নেত্রকোনা প্রতিনিধি
নেত্রকোনায় দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় দুর্নীতির লুটেরা সিন্ডিকেট কর্তৃক প্রতিনিয়ত হুমকি- ধামকির শিকার হচ্ছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, তরুণ কলাম লেখক, সাংবাদিক ও মানবাধিকার অ্যাক্টিভিস্ট কাজী আশফিক রাসেল।
এই বিষয়ে মা রোকিয়া খাতুন তাঁরসন্তান ও পরিবারের ওপর হামলার আশংকায় দুর্গাপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। জিডি সূত্রে জানা যায়, গত ১০ নভেম্বর ২০২৪ ইং তারিখ তাঁর বড় ছেলে কাজী আশফিক রাসেল, সুসং দুর্গাপুর দুর্নীতি ও নিপীড়ন বিরোধী ভার্সিটিয়ান মঞ্চের আহবায়ক হিসেবে দুর্গাপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ফারুক আহম্মদ তালুকদার ও তার স্ত্রী আলহাজ্ব মফিজ উদ্দিন তালুকদার কলেজের অধ্যক্ষ কামরুন্নাহারসহ একটি সিন্ডিকেটের দুর্নীতি, অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের সুস্পষ্ট প্রমাণসহ একটি লিখিত অভিযোগ দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর দাখিল করেন। পরে একই অভিযোগ নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক; চেয়ারম্যান, দুর্নীতি দমন কমিশন, মহাপরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে দাখিল করে করেছে। ইতিমধ্যে অভিযোগের ভিত্তিতে দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কর্তৃক একটি তদন্ত কমিটিও গঠিত হয়েছে। যার স্মারক নাম্বারঃ ০৫.৩০.৭২১৮.০০০২.১৮.০৮৪.২৪-১১৩৮। কিন্তু এ ঘটনায় অধ্যক্ষ ফারুক গং ও তার দীর্ঘদিনের দুর্নীতির সহযোগী ও সুবিধাবাভোগীরা চরম ক্ষিপ্ত হয়ে কাজী আশফিক রাসেলকে অভিযোগটি তুলে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে বিশাল অংকের অর্থ প্রলোভনসহ জীবননাশের হুমকি দিচ্ছেন বলে জানা যায়। এমনকি তাঁর সন্তানদের বিরুদ্ধে পুলিশ ও প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা চক্রটির নিজস্ব লোক ব্যবহার করে ক্ষতি করারও হুমকি দিচ্ছেন।
এব্যাপারে জানতে চাইলে রোকিয়া খাতুন বলেন, এই দুর্নীতিবাজদের সহযোগী হিসেবে যদি সত্যিই কেউ পুলিশ-প্রশাসনে থেকে থাকে তবে তা অবশ্যই তদন্তের মাধ্যমে চিহ্নিত করার দাবি রাখে। পড়াশোনার কারণে আমরা সন্তানরা বিদেশ-বিভুঁইয়ে (দূর শহরে) থাকে।ভাড়াটে সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে আমাদের সন্তানকে অন্য শহরে হামলাসহ বিভিন্নধরনের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে । তাছাড়া অবৈধ টাকার দাপটে দুর্নীতির বিভিন্ন চক্রকে ব্যবহার করে উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটিকে প্রভাবিত করার যথেষ্ট আশংকা করছি। আমরা নিশ্চিত সুষ্ঠু তদন্ত হলে দুর্নীতির বড় একটা সিন্ডিকেট ফেঁসে যাবে । দুর্নীতির বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় কারণে এই দুর্নীতির সিন্ডিকেট আমার ছেলেদের জীবনের জন্য হুমকিস্বরুপ। তদন্তের মাধ্যমে দুর্নীতির এই সিন্ডিকেটের সকল সহযোগী ও সুবিধাবাদীভোগীদেরও চিহ্নিত করা আবশ্যক।
তিনি আরও বলেন, দুর্নীতিবাজ এই অধ্যক্ষ ফারুক আহম্মদ তালুকদার নেত্রকোনা-১ সংসদীয় আসনে দুইদুইবার আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী শীর্ষ প্রার্থী ছিলেন। আওয়ামীলীগের বেশকয়েকটি কমিটির গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পদে থেকেও দুদকের দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির উপজেলা সভাপতি হয়েছেন যা দুদকের নীতিমালার সাথে সাংঘর্ষিক, তার দুর্নীতির সহযোগীদেরকেও দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটিতে জায়গা দিয়েছেন, নিয়োগকালে কাম্য শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলেও অধ্যক্ষ পদে দুর্নীতির সিন্ডিকেটকে ব্যবহার করে বিভিন্ন পদক-সম্মাননাও তারা দুই স্বামী-স্ত্রী কুড়িয়েছেন, আওয়ামী দুঃশাসনকালে অগণিত অপকর্ম করেও, ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পরও আমাদের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোরবিরোধীশক্তি অধ্যক্ষ ফারুক গং অদৃশ্যশক্তির সাথে যোগসাজশ করে এখনো দম্ভের সাথে বহাল তবিয়তে থাকাটাও প্রমাণ করে তিনি অনেক বড় দুর্নীতির সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত। অধ্যক্ষ ফারুক গং এর অবৈধ টাকার দাপট ও দুর্নীতির বিভিন্ন চক্র ব্যবহার করে অসম্ভবকে সম্ভব করার এসব কেরামতি স্থানীয় সচেতনমহলকে শুধু অবাক করে নি রীতিমতো আতংকিতও করেছে। যারা জেনে-বুঝে এই অযোগ্য ও চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিদের বিভিন্ন পদবী,পদক-সম্মাননা ও ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়েছেন তারাও প্রকারান্তরে এই দুর্নীতির সহযোগী। দুর্গাপুরের যেসব সাহসী সন্তান দুর্নীতির এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ফেসবুকে লেখালেখি করছে, কথা বলছে এবং যারা এই আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত তাদেরকেও হুমকির দেয়ার বিষয়ে খবর পেয়েছি। আমার ছেলের নেতৃত্বে এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও অভিযোগ দাখিল করার পর থেকে আমার আত্মীয়-স্বজন, শুভাকাঙ্ক্ষীরা পর্যন্ত আমার পরিবারের এবং বিশেষ করে আমার ছেলের জীবনের নিরাপত্তার জন্য উদ্বিগ্ন। একজন মা হিসেবে আমার কাছে আমার সন্তানদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। আমি মনে করছি, কে বা কারা আমার পরিবার ও আমাদের সন্তানদের অনুসরণ করছে এবং আমার সন্তানদের জান-মালের নিরাপত্তা হুমকির মুখে রয়েছে। তাই আমি দুর্গাপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে এসেছি।
এই বিষয়ে দুর্গাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ বাচ্চু বলেন, কাজী আশফিক রাসেলের মা একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। তদন্তের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।