
জেমস আব্দুর রহিম রানা, যশোর :
জন্মসনদ হিসেবে বয়স ৮৮ বছর। কিন্তু নিজের হিসেবে হাছিনা বেগমের বয়স দাঁড়িয়েছে ৯৫ তে। এই বয়সেও ভাতা জোটেনি তার কপালে। যদিও সরকারি নিয়মে ৬৩ বছর বয়সেই ভাতা পাওয়ার কথা ছিল হাছিনা বেগমের।
ভাতার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে বহুবার ঘুরেছেন হাছিনা বেগম। প্রতিবারই তাদের লোভের কাছে হেরেছেন তিনি। স্বামী হারা এই নারী তিন ধরণের ভাতা পাওয়ার যোগ্য। তিনি একাধারে বৃদ্ধা, বিধবা ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী।
তারপরও নিজের জন্য জুটাতে পারেননি একটি ভাতার কার্ড। এখন বোঝা হয়ে পড়ে আছেন ছোট ছেলে ভ্যানচালক রফিকুল ইসলামের ঘাড়ে।
হাছিনা বেগম যশোরের মণিরামপুর উপজেলার সরসকাঠি গ্রামের মৃত মালেক গাজীর স্ত্রী। ঠিক কত বছর আগে স্বামীকে হারিয়েছেন সেটাও মনে করতে পারেন না। তার দুই ছেলে। স্বামী চলে যাওয়ার পরথেকেই অন্যের বাড়ি কাজ করতেন। পরে বড় ছেলে ভ্যানচালক আব্দুল খালেকের কাছে থেকেছেন কিছুদিন। কয়েক বছর আগে বড় ছেলে অসুস্থ হয়ে মারা যান। তার একবছর আগে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মারা যান আব্দুল খালেকের স্ত্রী হাজিরা বেগম।
তারপর থেকে নানা রোগব্যাধি নিয়ে ছোট ছেলের সংসারে পড়ে আছেন হাসিনা বেগম। হাছিনা বেগমের ছোট ছেলে রফিকুল ইসলামের বয়স ৬৩ বছর। তিনিও ইতোমধ্যে ভাতা পাওয়ার যোগ্য হয়েছেন। ভ্যান চালিয়ে কোন রকমে স্ত্রী সন্তানদের মুখে আহার দিতেই কষ্ট হয় তার। বৃদ্ধা মায়ের বোঝা তিনি টানবেন কি করে!
করোনাভাইরাসের কারণে গত দেড়মাস ধরে ঠিকমত ভ্যান টানতে পারেন না রফিকুল। বৃদ্ধা মা ও স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে কষ্টের মধ্যে দিন কাটালেও সরকারি কোন ত্রাণ জোটেনি তার ভাগ্যে।
হাছিনা বেগম অভিযোগ করেন, ছেলেরা গরিব হওয়ায় এরওর বাড়ি কাজ করে খেতাম। চোখ নষ্ট হওয়ার পর এখন আর কাজ করতি পারিনে। আমাদের ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বর সুফিয়া বেগমের কাছে গিলাম। মেম্বর তিন হাজার টাকা চাইলো; দিতি পারিনি। আমি গরিব মানুষ; টাকা পাব কনে। রোহিতা ইউনিয়ন পরিষদের মাঠে কয়দিন আগে ডাকিলো; যাইনি। অনেক হাঁটিছি ; কিছু পাইনি। এখন আর হাঁটুতে বল পাইনে, বলেন বৃদ্ধা হাছিনা।
হাছিনা বেগমের পোতা ছেলে শাহিনুর হোসেন বলেন, দাদি এখন খুব অসুস্থ। আব্বার মত আমরা দুই ভাইও ভ্যান চালাই। নিজেদের চলা কষ্ট। দাদিরে দেখব কি করে।
শাহিনুর আক্ষেপ করে বলেন, দাদির জন্য অনেকের হাত পা ধরিছি। কাজ হইনি। হাছিনা বেগমের মত সরসকাঠি-কাশিমপুর গ্রামে অনেক বয়স্ক নারী পুরুষ ভাতার যোগ্য হলেও তারা ভাতা পান না। যদিও ওই ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য আমিনুল হাসান শিল্পির মায়ের নামে ভাতার কার্ড রয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। রোহিতা ইউনিয়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত সমাজসেবা কর্মী সাধনা অধিকারী বলেন, আমিতো ওইভাবে খোঁজ নিইনে। চেয়ারম্যান-মেম্বররা যে তালিকা দেয়; তা নিয়ে কাজ করি।
এই বিষয়ে অভিযুক্ত সংরক্ষিত (৭,৮ ও ৯) ওয়ার্ড মেম্বর সুফিয়া বেগম বলেন, আমি ওনাকে চিনি না। আমি গরিব হতে পারি কিন্তু টাকার প্রতি আমার লোভ কম।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আমিনুল হাসান শিল্পি বলেন, নতুন করে যাছাই-বাছাইতে আমার ওয়ার্ডের বয়স্কভাতার জন্য আট জনের আবেদন জমা পড়েছে।
কিন্তু হাছিনা বেগমের নাম দেওয়া হয়নি। তখন উনি বাড়ি ছিলেন না। মেম্বর বলেন, আমার হাতে মৃত ব্যক্তির একটা কার্ড আছে। ওটা হাছিনা বেগমকে দেবো।
নিজের মায়ের নামে বয়স্কভাতার কার্ডের ব্যাপারে মেম্বর বলেন, আমি মেম্বর হওয়ার অনেক আগে মার নামের কার্ডটি হয়েছে।
জানতে চাইলে মণিরামপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. রোকনুজ্জামান বলেন, আমি বিষয়টি জেনেছি। দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০