ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি :
ঠাকুরগাঁও জেলার গ্রামীণ জনপদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির মৌলিক মাধ্যম ধামের গান। সাধারণত শরৎ কালে দূর্গা পূজার সময় ও লক্ষ্মী পূজার সময় ধামের গানের আসর বসে। তবে কালী পূজা এবং অন্যান্য পূজার সময়েও ধামের গানের আসর বসে থাকে। ধামের গান লোকনাট্য আঙ্গিকের গান। এর ভাষা এ অঞ্চলের গ্রামীণ জীবনের কথ্য ভাষা। গানের বিষয় বস্তু সাধারণত: শাস্ত্রীয়, ঐতিহাসিক ও পাঁচমিশালী। ধামের গান সাধারণত: যাত্রা পালার ঢংয়ে উপস্থাপন করা হয়। এ অঞ্চলের আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী ধামের গানের জনপ্রিয়তা এখনও শীর্ষে রয়েছে। এ গানে পুরুষেরা নারী সেজে অভিনয় করলেও গ্রাম বাংলায় এর সমাদরের কমতি নেয়। ধামের গান শুরু হওয়ার কথা শুনলেই এ অঞ্চলের মানুষের মনে- প্রাণে চাঞ্চলের সৃষ্টি হয়। যে যেখানেই থাকুক ধামের গান শুরু হলেই নারী- পুরুষ, শিশু- বৃদ্ধ ছুটে আসে ধামের গান শুনতে। কোন গাছের তলায় উঁচু মাটির ঢিভি তৈরী করে ধামের গানের আসর বসানো হয়। ধামের গানের নাট্য পালায় বিভিন্ন চরিত্র থাকে, শিক্ষিত- অশিক্ষিত, গ্রাম্য যুবকেরা আঞ্চলিক ভাষায় কাল্পনিক চরিত্রের পালা তৈরী করে। ধামের গানের মজার ব্যাপার হচ্ছে নারী চরিত্র থাকলেও এখানে পুরুষরাই মহিলাদের কাপড় পড়ে লম্বা চুলের ঝুটি, মাথায় খোঁপা, নাকে নাক ফুল, কানে দুল পরে বিভিন্ন চরিত্রের নারী সেজে অপূর্ব অভিনয় করে গান পরিবেশন করে। এরা নারী না পুরুষ তা চেনা মুশকিল হয়ে যায়। এখন এ ধামের গান হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, সাওঁতাল এবং ওঁরাও সম্প্রদায়ের সকলেই শুনতে আসে। একাধিক ধামের গানের দলের সাথে আলাপ করে জানা গেছে সাধারণত: শরৎ এর আশ্বিন মাসে শারদীয় দূর্গা পূজা উৎসবে, কার্তিকের লক্ষ্মী পূজায় ও কালী পুজায় ধামের গান এ অঞ্চলের শ্রোতাদের মাতিয়ে রাখে। আয়োজকরা যাচাই করে সম্মানী দিয়ে থাকেন। সম্মানী ৪ হাজার টাকা থেকে ৬/৭ হাজার টাকা পর্যন্ত। ভাল গানের দল দারা আয়োজন করা হয় প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিদের চূড়ান্ত পর্যায়ে ১ম, ২য় ও ৩য় স্থান অর্জনকারী দলগুলোকে টি.ভি, বাই সাইকেল, গরু ও হারমোনিয়াম ইত্যাদি পুরষ্কার দিয়ে থাকেন। প্রতিবছর আশ্বিন-কার্তিক মাসে ঠাকুরগাঁওয়ের গ্রামে গ্রামে বসে ধামের গানের আসর। দিনের আলো আর রাতে বৈদ্যুতিক লাইটে শ্রোতা দর্শকরা নাওয়া-খাওয়া ভুলে একের পর এক পালার গান উপভোগ করতে থাকে। এ জেলায় বেশী ধামের গান অনুষ্ঠিত হয় সদর উপজেলার আকচা, ঢোলারহাট, মোহাম্মদপুর, রুহিয়া, রাজাগাঁও ও রুহিয়া পশ্চিম ইউনিয়নে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০