——–
নুহাদুর রহমান সোহেল, ভোলা :
ঘূর্ণিঝড় শক্তি চরফ্যাশনের দক্ষিণ অংশে ভয়ংকর হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে নদী-সাগর উত্তাল হয়ে উঠার ফলে মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে অনেক দ্বীপাঞ্চল। এর ফলে মানুষের সরে আসার সুযোগ নেই বললেই চলে। চরফ্যাশনের ঢালচর, কুকরী-মুকরী, মুজিবনগরসহ বিভিন্ন এলাকা ইতোমধ্যেই অস্বাভাবিক জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে।
ঢালচর ইউনিয়ন চর নিজাম প্রায় তিন হাজার মানুষ কোন আশ্রয় কেন্দ্র নাই। প্রায় দেড়শত গবাদি পশু জোয়ারের সাথে ভেসে গিয়েছে।
স্থানীয় মো: কামরুল ইসলাম নামের এক লোক জানাই তার ৩২ টি ভেড়া জোয়ারের পানির সাথে ভেসে গিয়েছে এবং বিশ টি মত ভেড়া মারা পাওয়া গেছে। চালচর ইউনিয়ন চর নিজাম ১৫ থেকে ২০ লক্ষ টাকা গবাদি পশু জোয়ারের সাথে বাসায় নিয়ে গেছে।
ঢালচরে যেখানে প্রায় ১৫ হাজার মানুষের বাস, সেখানে মাত্র একটি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে যা সর্বোচ্চ ৫০০ জনকে ধারণ সক্ষম। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সম্পূর্ণ অপর্যাপ্ত।
প্রশাসনের প্রস্তুতি ও চ্যালেঞ্জ :
চরফ্যাশন উপজেলা প্রশাসন ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’র আগমন ঠেকাতে আগাম প্রস্তুতির অংশ হিসেবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভার আয়োজন করে। সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসনা শারমিন মিথি। সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, উপজেলার ২৬৫টি স্কুলকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হবে এবং শুকনো খাবার মজুদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রস্তুতি হিসেবে ঘূর্ণিঝড় প্রস্ততি কর্মসূচির আওতায় ১৬৫টি ইউনিটে ২৪০০ স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তারা বৃহস্পতিবার বিকাল থেকেই জনগণকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার বার্তা প্রচার করছে। তবে এসব প্রচেষ্টা বাস্তব চাহিদার তুলনায় অনেকাংশেই অপ্রতুল, কারণ অধিকাংশ এলাকা এখনও নৌযোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের পুনরাবৃত্তি:
উপকূলীয় অবকাঠামোর সংকট ঘূর্ণিঝড় শক্তি শুধু একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, বরং এটি বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের দীর্ঘদিনের অবকাঠামোগত দুর্বলতাকেও সামনে এনে দিয়েছে। চরফ্যাশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় যেখানে হাজার হাজার মানুষ বসবাস করে, সেখানে পর্যাপ্ত ও নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রের অভাব একটি ভয়াবহ সমস্যা।
ইতোপূর্বেও ঘূর্ণিঝড় আইলা, সিডর কিংবা বুলবুল-এর সময় দেখা গেছে যে, আশ্রয়কেন্দ্রের স্বল্পতার কারণে বহু মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থেকে যায়। সরকারি উদ্যোগে স্কুলগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হলেও তা প্রকৃত বিপদের সময় অনেকাংশেই অকার্যকর হয়ে পড়ে, বিশেষ করে যখন বিদ্যুৎ, পানীয় জল ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা যথাযথ থাকে না।
তীব্র জোয়ার ও প্রতিক্রিয়া :
বৃহস্পতিবার রাতে স্বাভাবিকের চেয়ে ২-৩ফুট উচ্চতার জোয়ার ঢেউয়ে ঢালচর ও চর নিজাম উপকূল প্লাবিত হয়। এই জোয়ার রাতের দিকে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে। অনেকেই নিজের ঘরবাড়ি ছেড়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিচ্ছেন, যদিও সেই স্থানের সংখ্যাও সীমিত।