প্রতিবেদক:- মাহাদী হাসান
গত ২ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হয় কোটা সংস্কারের জন্য বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আন্দোলন শুরুর দিকে দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে চলমান থাকে।
১৫ জুলাই সোমবার ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী ক্যাডাররা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায়। তখন বেশকিছু সাধারণ শিক্ষার্থী গুরতরভাবে আহত হয়। সে দিন নারী শিক্ষার্থীদের ওপরও ছাত্রলীগ লগ্ন হামলা চালায়। একপর্যায়ে তখন সারাদেশের সকল প্রতিষ্ঠানে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী স্বৈরাচার হাসিনা তার সন্ত্রাসীবাহিনী ছাত্রলীগ, পেটুয়া পুলিশলীগ দিয়েও যখন সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে দমিয়ে রাখতে ব্যর্থ হয়, তখন সে এক স্বৈরাচারী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে কোনো কারণ ছাড়াই দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়।
এতটুকুতেই স্বৈরাচার হাসিনা ক্ষান্ত হয়নি। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমিয়ে দেওয়া নিশ্চিত করতে চলমান বিশ্ববিদ্যালয় আইনলঙ্ঘন করে লগ্নভাবে পুলিশ দিয়ে জোরপূর্বক হল গুলো থেকে ছাত্রদেরকে বের করে দেয়। এতেও স্বৈরাচার হাসিনা সফল হতে পারেনি বরং উল্টো দেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় দাবানলের মত তীব্রভাবে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে এবং সবাই রাজপথে নেমে আসে।
তখন টঙ্গীর অধীনস্থ শিক্ষার্থীরা উত্তরা বিএনএস সেন্টারে ১৬ জুলাই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে রাস্তা অবরোধ করে। উত্তরা বিএনএস সেন্টারে ১৬ জুলাই তা'মীরুল মিল্লাত টঙ্গী'র হাজার হাজার শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। কর্মসূচি শেষে ফেরার পথে তা'মীরুল মিল্লাতের অসংখ্য শিক্ষার্থীর উপর সেদিন ছাত্রলীগ জঘন্যভাবে হামলা চালায়। এতে অনেকেই আহত হয়। ১৭ জুলাই কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের পক্ষ থেকে কোন কর্মসূচি রাখা হয়নি কিন্তু ১৭ তারিখ রাতে সমন্বয়কদের পক্ষ থেকে ১৮ তারিখ কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির ঘোষণা আসে । ১৮ জুলাই বিএনএস সেন্টারের সামনে তা'মীরুল মিল্লাত কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ এর ভিপি আব্দুল্লাহ আল মিনহাজ এর নেতৃত্বে হাজার হাজার শিক্ষার্থী উত্তরার বিএনএসে অবস্থান নেয় সেইসাথে উত্তরার আশেপাশের সকল প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরাও বিএনএসে অবস্থান নেয়। সেদিন সকাল থেকেই ছাত্রজনতার উপর পুলিশ বিরতিহীন ভাবে টিয়ারসেল, সাউন্ড গ্রেনেট, ছোড়া গুলি নিক্ষেপ করতে থাকে কিন্তু তাদের এই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। সেদিন সময় যত গড়াতে থাকে ছাত্র জনতার ঢল এবং আন্দোলন ততই তীব্র হতে থাকে। একপর্যায়ে পুলিশ এলোপাতাড়ি ছাত্র জনতার উপর ফায়ার ( অর্থাৎ জীবননাশ গুলি) করতে থাকে এতে করে অনেক শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে। সেদিন তা'মীরুল মিল্লাতের সাবেক শিক্ষার্থী শাকিল পারভেজ পুলিশের গুলিতে শহীদ হয় এবং বর্তমান ছাত্র জুনায়েদসহ অসংখ্য শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়। টাকসু'র ভিপি আব্দুল্লাহ আল মিনহাজ চোখে গুলিবিদ্ধ হয় এবং অসংখ্য শিক্ষার্থী আহত হয়।
আন্দোলনের তা'মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করায় সেদিন পুলিশ মাদ্রাসা অফিসে এসে ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল মিজানুর রহমানকে অকাথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকি-ধমকি দিতে থাকে এবং রাতের মধ্যেই হোস্টেলে অবস্থানরত সকল শিক্ষার্থীদেরকে বের করে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। ১৯ জুলাই শুক্রবার বিকালে আবারও শুরু হয় শাটডাউন কর্মসূচি। সেদিনও তা'মীরুল মিল্লাত টঙ্গী'র শিক্ষার্থীরা অংশ গ্রহণ করেছিলেন।
সেদিন শুধু পুলিশ নয় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরাও একযোগে গুলিবর্ষণ করতে থাকে। সেদিনও অসংখ্য শিক্ষার্থী শহীদ হয় এবং গুরুতর আহত হয়। ২০ শে জুলাই ছাত্রজনতার হত্যার বিচারের দাবিতে তা'মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা টঙ্গী'র শিক্ষার্থীরা এবং শ্রমিক জনতাসহ তা'মীরুল মিল্লাত টঙ্গী'র পার্শ্ববর্তী মহাসড়ক সকাল থেকে অবরোধ করে রাখেন। সকাল ১১ টা থেকে দফায় দফায় ছাত্রলীগ পুলিশ যৌথ হামলা চালায় আন্দোলনকারীদের উপর। একপর্যায়ে উপর থেকে র্যাব হেলিকপ্টারের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের উপর গুলিবর্ষণ করতে থাকে । বিকাল ৪ ঘটিকায় পুলিশ এবং ছাত্রলীগের যৌথ হামলায় এশিয়া পাম্পের সামনে তা'মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার আলিম শ্রেনীতে পড়ুয়া শিক্ষার্থী নাসির শাহাদাত বরণ করেন। আলিম পরিক্ষার্থী ওমর ফারুকসহ অসংখ্য শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। তাতেও শিক্ষার্থীদের দমানো যায়নি তারা তাদের ভাইদের রক্ত বৃথা যেতে দেয়নি। শিক্ষার্থীরা চূড়ান্ত ভাবে স্বৈরাচার হাসিনাকে দেশ থেকে বিতাড়িত করার পর নতুন বৈষম্যহীন বাংলাদেশের স্বপ্ন বুনছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০