কাপাসিয়া (গাজীপুর) থেকে শামসুল হুদা লিটন :
গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন স্থানীয় শীতলক্ষ্যা নদী দ্বারা দুই ভাগে বিভক্ত। উপজেলা সদরের ৩টি ইউনিয়নের সাথে শীতলক্ষ্যা নদীর উত্তর পাড়ের ৮টি ইউনিয়নের একমাত্র মাধ্যম হলো ‘ফকির মজনু শাহ্ সেতু’। ভৌগলিক কারনে উপজেলার সনমানিয়া, কড়িহাতা এবং তরগাঁও ইউনিয়নের একাংশ অবহেলিতই রয়েগেছে। ৩টি ইউনিয়নের প্রায় এক লাখ বাসিন্দার সদরের সাথে সহজ যোগাযোগ হলো দক্ষিন-পশ্চিমাংশের সাফাইশ্রী খেয়াঘাট। পূর্বপাড়ের হাজারো শিক্ষার্থী প্রচন্ড রোদ-বৃষ্টির মাঝে ওই খেয়াঘাট পাড়ি দিয়ে সদরের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদরাসায় পড়ালেখা করার জন্য আসে। বিশাল এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠির আধা কিলোমিটারের পথ পাড়ির পরিবর্তে ৪ কিলোমিটার ঘুরে সদরে বিভিন্ন কর্মকান্ডে আসতে হয়। তাই সাফাইশ্রী ঘাটে একটি সেতু নিমার্ণ এলাকাবাসির দীর্ঘদিনের বাদী।
এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবীর প্রেক্ষিতে জনদুর্ভোগ লাগবে তরগাঁও দক্ষিন পাড়ার শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহাবউদ্দিনের স্বজন মোঃ রেহান উদ্দিনের প্রচেষ্টায় এলাকাবাসীর গণস্বাক্ষরিত একটি আবেদন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিইডি) মন্ত্রী তাজুল ইসলামের নিকট দাখিল করেছেন। সাফাইশ্রী খেয়াঘাট সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম ও প্রকল্পের আওতায় আনার জন্য এলাকাবাসী প্রধানমন্ত্রীর সু-দৃষ্টি কামনা করছেন। এছাড়া এলাকার মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, অ্যাডভোকেট, ব্যবসায়ীসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের অনুরোধে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাড. আলহাজ¦ মোঃ আমানত হোসেন খান স্বাক্ষরিত একটি চাহিদাপত্র প্রধানমন্ত্রী বরাবর প্রদান করেন। এতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক এমপি ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম. এ মান্নান এমপি’র সুপারিশে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম এমপি বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে সেতু নির্মাণে এলজিইডি’র প্রধান প্রকৌশলী খলিলুর রহমানকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য জোড়ালো ভাবে বলেছেন।
চাহিদা পত্রে আরো বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহাব উদ্দিন যুদ্ধচলাকালীন সময়ে মারা যান। দেশ স্বাধীন হবার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শহীদ সাহাব উদ্দিনের পিতাকে একটি শান্তনা চিঠি লিখেছিলেন। তাঁর স্বজনদের বাড়ি সাফাইশ্রী খেয়াঘাট সংলগ্ন হওয়ায় ‘ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সেতু’ নাম করন করে এখানে অন্ততপক্ষে একটি ব্রিজ নিমার্ণে এলাকাবাসী প্রধানমন্ত্রীর নিকট জোড় বাদী জানিয়েছেন।
উপজেলার তরগাঁও দক্ষিণ পাড়া ও পূর্বপাড়া, সনমানিয়া, কড়িহাতা, হিজুলিয়া, ইকুরিয়া, চরখামের গ্রামসহ আরও কয়েক গ্রামের লোকজন কাপাসিয়া উপ-শহরে আসতে হলে প্রায় ৪ কিলোমিটার পথ ঘুরে ‘ফকির মজনু শাহ্ সেতু’ পার হয়ে আসতে হয়। কাপাসিয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ ও উল্লেখযোগ্য কয়েকটি মাদরাসায় পড়–য়া ওই এলাকার শত শত ছাত্র-ছাত্রীরা খেয়া নৌকার পরিবর্তে আধূনিক যোগে ব্রিজ দিয়ে পারাপার হতে চায়। নৌকা দিয়ে নদী পারাপারে ছাত্র-ছাত্রী ও এ এলাকার কর্মজীবী মানুষের কর্মস্থলে পৌঁছতে বিলম্ব ও চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এছাড়া বর্ষাকালে শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বেশি বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। বর্ষাকালে মাঝে-মধ্যে এ খেয়াঘাটে নৌকা ডুবির ঘটনাও ঘটে। কাপাসিয়া উপশহরে যাতায়াতের জন্য ওই এলাকার লোকজনের সোজা ও সহজ পথ হলো সাফাইশ্রী খেয়াঘাট। এখানে একটি ব্রিজ হলে বৃহত্তর ওই এলাকার ছাত্র-ছাত্রী ও সর্বসাধারণের যোগাযোগের পথ আরো সহজ হবে।
দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসী নদী পারাপারে নৌকার অভাব, অতিরিক্ত টুল আদায়সহ নানা ভাবে হয়রানী ও চরম ভোগান্তির শিকার হয়ে আসছে। এখানে একটি ব্রিজ হলে হাজার হাজার মানুষ বিশেষ ভাবে উপকৃত হবে। ফলে ১১টি ইউনিয়নের জনগণের যোগাযোগের পথ অনেক সহজ হবে। এতে ঢাকার সঙ্গে উত্তর বঙ্গের দূরত্ব কমে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো সহজ ও উন্নত হবে।