বাপ্পী রাম রায়
সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধিঃ
আজ ১০ ডিসেম্বর। এ দিনটি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলাবাসির জন্য একটি স্বরণীয় দিন। আজকের দিনে পাক-হানাদার বাহিনীর কবল থেকে সুন্দরগঞ্জ এলাকা মুক্ত হয়। মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর আজকের দিনে সুন্দরগঞ্জ শত্রুমুক্ত হলে “বিজয় উল্ল্যাস” আর ‘জয় বাংলা’ ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়েছিল আকাশ বাতাস। এ এলাকা হানাদার মুক্ত করতে অসংখ্য জীবন বলীদান এবং অসংখ্য মা-বোনের সম্ভ্রম হানি হয়েছিল। সেই ভয়াবহ দিনে কত কি যে ঘটেছে তার পরিসংখ্যান নেই। ৭১ সালের ২৫ মার্চ ভয়াল কালো রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সারাদেশের ন্যায় এ এলাকায়ও ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তিকামী মানুষের উপর। সে সময় পাক হানাদার বাহিনীর এদেশীয় দোষর, রাজাকার, আলবদর, আলশামস্, পিচ কমিটি, শান্তি কমিটির সদস্য এলাকার অসংখ্য ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়ে ক্ষতি সাধন করেছিল কোটি কোটি টাকার ধন সম্পদ। এমনকি এ বাহিনীর তান্ডবে এলাকার মানুষ ভয়ে জঙ্গলে ও গর্তে পালিয়ে থাকত। সুযোগ বুঝে বাড়িতে থাকা স্বতী-সাধবী নারীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ত রাজাকার ও আলবদর বাহিনী। হানাদারদের অত্যাচার থেকে রেহাই পেতে দেশ প্রেমিক মুক্তিযোদ্ধারা নিজের জীবন বাজি রেখে স্বাধিকার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এভাবে দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ করতে করতে পাক হানাদার বাহিনী দুর্বল হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে ৯ ডিসেম্বর সুন্দরগঞ্জে প্রায় ৩১১ জন সংগ্রামী বীরমুক্তিযোদ্ধার আগমন ঘটে। স্বাধীনতাকামী বীরমুক্তিযোদ্ধাদের আগমন ঘটায় ভয়ে সম্মুখযুদ্ধ ছাড়াই ১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর রাতের আঁধারে পাক হানাদার বাহিনীর সদস্যরা পালিয়ে যায়। পরের দিন ১০ ডিসেম্বর বীরমুক্তিযোদ্ধাদের সাথে স্বাধীনতাকামী মানুষ একত্রিত হয়ে সুন্দরগঞ্জে পাক হানাদার বাহিনীর খোঁজে তল্লাশি চালায়। তল্লাশিতে পাক বাহিনীর কোন সদস্যকে না পেয়ে সেদিন বীরমুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মুক্তিকামী জনগণ বিজয় উল্লাস করে। সেই থেকেই ১০ ডিসেম্বরকে সুন্দরগঞ্জ হানাদার মুক্ত দিবস ঘোষণা করা হয়। যার ধারাবাহিকতা আজও অব্যাহত রয়েছে। সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এমদাদুল হক বাবলু জানান, প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও ১০ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত দিবস পালনের জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। বিজয় উল্লাস, র্যালি ও গল্পে গল্পে মুক্তিযুদ্ধ আলোচনায় মুক্তিযুদ্ধের স্মতি চারণ করবে বীরমুক্তিযোদ্ধারা।