তাওহীদ জিহাদ, নিউজ ভিশনঃ গাজীপুরের টঙ্গীর তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসায় হল সংস্কারসহ ১৩ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের জেরে আলিম পরীক্ষার্থীদের এডমিট কার্ড জব্দ এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চরম আলোচনা ও নিন্দার ঝড় বইছে।
ঘটনার সূত্রপাত ৩০ জুলাই বুধবার রাতে। রাত ১১টার দিকে শরীয়ত উল্লাহ হল ও তিতুমীর হলের শিক্ষার্থীরা বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে আন্দোলন শুরু করেন। শুরুতে হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকরা পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হন। পরে উপাধ্যক্ষ মাওলানা মিজানুর রহমান ও হোস্টেল সুপার মাওলানা নুরুল হক ঘটনাস্থলে এলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে না পেরে প্রশাসনিক ভবনে অবস্থান নেন।
রাত ১২টা ২৫ মিনিটে তা’মীরুল মিল্লাত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (টাকসু)-এর জিএস সাইদুল ইসলাম ও এজিএস মঈনুল ইসলাম এসে শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করেন যেন শিক্ষক বা প্রশাসনের বিরুদ্ধে অপমানজনক মন্তব্য না করা হয়। রাত ২টার দিকে শিক্ষার্থীদেরকে জানানো হয় যে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় অধ্যক্ষ তাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। আশ্বাস পেয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করে হলে ফিরে যান।
পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন। অধ্যক্ষ ড. হিফজুর রহমান শিক্ষার্থীদের ১৩ দফার মধ্যে ১২টি দাবি মেনে নেন। শুধুমাত্র “শরীয়ত উল্লাহ হলের সিঁড়িতে টাইস করার অনুমতি” বিষয়ে তিনি জানান, ভবনটি ভেঙে নতুন করে নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে বলে সেখানে টাইস করার অনুমতি দেওয়া যাচ্ছে না। শিক্ষার্থীরা বিষয়টি সম্মান জানিয়ে মেনে নেন।
আলিম পরীক্ষার্থী আমজাদ হোসেন বলেন,
“আমরা প্রিন্সিপাল স্যারের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করে বলি: ‘স্যার, আমরা আপনার সন্তানের মতো। যদি আমাদের কোনো কথায় বা আচরণে আপনার কষ্ট হয়ে থাকে, তবে দয়া করে আমাদের ক্ষমা করে দিন।’ উত্তরে স্যার বলেন, ‘আচ্ছা, ঠিক আছে, তোমরা যাও।’”
কিন্তু, নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি হয় ৩ আগস্ট রবিবার। আলিম পরীক্ষা চলাকালে শিক্ষক ড. সালমান ফার্সি পরীক্ষার হলে ঢুকে আন্দোলনে অংশ নেওয়া তিন শিক্ষার্থীর এডমিট কার্ড জব্দ করেন। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,
“তোমরা তোমাদের ক্ষমতা দেখিয়েছ, এখন আমরা আমাদেরটা দেখাচ্ছি।”
পরীক্ষার্থীরা জানান, এতে তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন এবং পরীক্ষায় ঠিকভাবে উত্তর দিতে পারেননি।
পরীক্ষার্থী সায়েম বলেন,
“প্রবেশপত্র জব্দ করায় আমি পরীক্ষা দিতে পারিনি মনোযোগ দিয়ে।”
আরেকজন, সাঈদ হাসান মারুফ বলেন,
“আমাদের বলা হয়, চার দিন পর এডমিট কার্ড ফেরত দেওয়া হবে। এ সময় কোনো আন্দোলন হলে আমাদের আটক করা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়।”
পরবর্তীতে শিক্ষক সালমান ফার্সি শিক্ষার্থীদের ফটোকপি এডমিট কার্ড দিয়ে বলেন,
“তোমরা এটা দিয়ে বাকি পরীক্ষাগুলো দিয়ে ফেলো, এরপর চার দিন পর দেখা করো।”
ছাত্রদের অভিযোগ, শুধুমাত্র ন্যায্য দাবি আদায়ের আন্দোলনের কারণে তাদের বিরুদ্ধে এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, আলিম পরীক্ষা শেষে তারা হলে থাকতে না পারায় সিট কাটার আবেদন নিয়ে হোস্টেল সুপার নুরুল হকের কাছে গেলে তিনি হয়রানি শুরু করেন।
তাদের দাবি,
“যারা আন্দোলনে ছিল তাদের সিট কেটে না দিয়ে টালবাহানা করছেন, অথচ যেসব ছাত্র তার ঘনিষ্ঠ ও পরিচিত, তাদের সিট ঠিকভাবেই কেটে দেওয়া হচ্ছে।”
এ বিষয়ে তা’মীরুল মিল্লাত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের জিএস সাইদুল ইসলাম বলেন,
“পরীক্ষার হলে শিক্ষার্থীর এডমিট কার্ড ছিনিয়ে নেওয়া শিক্ষকসুলভ আচরণ নয়। বিষয়টি আমরা অধ্যক্ষ মহোদয়কে জানিয়েছি, তিনি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।”