। বিপদাপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সুচিকিৎসার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ, খাবারের ব্যবস্থা করে তাদের জীবনকে বাঁচিয়ে তোলা। বিশ্ববাসীকে নৃশংস গণহত্যার নিন্দা জানানো।
পরিশেষে নৃশংস গণহত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে আমরা নিজেদের মধ্যে কারো ক্ষতি করব না। ফিলিস্তিনের পণ্যকে বর্জন করব, ফিলিস্তিনি পণ্যকে বয়কট করব, তাদের সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটাবো। আমার দেশের কোন ব্যবসায়ীর সম্পদ নষ্ট করে ক্ষতি করব না। তাহাকে তাহার প্রদানকৃত কোম্পানিকে ফেরত প্রদানের জন্য উৎসাহিত করব। প্রয়োজনে ওই পণ্যগুলো আমরা কেউ ক্রয় করব না কিন্তু বিনিময়ে তার সম্পদ চুরি করে বা লুট করে নিয়ে ইতিহাসকে কলঙ্কিত করবো না।
আমরা একটি এবাদতে শামিল হতে গিয়ে আরেকটি অপরাধে সম্পৃক্ত হবো না। জয় হোক মানবতার।