:
# অরক্ষিত মাতারবাড়ীর পশ্চিমের বেড়িবাঁধ।
#স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে নেই মেডিকেল অফিসার
# উত্তর মহেশখালীতে আগুনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি তবুও ফায়ারসার্ভিস স্টেশন এর দাবী উপেক্ষিত।
শহীদুল ইসলাম কাজল
জন্ম থেকেই বৈষম্যের শিকার উত্তর মহেশখালীর জনগোষ্ঠী, শিক্ষা চিকিৎসা, ফায়ারসার্ভিস স্টেশন ও মাতারবাড়ী বেড়িবাঁধ সহ সর্বোপুরী জন দাবী সমূহে চরমভাবে উপেক্ষিত। মাঝেমধ্যে জনপ্রতিনিধিরা গুরুত্বপূর্ণ দাবীগুলো বাস্তবায়নের আশ্বাস দিলেও তা প্রতিশ্রুতিতে সীমাবদ্ধ যুগের পর যুগ। জনপ্রতিনিধিদের বৈষম্যের ফলে আটকা আছে জন দাবী সমূহ। প্রতিবছর আগুনে পুড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও উত্তর জনপদের অন্যতম দাবী ফায়ারসার্ভিস স্টেশন স্থাপনে কেউ-ই নেয় নি কার্যকরী পদক্ষেপ। গতমাসে কালারমারছড়া নোনাছড়ি বাজারে আগুনে প্রায় দুকোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। মহেশখালীর সর্ব দক্ষিণে ফায়ারসার্ভিস স্টেশন হওয়ার উত্তর জনপদে আগুন লাগলে ডাক্তার আসার পূর্বে রোগী মারা যাওয়ার মতো অবস্থা।
তবে আগুনে পুড়ে অকল্পনীয় ক্ষতি হলে জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের দায়িত্বশীল দের সামান্য ত্রাণ সহায়তা নিয়ে ফটোসেশান চলে বরাবরের মতোই 'এমন অভিযোগ ভোক্তভুগী উত্তর মহেশখালী বাসীর। দ্বিতীয় সিঙ্গাপুর খ্যাত মাতারবাড়ীর পশ্চিমের অরক্ষিত বেড়িবাঁধ নিয়ে সুপার ডাইক বেড়িবাঁধ এর স্বপ্ন দেখালেও স্বপ্ন বাস্তবায়নের ছিটেফোঁটা ও কাজ হয়নি। ফলে সাগরে বিলীন হচ্ছে মাথাগোঁজার শেষ সম্বল। আশ্রয়হীন হয়েছেন শত-শত পরিবার তবুও মানসম্মত জরুরী মেরামতের দায় পড়েনি কর্তৃপক্ষের। এছাড়াও মৌলিক অধিকার স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত দীর্ঘ সময় ধরে। উত্তরের বেশকিছু ইউনিয়নে মেডিকেল অফিসার না থাকায় মানুষ সেবা বঞ্চিত হচ্ছে, তাদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত কল্পে কালারমারছড়া ইউনিয়নের চালিয়াতলী এলাকায় ২০ শয্যার একটি হাসপাতালের প্রস্তাবনার কথা জানান কর্তৃপক্ষ।
তবে সেটিও ফাইল বন্দি। এক কথায় জনপ্রতিনিধিদের সদিচ্ছা না থাকায় বাস্তবতার মুখ দেখেনি উত্তর মহেশখালীর জন দাবী সমূহ। ইতিপূর্বে কালারমারছড়া থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান এবং মাতারবাড়ী থেকে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে উত্তর জনপদের মানুষ স্বপ্নে বিভোর ছিলো কিন্তু তারাও হতাশ করেছেন বঞ্চিত উত্তর মহেশখালী বাসিকে। ফলে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তাই বুকভরা হতাশার দীর্ঘশ্বাস সর্বত্র। বর্তমানে হোয়ানক, শাপলাপুর, মাতারবাড়ী এবং ধলঘাটা ইউনিয়নে মেডিকেল অফিসার না থাকায় দীর্ঘ সময়ে সুচিকিৎসা পাচ্ছেন না স্থানীয়রা। শাপলাপুর ও মাতারবাড়ী ইউনিয়নে দু'জন ডিএমএফ দিয়ে নামমাত্র চিকিৎসা সেবা চলছে। অন্যদিকে হোয়ানক ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে নেই কোন মেডিকেল অফিসার।
একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ছিলো, গতবছর তিনিও অবসরে যান। তার অবসরের সাথে হোয়ানক ইউনিয়ন বাসীর স্বাস্থ্য সেবাও অনেকটা অবসরে। মেডিকেল অফিসার তো দূরের কথা একজন উপসহকারী মেডিকেল অফিসার ও দেয়নি কর্তৃপক্ষ'অভিযোগ ভোক্তভুগী মানুষগুলোর। আর বঞ্চিত ধলঘাটা বাসীর সাধারণ স্বাস্থ্য সেবা বলতে কিছুই নেই, একজন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা দিয়েই চলছে সবকিছু। ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবার বেহাল দশা নিয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এর ডাঃ সৈকত বড়ুয়া জানান সদিচ্ছা থাকা সত্বেও জনবল সংকটের কারণে ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। জেলার সর্বত্র ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র গুলোর স্বাস্থ্য সেবা জোড়াতালি দিয়েই চলছে।
