------
রেলওয়ে পলোগ্রাউন্ড ময়দানে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন, চট্টগ্রাম মহানগরীর দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন-২০২৪ অনুষ্ঠিত
..............................
চট্টগ্রাম রেলওয়ে পলোগ্রাউন্ড মাঠে প্রায় ছয় হাজার কাউন্সিলরের উপস্থিতিতে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন, চট্টগ্রাম মহানগরীর দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা ও সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি, সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। প্রধান অতিথির বক্তব্যে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, সকল কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন করার অবাধ অধিকার দিতে হবে। একসময় ট্রেড ইউনিয়ন ছিল স্কুল অব কম্যুনিজম। অবশেষে ইসলামী আদের্শ বিশ্বাসী কিংবদন্তি দুই শ্রমিকনেতা ব্যারিস্টার কুরবান আলী ও ব্যরিস্টার আক্তার উদ্দিন শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম শুরু করেন। আর ট্রেড ইউনিয়নে নতুন ধারা তৈরি হলো। ট্রেড ইউনিয়নকে স্কুল অব ইসলামে পরিণত করার চেষ্টা শুরু করেছেন আমাদের পূর্ববর্তী নেতারা।
আজকে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ ট্রেড ইউনিয়ন নিয়ে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন সর্ববৃহৎ শ্রমিক সংগঠন। আমাদের পূর্বসুরিরা যে পতাকা আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন, সেটা বিজয়ী না হওয়া পর্যন্ত আমাদের পথচলা থামবে না।
আজকে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন। অতএব, শ্রমিকদের সকল ন্যায্য অধিকার আদায়ে শ্রমিক কল্যাণকে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। শ্রমিকদের মাঝে বেতন-বৈষম্য দূর করতে হবে। রাসূল সা. শ্রমিকদের বেতনের স্টান্ডার্ন্ড ঠিক করে দিয়েছেন। আর তা হলো, মালিক যা খাবে, যা পরবে, সেই সমমানের খাওয়া-পরার ব্যবস্থা শ্রমিকদেরও করতে হবে। নারী শ্রমিকরা আজ দাবি জানিয়েছেন, প্রত্যেক কলকারখানা ও শ্রম অঙ্গনে নারীদের নামাজের আলাদা জায়গার ব্যবস্থা করার। আমরা এই দাবির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করছি। এই দাবি অবিলম্বে মেনে নিতে হবে।
আমরা আজ বেদনা ও শ্রদ্ধার সাথে শহিদ অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফের নাম স্মরণ করছি। শহিদ আলিফের নাম বাংলাদেশের ইতিহাসে আধিপত্যবাদবিরোধী সংগ্রামী হিসেবে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। পাশের দেশের সরকার ও সরকারি দলের নেতারা বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে কথা বলে আমাদের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে। আমাদের অভিন্ন নদীসহ বিভিন্ন বিষয়ে তারা আমাদের অধিকারে হস্তক্ষেপ করছে। আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারকে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করতে হবে। অন্তবর্তীকালীন সরকারের দায়িত্বশীলদের আমরা বলছি, সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোনো অপশক্তি ও আধিপত্যবাদীর চোখ রাঙানিকে আপনারা ভয় পাবেন না। সারা দেশের মুক্তিকামী মানুষ আপনাদের সাথে আছে। একটি গ্রহণযোগ্য সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অন্তবর্তীকালীন সরকারকে কাজ করতে হবে। নতুন বাংলাদেশ নির্মাণে আজকের এই সম্মেলন ঐতিহাসিক ভূমিকা রাখবে।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক ও চট্টগ্রাম মহানগরী সভাপতি এস এম লুৎফর রহমান। সঞ্চালনা করেন মহানগরী সাধারণ সম্পাদক মকবুল আহম্মদ ভূঁইয়া, সহ-সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শিহাবউল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদ উল্লাহ আদিল ও আইন-আদালত সম্পাদক হামিদুল ইসলাম।
সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মুহাম্মদ শাহজাহান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খান, চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রধান উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী, সাবেক মহানগরী সভাপতি ও কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা অধ্যাপক আহসান উল্লাহ এবং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান।
সম্মেলনে কাউন্সিলরদের অংশগ্রহণে নির্বাচন পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক লস্কর মুহাম্মদ তসলিম।
২০২৫-২৬ সেশনের জন্য চট্টগ্রাম মহানগরীর সভাপতি নির্বাচিত হন এস এম লুৎফর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন আবু তালেব চৌধুরী।
