রফিকুল ইসলাম জসিম
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট>
বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসে প্রতিদিন বাড়ছে মৃত্যর মিছিল। কার্যত লকডাউনে হয়ে পড়ছে পুরো বিশ্ব। আমাদের দেশেও বাড়ছে মৃত্যু ও আক্তান্তের সংখ্যা। দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যায়গুলো বন্ধ। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা হোম কোয়ারেন্টানে দিনগুলো কিভাবে পার করছে তা জানাচ্ছে নিউজভিশন পাঠকদের।
শিক্ষার্থী, আবুজার গিফারী
বিভাগঃ- আইন,
বিশ্ব আজ অদৃশ্য শত্রুর কবলে বিপর্যস্ত। আমরা এই অদৃশ্য শত্রুর কবল থেকে মুক্তি চাই। পৃথিবীতে মৃত্যুর মিছিল ও সংক্রমণের সংখ্যা তর তর করে বেড়েই চলেছে। সারা পৃথিবী প্রতিকার হিসেবে যেটা বেছে নিয়েছে তা হলো লকডাউন। ফলশ্রুতিতে মানুষ এখন গৃহবন্দী।২০১৩ সালের পর থেকে পড়াশুনার জন্য বাড়ির বাইরে থাকা হয়। এ কারণে বাড়িতে দু'ঈদ ও বিশেষ ছুটি ছাড়া খুব কমই আসা হয়। লকডাউনের অংশ হিসেবে ক্যাম্পাস গত মাসের ১৮ তারিখ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। যার ফলে এখন বাড়িতেই অবস্থান করছি আর বাড়িতে অবস্থানের ফলে বাবা মায়ের কাছে থাকার বড্ড সু্যোগ জুটেছে। বাবা মা'কে দেখাশুনা করি। প্রত্যহ সকালে ছোট বোনদের পড়াতেও বেশ মন্দ লাগে না। তাদের সাথে গল্পের আসরটাও বেশ খুনসুটি হয়। দাদা জান্নাতবাসী হয়েছেন বেশ কয়েক বছর আগে, দাদী আমাকে খুব ভালোবাসেন যার ফলে দিনভর জুটিয়ে গল্প করতে লোকের অভাব হয় না। বই পড়তে ভালোই লাগে, নিজের একাডেমিক পড়ার পাশাপাশি দিনের অনেকটা সময় গল্প, উপন্যাস, পত্রিকা পড়ে কেটে যায়। নিয়মিত নামাজ পড়ি ও নানাবিধ ধর্মীয় কাজ পালন করি। সোশ্যাল মিডিয়া ও গুগল তো আছেই সেখানেও দখল রাখি। পত্রিকাতে লেখালেখি আগে করা হয় নি তবে ইদানিংকালে বাড়তি আগ্রহ জন্মানোর কারণে পত্রিকাগুলোতে সচেতনতামূলক লেখালেখি করি। মাঝে মাঝে সিনেমা দেখি ও বাড়ির আশেপাশে ঘুরাফেরা করি। নিজের সাধ্যনুযায়ী মানুষকে সচেতন করি এ মহামারী থেকে বেঁচে থাকার জন্য। কেননা সচেতনতায় এ ভাইরাসের বড় প্রতিষেধক। মানুষ বাড়ি থেকে বের না হলে সংক্রমণের ঝুঁকি বহুলাংশে কমে যায়। সুতরাং আমরা আমাদের জন্য হলেও বাড়িতে অবস্থান করে নিজেকে ও অপরকে ঝুঁকিমুক্ত রাখি। এই অদৃশ্য শত্রুকে আমরা অতিশীঘ্রই বধ করবো। কিন্তু মাঝখানে আমরা অনেককে ও অনেক কিছু হারাবো। তবু সেসবের প্রতিদানে হলেও জয়টা আসুক। দ্রুত আসুক। একটু দেরীতে হলেও নতুন সকাল আসবে,ইনশাআল্লাহ।
সুমনা আক্তার
বিভাগঃ ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি
