জগন্নাথপুর প্রতিনিধি:
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর-রাণীগঞ্জ দুই অটোরিকশা (সিএনজি) সমিতির শ্রমিকরা মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন। যে কোন সময় বড় ধরণের সংঘর্ষের আশঙ্কা বিরাজ করছে। এর মধ্যে গত ১০ দিনে বিচ্ছিন্ন ভাবে সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনায় উভয় পক্ষে কমপক্ষে ৭ জন আহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় থানায় মামলা ও পৃথক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। বিষয়টি সমাধানের লক্ষে শীর্ষ নেতৃবৃন্দরা প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাতেও কাজ হচ্ছে না। এর নেপথ্যে-রয়েছে দুই শ্রমিক নেতার আধিপত্য বিস্তার ও রাজনৈতিক প্রভাব। যে কারণে একের পর এক ঘটনা ঘটেই চলেছে।
জানাযায়, জগন্নাথপুর গ্রামের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম খেজর দীর্ঘদিন ধরে সিএনজি সমিতির সাথে জড়িত। এর মধ্যে তিনি পরপর ২ বার জগন্নাথপুর পূর্বপাড় সিএনজি সমিতির নির্বাচিত সভাপতি হয়েছেন। এতে মোটর অঙ্গনে শফিকুল ইসলাম খেজরের আধিপত্য গড়ে উঠে।
তবে হঠাৎ করে গত প্রায় ৩ মাস আগে উপজেলার রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের গন্ধর্বপুর গ্রামের বাসিন্দা রাণীগঞ্জ ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম-আহবায়ক আজমল হোসেন মিঠু রাণীগঞ্জ সিএনজি মালিক সমিতির সভাপতি হন। মিঠু সভাপতি হওয়ার পর খেজরের দীর্ঘদিনের গড়ে উঠা আধিপত্যের দুর্গে আঘাত পড়ে। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে তাদের মধ্যে মত বিরোধের সৃষ্টি হয়। এরপর ঘটতে থাকে একের পর বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এ নিয়ে পৃথক সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনায় আজমল হোসেন মিঠু, নুর হোসেন, জাকির হোসেন, ফজল মিয়া, আলা উদ্দিন, জনি মিয়া ও সাহান মিয়া সহ উভয় পক্ষে কমপক্ষে ৭ জন আহত হন।
সিএনজি শ্রমিকরা জানান, গত কয়েক দিন আগে যাত্রী নিয়ে রাণীগঞ্জ যাওয়ার দায়ে জগন্নাথপুর পূর্বপাড় সিএনজি সমিতির চালক নুর হোসেনকে মারপিট করেন রাণীগঞ্জ সমিতির চালকরা। পরে একই কারণে জগন্নাথপুর সমিতির আরেক চালক জাকির হোসেনকে মারপিট করা হয়। এ ঘটনার কয়েক দিন পর রাণীগঞ্জ সমিতির চালক ফজল মিয়াকে মারপিট করেন জগন্নাথপুর সমিতির চালক জাকির হোসেন। এ ঘটনায় আহত ফজল মিয়া বাদী হয়ে ১০ জনকে আসামী করে জগন্নাথপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। উক্ত মামলায় ২নং আসামী করা হয় জগন্নাথপুর পূর্বপাড় সিএনজি সমিতির সভাপতি শফিকুল ইসলাম খেজরকে। এ নিয়ে শফিকুল ইসলাম খেজর ও রাণীগঞ্জ সমিতির সভাপতি আজমল হোসেন মিঠুর মধ্যে ফোনে কথা কাটাকাটি হয়। এরই জের ধরে স্থানীয় পৌর পয়েন্টে শফিকুল ইসলাম খেজর সহ চালকরা আজমল হোসেন মিঠুকে মারপিট করেন। এ ঘটনায় রাণীগঞ্জ থেকে কয়েক শতাধিক লোক সংর্ঘের জন্য জগন্নাথপুর পৌর পয়েন্টে এসে অবস্থান করলে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় জগন্নাথপুর থানা পুলিশের হস্তক্ষেপে দুই পক্ষের লোকজনকে সরিয়ে দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এ ঘটনার পর থেকে জগন্নাথপুর সমিতির সিএনজি রাণীগঞ্জে চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এসব ঘটনায় থানায় উভয় পক্ষে আরো ২টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে বলে শ্রমিকরা জানান।
পরে রাণীগঞ্জ সমিতির গাড়ির ধাক্কায় জগন্নাথপুর সমিতির আলা উদ্দিন নামের আরেক শ্রমিক আহত। এর মধ্যে ৩ অক্টোবর রাতে রিজার্ভ যাত্রী নিয়ে রাণীগঞ্জ গেলে জগন্নাথপুর সমিতির চালক জনিকে মারপিট করা হয়।
এছাড়া ৪ অক্টোবর শুক্রবার সকালে ট্রাফিক পুলিশ চন্দনকে নিয়ে রাণীগঞ্জে গিয়ে আবারো হামলার শিকার হয় জগন্নাথপুর সমিতির সাহান মিয়া নামের আরেক শ্রমিক। এ ঘটনার প্রতিবাদে সকাল ৯ টার দিকে জগন্নাথপুর-রাণীগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে জগন্নাথপুর সমিতির চালকরা। খবর পেয়ে থানা পুলিশ অবরোধ তুলে দিলে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। গত ১০ দিনে এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনায় আহত ৭ জনের মধ্যে জগন্নাথপুর সমিতির আলা উদ্দিন ও জনিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়। অন্য আহতদের জগন্নাথপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে জগন্নাথপুর পূর্বপাড় সিএনজি সমিতির সভাপতি শফিকুল ইসলাম খেজর বলেন, আজমল হোসেন মিঠু নতুন করে মোটর ডির্পামেন্টে এসে আধিপত্য বিস্তার করতে রাজনৈতিক পরিচয়ে প্রভাব খাটিয়ে একের পর এক ঘটনার জন্ম দিচ্ছেন এবং আমি সহ নিরীহ শ্রমিকদের মামলা-হামলা করে হয়রানী করছেন। জানতে চাইলে রাণীগঞ্জ সিএনজি মালিক সমিতির সভাপতি ও ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম-আহবায়ক আজমল হোসেন মিঠু বলেন, আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। যে কারণে মারামারিতে না গিয়ে মামলা করেছি। জগন্নাথপুর উপজেলা সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি শাহ নিজামুল করিম বলেন, উভয় পক্ষের বিরোধ নিস্পত্তির লক্ষে আমরা জরুরী সভা আহবান করেছি। আমরা উভয় পক্ষকে নিয়ে আন্তরিক ভাবে চেষ্টা করছি বিরোধটি নিস্পত্তি করার জন্য।
এ ব্যাপারে জগন্নাথপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ ইখতিয়ার উদ্দিন বলেন, শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা হলেও পুলিশ তা নিয়ন্ত্রন করেছে। এসব ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। তবে দুই পক্ষের বিরোধ নিস্পত্তির করতে তাদের শ্রমিক নেতারা চেষ্টা করছেন। দেখা যাক কি হয়। #