কাইছারুল ইসলাম,মহেশখালী (কক্সবাজার)
বিলীন বেড়িবাঁধ, ভালো নেই মাতারবাড়ীর সাগর পাড়ের মানুষ। প্রতিনিয়ত তাদের ঘুম ভাঙ্গছে সাগরের গর্জনে। জোয়ারে ভেসে যায়, ভাঁটায় কূল পায় এমন অবস্থা তাদের। তবুও অস্তিত্ব রক্ষার যুদ্ধে সংগ্রাম করে যাচ্ছে প্রতিদিন।
কখনো সুনামি, কখনো ভূমিকম্প, কখনো ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছে সমুদ্র তীরবর্তী মানুষ। বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বারবার আশ্বাস দিলেও কথা রাখেনি কেউ। কিন্তু তাদের দুঃখ দেখার যেন কেউ নেই অভিযোগ স্থানীয়দের।
বলেছিলাম কক্সবাজারের দ্বিতীয় টুঙ্গিপাড়া খ্যাত মাতারবাড়ীর সাগরপাড় তীরবর্তী মানুষের কথা। পুরানো সেই ষাইট পাড়া প্রতিনিয়ত পানির তলায় ডুবছে। পানির তলায় কত জীবন বিপন্ন, কত মানুষের জীবন-জীবিকা হারিয়ে যাচ্ছে। এক যুগ আগের ষাইট পাড়া চেহারার সঙ্গে বর্তমানের ছবির কোন মিল নেই এমনটা জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
জানা যায়, তিন শতাধিক পরিবারের বসবাস ছিল এই গ্রামে। কিন্তু বেড়িবাঁধ না থাকার কারণে সাগরের সাথে মিশে গেছে অধিকাংশ পরিবার। শতাধিক পরিবার সাগরের সাথে যুদ্ধ করে বসবাস করে এখন। তাদেরও নির্ঘুম রাত কাটে, কখন যে মাথা গোছানোর ঠাঁই টুকু সাগরে বিলীন হয়ে যায়!
তাদেরই একজন আবু বক্কর (৪০)। তিনি বলেন, একসময় সাগর পাড়ে বসবাস ছিল তাদের পাঁচ সদস্যের পরিবার। নিষ্ঠুর সাগর তাদের মাথা গোছানোর ঠাঁই ঠুক কেঁড়ে নিয়েছে। আত্মীয়ের বাসায় কোনভাবে দিনাতিপাত করছে তারা, কিন্তু কতদিন থাকবে অন্যের ঘরে? সামর্থ্য ও নেই জায়গা নিয়ে অন্যত্রে থাকার,চিন্তায় যেন ঘুম আসেনা তার। অশ্রু মাখা নয়নে বলতে থাকে প্রধানমন্ত্রী কত মানুষকে ঘর দিয়েছে,আমাকে যদি একটি ঘর দিত!!
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এ বাস্তুহারা সোনা মিয়া বলেন, আমার সুন্দর একটা কুঁড়েঘর ছিল। টেকসই বেড়িবাঁধ না থাকায় জোয়ারের পানি আমার ঘরকে তলিয়ে নিয়ে গেছে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কোন মতে রাত্রি যাপন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এত কষ্টে ও কেউ খবর রাখেনি। জনপ্রতিনিধিরা আসে ভোটের প্রয়োজন হলে,পরে তাদের আর দেখা মিলেনা। তিনি টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
মাতারবাড়ী সাগর পারে হাঁটলে পাওয়া যায় এমন হাজারো গল্প। যে গল্পের কোন শেষ নেই। বহুবার বাড়ি হারানোর পরেও মানুষগুলো নদীর মাঝে খুঁজে ফিরেন পুরানো মাটি। কেউ ফিরে পাই সেই পুরানো মাটি,যেখানে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখে,কেউবা সেই পুরানো মাটি বালুচর রূপে।এদের দুঃখের যেন সমাপ্তি নেই।
তবে এই বিষয়ে জানতে মাতারবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু হায়দারের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয় তিনি ফোন না ধরলে ওয়াটসঅ্যাপে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হয়। কিন্তু তাতেও কোন সাড়া মেলেনি। ফোনে সাড়া না দেওয়ায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. তানজির সাইফ আহমেদ বলেন, টেকসই বেঁড়িবাধ নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। ধলঘাটা মাতারবাড়ী মিলে যার ব্যয় পড়বে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা। সুপার ডাইক নির্মাণের আগ পর্যন্ত অস্থায়ী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। গত বর্ষা মৌসুমেও অস্থায়ীভাবে মাটি এবং টিউব দিয়ে অস্থায়ী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।বর্তমানে ও কিছু ব্লক এবং জিও ব্যাগ দিয়ে অস্থায়ী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। গত মৌসুমে অস্থায়ীভাবে নব্বই লাখ টাকার কাজ করা হয়েছে এবং আগামী বছরে সুপার ডাইকের নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০