কোভিড ১৯ এর ভয়াল থাবায় সমস্ত পৃথিবী এখন স্তব্ধ, গৃহবন্দী জীবন যাপন করছি সকলে। অথচ কয়েকমাস অাগেও কেউ কল্পনাও করেনি এমন দূর্যোগময় জীবন যাপনের। ১৬ মার্চ ক্যাম্পাস ছেড়ে অাসার সময় হঠাৎ ছুটি পেয়ে অানন্দ পেয়েছিলাম সকলে কিন্তু এখন তা প্রকট মন খারাপে রুপ নিয়েছে। প্রিয় ক্যাম্পাস, প্রিয় মুখগুলো, প্রানের সংগঠন, শ্রদ্ধেয় শিক্ষকবৃন্দ সকলকে ভীষন মিস করছি।
অামার ইচ্ছে যতো-
শখের খাঁচায় বেঁধে রাখা বন্য
পাখির মতো।
খুব দুরন্ত স্বভাবের অামি নিজেকে এভাবে গৃহবন্দী রাখা কষ্টের, তবে ভালো কাটছে দিন। সারাদিনকে সাজিয়ে নিয়েছি নিয়মে। ইতিমধ্যে সংগ্রহে থাকা কিছু বই পড়ে নিয়েছি এবং এখন বই না থাকায় বাধ্য হয়ে পিডিএফ পড়া লাগছে। কিছু রান্না শিখেছি, ফুল গাছগুলোর নিয়মিত পরিচর্যা চলছে, বিকালে প্রতিদিন ছাদে যায় ছোট ভাই-বোনদের নিয়ে ঘুড়ি উড়াতে, সন্ধ্যায় অামার তৈরি চা নাশতা দিয়ে পরিবারের সবাই একসাথে গল্পের অাসর জমে, ছোট বোনটাকে কোরঅান পড়তে সাহায্য করছি, পরিবারের সকল কাজে অংশগ্রহণ করছি, যেহেতু লকডাউন চলছে তাই ফোনে এবং সামাজিক মাধ্যমে সকলের সাথে যোগাযোগ রাখছি। ঘরে থেকেই সকলকে সচেতনতা এবং সামান্য সাহায্যের চেষ্টা করছি।এভাবেই ব্যস্ত সময় কেটে যাচ্ছে। এই কোয়ারান্টাইনের দীর্ঘ সময়টা হোক সকলের জন্য নতুন অামিকে খুঁজে পাওয়ার সুন্দর সময়। প্রার্থনা করছি খুব দ্রুত পৃথিবী সুস্থ হয়ে নব সূর্যের উদয় হোক।
ঘরে থাকুন সুস্থ থাকুন।
অনিল মোঃ মোমিন
বিভাগঃ অর্থনীতি বিভাগ
ছন্দে চলা জীবনে যখন দ্রুত গতিতে এগোচ্ছি তখন হঠাৎ করেই থামতে হলো। ব্যস্ত জীবনে হাসফাস করতাম যদি ছুটি পেতাম একটু! তারপর ভয়াবহ করোনা এসে গেল। সপ্তাহ পক্ষ মাস পেরিয়ে ছুটি এখনো অনির্দিষ্ট সীমায় পৌঁছে গেছে। এ ছুটি যেন রবীন্দ্রনাথের ছুটি গল্পের ফটিকের সেই কথার মতো.. ' অামার এখন ছুটি হয়েছে মা...'।
অদৃশ্য শত্রু যেন প্রকৃতিকে বাঁচানো জন্যই মানুষের উপর প্রতিশোধ নিচ্ছে। অামাদের ঘরে রেখে প্রকৃতি সাজাচ্ছে। একমাসেরও বেশি সময় অামরা ঘরবন্দী। বাইরে বের হওয়া বন্ধ হলেও থেমে নেই জীবন। হোম কোয়ারান্টাইনের এই দিনগুলোতে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা হচ্ছে না তেমন। এক অাধটু লেখালেখির সুবাদে এই সময়ে বিভিন্ন ধরনের বই পড়ে বেশি সময় কাটে। চলছে অল্প লেখালেখিও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও পরিবার কেন্দ্রীক জীবন এখন।