এছাড়াও উত্তর মহেশখালীতে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন না থাকায় প্রতিবছরই সহায় সম্বল আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। একমাত্র ফায়ার সার্ভিস মহেশখালীর মূল-ভূখন্ডের সর্বদক্ষিনে হওয়ায় উত্তর জনপদে জানমাল রক্ষায় কাজে আসছে না। এভাবে প্রায়সময় উত্তর মহেশখালীতে আগুনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও এখনো উপেক্ষিত ফায়ার সার্ভিস স্থাপনের দাবী। অনেকেই জানান দেশের একমাত্র ব্যতিক্রমি উপজেলার নাম মহেশখালী। ভৌগোলিক কারণ ও কক্সবাজার মহকুমার সাথে যোগাযোগ সুবিধার্থে ব্রিটিশ আমল থেকে প্রশাসনিক সবকিছু উপজেলার সর্বদক্ষিনে অবস্থিত। এরপর থেকে আর ভাগ্যের তেমন পরিবর্তন হয়নি উত্তর জনপদে। কখন বাস্তবায়ন হবে সে প্রশ্নের উত্তর যেন অনাকাঙ্খিত। বিগত কয়েক বছর থেকে শাপলাপুর, হোয়ানক, মাতারবাড়ী ও ধলঘাটার অবহেলিত মানুষের কয়েকটি অতিগুরুত্বপূর্ন দাবির মধ্যে ফায়ার সার্ভিস অন্যতম ও সময়ের দাবী।
প্রতিবছরই বেশ কয়েকবার উত্তর মহেশখালীতে অগ্নি
দুর্ঘটনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপন না হওয়ায় ক্ষোভে’র বহিঃপ্রকাশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। এছাড়া কাকে ই-বা বলবে? কে আছে এ-জনগুরুত্বপূর্ন দাবি বাস্তবায়নের? এভাবেই হতাশা প্রকাশ করেন ক্ষতিগ্রস্ত ও সচেতন মহল। মাঝেমধ্যে অগ্নি দূর্ঘটনার সংবাদ পেয়ে গোরকঘাটা থেকে ফায়ার সার্ভিস টীম পৌঁছানোর পূর্বেই ধ্বংস স্তুপে পরিনত হয়। এক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিস কতৃপক্ষের প্রতি কোন আক্ষেপ নেই ক্ষতিগ্রস্তদের। দূরত্বের কারণে যথাসময়ে পৌছানো সম্ভব হয়না ফায়ার সার্ভিস টীমের। যুগযুগ ধরে কালারমারছড়া, শাপলাপুর, মাতারবাড়ীতে বেশ কয়েকবার অগ্নিদুর্ঘটনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও উত্তর মহেশখালীবাসির জানমাল রক্ষার্থে ফায়ার সার্ভিস স্থাপনে কোন সুনজর ছিলো না জনপ্রতিনিধিদের।
তাই আক্ষেপ শুধুই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও জনপ্রতিনিধিদের ওপর। এ-বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিপেন্স এর স্টেশন কক্সবাজার উপসহকারী পরিচালক এর বক্তব্যের জন্য বেশ কয়েকবার যোগাযোগ চেষ্টা করেও সংযোগ না পাওয়ায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীকি মারমা জানান- জায়গা না পাওয়ায় উত্তর মহেশখালীতে ফায়ারসার্ভিস স্টেশন স্থাপন সম্ভব হয়নি।
মহেশখালীর চালিয়াতলী স্টেশন সংলগ্ন সরকারি জায়গায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপন করলে কালারমারছড়া, শাপলাপুর, মাতারবাড়ী ইউনিয়নের অগ্নিদুর্ঘটনার ক্ষয়ক্ষতি কমানো অনেকটা সম্ভব হবে বলে জানান অনেকেই। এছাড়াও বদরখালী বাজারে বেশ কয়েকবার অগ্নিদুর্ঘটনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। দূরত্বের কারণে চকরিয়া থেকে আসার পূর্বে আগুনে ছাই হয়ে যায় ব্যবসায়ীদের মূলধন ও স্বপ্ন। চালিয়াতলী স্টেশনের সাথে বদরখালী সামান্য দূরত্ব হওয়ায় চালিয়াতলীতে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপিত হলে বদরখালীর অগ্নি দুর্ঘটনায় কাজে আসবে। তাই উত্তর মহেশখালীর অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে ফায়ার সার্ভিসের মতো গুরুত্বপূর্ণ জনদাবি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের সু-দৃষ্টি কামনা করেন ।
কবে বাস্তবায়ন হবে উত্তর জনপদে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, স্বাস্থ্যসেবা ও মাতারবাড়ীর টেকসই বেড়িবাঁধ এমন প্রশ্ন ঘুরেফিরে বঞ্চিত মানুষের হ্নদয়ে?
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০