প্রধান বক্তা মুহাম্মদ শাহজাহান তার বক্তব্যে বলেন, শ্রমিক-মালিক পরিচয়ের ভিত্তিতে আল্লাহর কাছে মর্যাদা নিরুপিত হয় না। বরং তাকওয়ার মাধ্যমে মর্যাদা নিরুপিত হয়। সুতরাং তাকওয়া অর্জনে আমাদের অগ্রণী হতে হবে। আমরা আজ শ্রদ্ধা জানাচ্ছি শহিদ সাইফুল ইসলামের প্রতি। তিন শ্রমিকদের সহযোগী ছিলেন। শ্রমিকদের বিনামূল্যে ও স্বল্পমূল্যে আইনি সহায়তা দিতেন তিনি। আমরা দাবি জানাচ্ছি, আলিফের খুনিদের অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে। বীর চট্টলার শ্রমিকজনতার প্রতি আমরা আহ্বান জানাচ্ছি, আজকে নির্বাচিত নতুন নেতৃত্বের প্রতি আপনারা সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে হারুনুর রশিদ খান বলেন, ইসলামী শ্রমনীতি প্রতিষ্ঠার আহ্বান সকল শ্রমিকের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। ক্ষুধার্থ, বস্ত্রহীন মানুষদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলামী শ্রমনীতি প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। তাই শ্রমিকজনতাকে ইসলামী শ্রমনীতি প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
বিশেষ অতিথি সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী বলেন, শ্রমিক-কর্মচারী ভাই-বন্ধুরা আগষ্টের গণ-আন্দোলনে রাজপথে দুর্বার ভূমিকা রেখেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্রজনতার পাশে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শ্রমিক-কর্মচারীরা রাজপথে রক্ত দিয়েছে। মধ্যবিত্ত পরিবারের ও গরিবের সন্তানরাই চব্বিশে রাজপথকে রক্ত দিয়ে লাল করেছে। তাই আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, বাংলাদেশে বেতন ও আয়ের বৈষম্য আমরা সহ্য করব না। অতএব, শ্রমিকদের হিস্যা ঠিক রেখে নতুন বেতনকাঠামো পুনর্নির্ধারণ করতে হবে। শ্রমিক পরিবারের সন্তানদের শিক্ষা ও উচ্চশিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আজ শ্রমিকদের থাকার মতো আবাসনব্যবস্থা নেই। কিন্তু বিগত লুটেরা শাসকের ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী দেশের টাকা পাচার করে বিদেশে ২৬৫টি বাড়ির মালিক হয়েছে। এসব বৈষম্য অবশ্যই রোধ করতে হবে। বন্দরের সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকদের চাকুরি নিশ্চিত করতে হবে। ভোটচোর, ডাকাত ও খুনীদের ফেরত আসতে দেওয়া হবে না। আগামী দিনে ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করার জন্য অবিরাম সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।
বিশেষ অতিথি অধ্যাপক আহসান উল্লাহ বলেন, বেকারত্ব দূর করা ছাড়া বাংলাদেশের অর্থনীতিকে চাঙা করা যাবে না। আর কলকারখানা বন্ধ রেখে বেকারত্ব দূর করা যাবে না। তাই অবিলম্বে চট্টগ্রাম মহানগরীর আদমজী জুটমিলসহ সারা দেশে বন্ধকৃত মিল-কারখানা চালু করতে হবে।
বিশেষ অতিথি লস্কর মুহাম্মদ তসলিম বলেন, শ্রমিকজনতার অধিকার আদায়ের জন্য আমরা ইসলামী শ্রমনীতি চাই। আর সেই শ্রমনীতি প্রতিষ্ঠা করতে আমাদের অক্লান্ত পরিশ্রম করে যেতে হবে। ফ্যাসিস্ট যেন পুনর্বাসিত হতে না পারে, সেজন্য শ্রমিকজনতাকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান বলেন, বিগত ষোলো বছর ধরে ফ্যাসিস্ট শাসকের ছায়ায় যেসকল শ্রমিকনেতা নামধারী সন্ত্রাসীরা শ্রমিকদের নির্যাতন করেছে, লুটপাট করেছে, দুর্নীতি করেছে অবিলম্বে তাদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। আমরা জানি, চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন পদে এখনও ফ্যাসিবাদের দোসররা বসে আছে। অবিলম্বে তাদের অপসারণ করতে হবে। শূন্যপদে নিয়োগ সম্পন্ন করতে হবে। শিল্প সেক্টরকে অস্থির করে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া করার ষড়যন্ত্র চলছে। শিল্প সেক্টরে অস্থিরতা দূর করতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে শক্ত অবস্থান নিতে হবে। প্রত্যেকটি শিল্প কারখানায় শ্রমিক নিপীড়ন বন্ধ করতে হবে।
সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মহানগরীর উপদেষ্টা নজরুল ইসলাম, অধ্যক্ষ নূরুল আমীন, উত্তর জেলার প্রধান উপদেষ্টা আলাউদ্দীন সিকদার, ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক মুহাম্মদ ইসহাক, মহানগরীর উপদেষ্টা খায়রুল বাশার, সাবেক কাউন্সিলর অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী, উত্তর জেলা সভাপতি ইউসুফ বিন আবু বকর, ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম মহানগরী দক্ষিণ সভাপতি শহীদুল ইসলাম এবং মহানগরীর নির্বাহী পরিষদ সদস্যবৃন্দ ও থানা-সেক্টর নেতৃবৃন্দ।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০