

নিলয় ধর, মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি :
সহায় সম্বল বলতে একখণ্ড সরকারি খাসজমির উপরে টিনের একটি খুপড়ি ঘর। যা ছিল দিনমজুর বিধবা জাহানারা বেগমের মাথা গোঁজার ঠাঁই। সম্প্রতি যশোরের মণিরামপুরের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড় আম্ফান সেই ঠাঁই টুকু কেড়ে নিয়েছে বিধবা জাহানারা বেগমের । এখন অন্যের ঘরের বারান্দায় মানবেতর দিন কাটছে এই অসহায় মানুষটির ।
মণিরামপুরের রোহিতা ইউনিয়নের এড়েনদাহ গ্রামের মৃত আক্কেল আলী সরদারের স্ত্রী জাহানারা বেগম। চারমাস আগে অসুস্থ হয়ে তার স্বামী আক্কেল আলী মারা যায়।
বিধবা জাহানারা বেগম পরের বাড়িতে কাজ করে আবার কখনো কখনো ভিক্ষা করে সংসার চালান। সরকারি খাস জমিতে একটি খুপড়ি ঘর ছাড়া মাঠে চাষের কোন জমি নেই। অতি কষ্টে দিন যায় তার। নিত্য সংগ্রাম করে জীবন চললেও তার সহযোগীতায় কখনো এগিয়ে আসেননি জনপ্রতিনিধি বা সমাজপতিদের কেউ। করোনাকালীন দুর্যোগে কর্মহীন পরিবারটি পায়নি সরকারি একমুঠো চালও।
জাহানারা বেগম বলেন, আমি পরের বাড়িতে কাজ করি। মাঝে মাঝে নওয়াপাড়ার আকিজ মিলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করি। খেটেখুটে কোন রকম সংসার চলে। মনিরামপুরের সাবেক ইউএনও মোঃ কামরুল হাসান ও সাংবাদিক রহিম রানা'র সহায়তায় একখণ্ড সরকারি খাস জমির উপরে টিনের ছোট্ট একটা খুপরি ছাড়া কিছুই ছিলনা। গত বুধবারের (২০ মে) রাতভর চলা ঝড়ে আমার ঘর খানা উড়ে গেছে। এছাড়া ঘরের উপর বড় গাছ পড়ে সব ভেঙেছে। অল্পের জন্য জীবনে বেঁচে গেছি । সেই রাত্রির ভয়ংকর চিত্র মনে পড়লি এখনো গলা শুকিয়ে আসে। ঘর ভাঙার পর তা আর জোড়া দিতি পারিনি। এখন পাশের বাড়ির বারান্দায় থাকি।
জাহানারা বেগম আক্ষেপ করে বলেন, করোনার জন্যি দুই মাসের বেশি বাড়ি বসে আছি। কাজকাম নেই। অনেকে সরকারি কতকিছু পাইছে। আমারে কেউ একমুঠো চালও দিইনি। যেনে (যেখানে) পেট চালানো দায়; সেনে (সেখানে) ঘর ঠিক করব কি দিয়ে।
বিধবা জাহানারা বেগম বলেন, ঘর পড়ার পর থেকে অনেকে এসে দেখে যাচ্ছেন। কেউ কিছু দেবে বলছেন না।
স্থানীয় ইউপি সদস্য রেজাউল ইসলাম বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে আমার ওয়ার্ডে অনেকে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। আমাদের কাছে ক্ষতিগ্রস্থদের সংখ্যা চাওয়া হয়েছে। আমি ৩০ জনের কথা বলেছি। কারও নাম দেওয়া হয়নি। জাহানারা বেগম খুবই গরিব মানুষ। স্বামীর মৃত্যুর পরে ভিক্ষা করে সংসার চালায়। ভিটেটুকু ছাড়া তার কিছুই নেই। তার টিনের ঘরটা ঝড়ে উড়ে গেছে। সে সরকারি সহায়তা পাওয়ার যোগ্য।
মণিরামপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ বায়েজিত বলেন, আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা জেলা ত্রাণ অফিসে জমা দেওয়া হয়েছে। এখনো কোন সহায়তা পাওয়া যায়নি। ঝড়ে যারা বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন তারাই সহায়তা পাবেন। বরাদ্দ আসলে জাহানারা বেগমের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান উল্লাহ শরিফী বলেন, জাহানারা বেগমের ভাঙা ঘরের দুটো ছবি আমি পেয়েছি। ছবিগুলো পিআইও’র কাছে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ আসলে তিনি যেন ঘর নির্মাণের জন্য সহায়তা পান সেই ব্যপারে ব্যবস্থা নিতে পিআইওকে বলা হয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০