হুমায়ুন কবির, স্টাফ রিপোর্টার
কক্সবাজারের পেকুয়ায় রাস্তার কার্পেটিং বাধা দেওয়ায় বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন পেকুয়ার চরের জনগণ।
১১ মে(রবিবার) সকাল ১০টার দিকে পেকুয়ার চরসহ উজানটিয়া ইউপির ৫ নং ওয়ার্ডের সর্বস্তরের জনসাধারণের ব্যানারে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসময় প্রায় পাঁচ শতাধিক স্থানীয় নারী পুরুষ ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে পেকুয়ার চর থেকে মিছিল নিয়ে সোনালী বাজারে সমবেত হন। সেখানে মানববন্ধন শেষে এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় বক্তারা বলেন, উজানটিয়ার পেকুয়ার চরসহ ৫নং ওয়ার্ডের প্রাণের দাবি ছিল পেকুয়ার চর সড়ক পাকাকরণ কাজ সমাপ্ত করা। গেল ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে সরকার পেকুয়ার চর সড়ক সংস্কারের কাজ আরম্ভ করে। এলজিইডি সড়কটি কার্পেটিং দ্বারা উন্নয়নের কাজ শুরু করে।
‘মেসার্স চকরিয়া ডেভলপমেন্ট’ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নতুনঘোনার রুকুরগুদা থেকে পেকুয়ার চর হয়ে ষাটদুনিয়া পাড়া ফোরকানের দোকান পর্যন্ত দুই কিলোমিটার মেকাডমসহ সড়কে কংক্রিটের কাজ শেষ করেছে। বিটুমিনসহ পাকাকরণের কাজটি এখনো অর্ধ সমাপ্ত অবস্থায় রয়েছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সম্প্রতি সড়কটি পিচ ঢালাইয়ের কাজে বাধা দেওয়া হচ্ছে। উপকূলীয় বনবিভাগ থেকে এ বাধা দিয়েছে। তাঁরা দাবী করছে এ রাস্তা তাদের মালিকানাধীন সম্পত্তির উপর নির্মিত হচ্ছে। গত কয়েক মাস ধরে বনবিভাগ স্থানীয়দের বাড়িঘর নির্মাণ ও সংস্কার কাজেও বাধা প্রদান করছে। অথচ পেকুয়ার চরে মানুষ বসবাস করছে প্রায় শত বছর আগে থেকে। ১৯৯৯ সালে সড়কটি প্রশস্থকরণ করা হয়েছে। প্রায় বিশ বছর সড়কে ইট বিছানো ছিল। হঠাৎ বনবিভাগের এমন হটকারি সিদ্ধান্তে আমরা বিস্মিত হয়েছি। সরকারি কর্তৃপক্ষ কাজ বাস্তবায়ন করছে। কিন্তু বনবিভাগ এত বছর পরে এসে উন্নয়নে বাধাগ্রস্ত করবে দেখে আমরা মর্মহত হয়েছি। এ সড়কটি উজানটিয়ার বিপুল জনগোষ্ঠীর অন্যতম যাতায়াত মাধ্যম। এর উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে স্থানীয় পর্যায়ে। থেমে যাবে যোগাযোগ ব্যবস্থা।
এসময় বক্তব্য রাখেন পেকুয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আজিজুল হক তিনি বলেন আমরা ৯০/১০০ বছর আগে থেকে বসবাস করছি,এই জায়গা যদি বন বিভাগের হয় তাহলে আমাদের উচ্ছেদ করতে পারবেন না,কারণ জনগণের জন্য সরকার। মায়ানমার থেকে যদি রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় পায় তাহলে আমরা বাংলাদেশের এনআইডি কার্ড ধারি নাগরিক আমরা কেন এই জায়গায় থাকতে পারবনা।উজানটিয়ার অন্য জায়গায় বন বিভাগের শত শত একর জমি আছে ১/২জন ব্যাক্তির মালিকানাধীন সেখানেতো তাঁরা অভিযোগ বা উচ্ছেদ করছেনা।শুধু আমাদের উপর কেন এত বৈষম্য। আমরা বাসস্থানের নিশ্চয়তা চাই এটা আমাদের অধিকার। রাস্তার সংস্কারের কাজ দ্রুত শুরু করার জন্য আবেদন জানাচ্ছি।
ইউপি সদস্য কামাল উদ্দিন বলেন : আমাদের বাপ-দাদার কবর এখানে,আমরা এই কবর ছেড়ে কোথাও যাবনা,যদি তাদের জায়গা হয় ১০০বছর আগে উচ্ছেদ করে নাই কেন?
ইউনিয়ন বিএনপি সাংগঠনিক সম্পাদক নেতা মঈন উদ্দিন বলেন, আমরা পেকুয়ার চরের মানুষ বেশিরভাগ অসহায় দারিদ্র, বিদেশি রোহিঙ্গারা যদি বাংলাদেশে রাজার হলে থাকতে পারে বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে কেন থাকতে পারবনা, আমরা রাস্তার কার্পেটিং এর কাজ অতিদ্রুত চায়।
জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, আমাদের দাদারা এখানে বসবাস করেছে প্রায় ১০০ বছর হয়েছে তখন বন বিভাগ কোথায় ছিল? এই রাস্তা দিয়ে মানুষ চলাফেরা করছে ৭০/৮০ বছর হলো, ইট বসিয়েছে ৩৫ বছর হয়েছে এখন কার্পেটের কাজ চলতেছে এত বছর বাধা দেইনি কেন তারা,এতোদিন পরে কোথায় থেকে আসল? আমরা অতি দ্রুত রাস্তার কার্পেটের কাজ সমাপ্ত চাই, তা-না হলে আমরা বন বিভাগের অফিস ঘেরাও করব। আরো বক্তব্য রাখেন আবুল কাশেম,শিক্ষক মোহাম্মদ নাছির,আ.জ.ম নাছির উদ্দিনসহ প্রমুখ।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) পেকুয়ার প্রকৌশলী আসিফ মাহমুদ বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে সড়কটির সংস্কার কাজ শুরু হয়। কাজ বন্ধ রাখতে উপকূলীয় বনবিভাগের পক্ষ থেকে নির্দেশনা সম্বলিত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। এ সংক্রান্ত বিষয়টি আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।
এ ব্যাপারে উপকূলীয় বনবিভাগ ছনুয়া রেঞ্জের মগনামা বনবিট কর্মকর্তা আকতার উদ্দিন বলেন, পেকুয়ার চরে আমাদের প্রায় ১৩০ একর বনবিভাগের জায়গা আছে। রাস্তাটি বনবিভাগের জায়গায় হচ্ছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কাজ বন্ধ করা হয়েছে। কাজ না করতে এলজিইডিকে চিঠি দেওয়া হয়।