পাশাপাশি অাত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে ফোন ও ফেসবুকে করোনা রোধে সচেতনতা নিয়ে কথা বলছি। বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে অসহায় ও দুস্থদের সহযোগিতায় কাজ করছি। করোনায় স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে যুক্ত হয়েছি একটি সংগঠনের সাথে। মানুষ ও মানবতার সেবায় এগিয়ে অাসার এখনই সময়। অন্যদিকে ছুটে চলার প্রতিযোগিতায় পরিবার থেকেও অামরা একটু ছুটে গিয়েছিলাম।করোনায় কাছাকাছি নিয়ে এসেছে।এখন সম্পর্ক অারো গভীর হচ্ছে। ঘরদোর ঝাড়ুদেয়া থেকে রান্নায়ও এটা ওটা সাহায্য করছি।ছোটদের পড়া ধরিয়ে দিচ্ছি।
বৈশ্বিক মহামারী করোনা মানুষের জীবনদর্শনে অামূল এক পরিবর্তন এনে দিচ্ছে। এ যাত্রায় যারা বেঁচে থাকবে তাদের জীবনদর্শন হবে অারো সুন্দর, পবিত্র ও মানবিক। অর্থনৈতিক ভিত্তি নড়ে গেছে। মানুষের অসহায়ত্ব প্রকাশ পেয়েছে। মানুষ হিসেবে প্রকৃতির সাথে অামাদের দম্ভ চূর্ণবিচূর্ণ হয়েছে।এখন অাত্মোপলদ্ধি হচ্ছে সবার। ধর্মকর্ম মনোযোগ দিচ্ছি।
অাধার কেটে অাবার অালোয়ে ভরে উঠবে পৃথিবী। স্বাভাবিক জীবন শুরু হোক দ্রুতই এই প্রার্থনা অার প্রত্যাশায় অপেক্ষা করছি অনিশ্চিত এক জীবন থেকে বেড়িয়ে অাসার। সুন্দর একটি পৃথিবীতে সুন্দর মানুষেরা বিরাজ করবে এই কামনা।
শাহিদা শিমু
বিভাগঃ হিউম্যান রিসোর্স
শিক্ষাবর্ষঃ ম্যানেজমেন্ট
কোয়ারেন্টাইন টাইম কাটছে মন্দ নয়,তবুও কেন জানি শুন্যতা ময়। চারদিকে দিন দিন করোনার প্রকোপ বেড়েই চলছে এই শংকাময় সময় ঘরে থাকাই যেন শ্রেয়৷ কোয়ারেন্টাইন টাইম যাচ্ছে বলেই আমরা ফ্যামিলিকে এততা সময় দিতে পারছি সবার কেয়ার করছি বিশেষকরে আম্মুকে নানা কাজে সাহায্য করছি। এই একটা বেস্টসময় আম্মুর কাছ থেকে রান্না শিখছি। নিজের পরিবারের পাশাপাশি গ্রামের আশেপাশের সবাইকে করোনার উপসর্গগুলো সম্পর্কে অবগত করছি এবং তাদের সচেতন করছি। তারপরেও যেন সময় ফুরাতেই চায়না,কেন জানি একটা শুন্যতা কাজ করছে তা হল অনেক বেশি মিস করছি প্রানের প্রানচ্ছল, উউৎসবমুখর ক্যাম্পাসকে। শিক্ষকদের এসাইনমেন্ট, এক্সামের প্যারাও মনে হয় ভালো এমন বসে বসে কাটানো সময়ের চেয়ে । ক্লাসের ফাকে দিনভর আড্ডাই ছিল যেখানে প্রধান সেখানে দুরে বসে সবার জন্য প্রার্থনা করতে হচ্ছে আল্লাহ যেন সবাইকে সুস্থ রাখেন। আবারও যেন ফিরতে পারে প্রানের ক্যাম্পাসে। ক্যাম্পাসের ব্যাস্ততম দিন শেষে চাইতাম "উফ্ কাল যদি হত শুক্রবার! না জানি কত ভালো হত। কিন্তু প্রত্যেকটা দিন কাটছে বোরিং শুক্রবার 'অলস অবসর দিনই কেবল বোঝাতে সাহায্য করে ব্যাস্ততম দিনের গুরুত্ব '। তবে এই কোয়ারেন্টাইন সময় হচ্ছে আল্লাহর ইবাদত করা। কেবল তিনিই পারেন আমাদের সবাইকে এই মহামারীর হাত থেকে রক্ষা করত সব কিছু আগের মত করে দিতে। আবার ফিরবো প্রানের ক্যাম্পাসে। আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি, ঘরে থাকি সুস্থ থাকি, নিজে সচেতন থাকি, অনেক সচেতন করি।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০