স্টাফ রিপোর্টারঃ
সুনামগঞ্জে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীসহ তিনজনের মৃত্যুর প্রতিবাদে,
নিরাপদ সড়ক দায়িদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের দাবিতে সিলেট-
সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের শান্তিগঞ্জ বাজার পয়েন্টে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দিনব্যাপী অবরোধ কর্মসূচী পালন করে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) সকাল ১১ ঘটিকা থেকে দিনব্যাপী সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থীদের আয়োজনে
সড়কের পাশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অবস্থান কর্মসূচী পালন করে শিক্ষার্থীরা। বাসের ফিটনেস ও লাইসেন্স দেখে চালক সহ কাগজপত্র দেখে গাড়ি আটক করেন তারা।
অবস্থান কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা বলেন, ঘটনার ইতিমধ্যে ২৪ ঘন্টা পার হয়ে গেছে কিন্তু এখনও ঘাতক বাস চালককে আটক করেননি প্রশাসন। এসময় শিক্ষার্থীরা ১২ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়ে বলেন, আমাদের বোন মারা গিয়ে সে এখন কবরে অথচ প্রশাসন এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে তারা করছে টা কি? আমরা পরিস্কার ভাষায়
বলতে চাই যদি প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন না করে আমরা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবো।
এসময় শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সড়ক দুঘটনাকে রাষ্ট্রীয় হত্যাকান্ড দাবি করে অনতিবিলম্ব হত্যার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের দাবি করেন তারা নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।
শিক্ষার্থী তাকবিল এইচ এস চৌধুরী বলেন, আমরা আজ কর্মসূচীতে পুলিশ প্রশাসনকে অনুরোধ করি তারা যেনো তাৎক্ষণিকভাবে আমাদেরকে নিয়ে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের ফিটনেসবিহীন পরিবহনকে আটক করে মামলা দেয়। কিন্তু পুলিশ দাড়িয়ে দাড়িয়ে তামাশা দেখছে, কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এরপর আমরা বাধ্য হয়ে নিজেরা এই সড়কের বাস গুলোর ফিটনেস ও লাইসেন্স দেখার চেষ্টা করি। কিন্তু ১০ টি বাসের মধ্যে ১০ টি বাসেরই কাগজপত্র ঠিকঠাক পায়নি তারা। এদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি তাদের।
সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শিক্ষার্থী তাকবিল এইচ এস চৌধুরী, জাকারিয়া নাইম, রাহাত আহমেদ, আশরাফ হোসেন প্রমুখ।
সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী হুমায়ুন আহমদ, শান্ত রায়, আমিন উদ্দিন, মো. লিটন, আপন আহমেদ, তামিম আহমেদ, পূর্বা তালুকদার, তুলি সরকার, সুমাইয়া আক্তার, তাহমিদা জাহান রেবিন ও বুশরা আক্তার।
উল্লেখ্য যে, গতকাল বুধবার দুপুর ২ ঘটিকায়
সদর উপজেলার বাহাদুরপুর এলাকায় বিপরীত মুখী বাস-সিএনজি মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী স্নেহা চক্রবর্তী ( ১৮) ও সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আফসানা জাহান খুশী (১৭)। সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী শহরের আরপিনগর এলাকার দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে আফসানা জাহান খুশী
নামের দুইজন ও অন্যান্য যাত্রীদের মধ্যে থেকে শহরের আলীপাড়ার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম (৫৫) নামে একজন সহ ৩ জনের মৃত্যু হয়। এঘটনায় গুরুত্বর আহত আরও দুইজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেটের এম জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আজ ছিল তার বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নের প্রথমদিন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কাজ সমাপ্ত করে শান্তিগঞ্জ হইতে সিএনজিযোগে শহরে ফিরছিলেন দুই শিক্ষার্থীসহ ৫ জন। এসময় স্থানীয়রা গুরুত্বর আহত তিনজনকে উদ্ধার করে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠালে স্নেহা চক্রবর্তী ( ১৮) নামের শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুকান্ত সাহা শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিক মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে তিনটি বাস, পাঁচটি সিএনজি ও একটি মোটরসাইকেলকে মোবাইলকোর্ট আইনের বিভিন্ন ধারায় ১৯,০০০ টাকা জরিমানা প্রদান করেন।
এ বিষয়ে শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুকান্ত সাহা বলেন, আমি এখন ঘটনাস্থলে আসছি। তারা তো আসলে নিরাপদ সড়কের জন্য মানববন্ধন করছে, তাদের সাথে কথা বলে আমরা দ্রুত তাদের দাবি গুলো বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করবো। আমরা নিজেরাও নিরাপদ সড়ক চাই, এ বিষয়ে আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করছি।
তাছাড়া, উক্ত দূর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সুনামগঞ্জ শহরে সামাজিক সংগঠন “নিরাপদ সড়ক চাই “(নিসচা),বিশ্বজন সামাজিক সংগঠন ও শিক্ষার্থীবৃন্দ সহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও সুশীল সমাজ মানববন্ধন করেন।