এক বিয়ের অনুষ্ঠানে এক যুবক তার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে দেখতে পেলেন। বহুদিন পর ছোটবেলার শিক্ষককে দেখে যুবক তাঁর কাছে ছুটে গেলেন এবং বললেন, “স্যার, আপনি কি আমাকে চিনতে পেরেছেন ?”
শিক্ষক বললেন, ”না, আমি খুব দুঃখিত, তোমাকে চিনতে পারছি না।”
যুবক তখন বললেন, “স্যার,আমি আপনার ছাত্র, আপনার মনে থাকার কথা, থ্রিতে পড়ার সময় আমাদের এক সহপাঠীর দামি একটি কলম চুরি হয়েছিল।
সেই সহপাঠী কাঁদতে কাঁদতে আপনাকে নালিশ করল। আর আপনি সব ছাত্রকে চোখ বন্ধ করে দেয়ালের দিকে মুখ করে দাঁড়াতে বললেন। তারপর একজন একজন করে চেক করতে শুরু করলেন । আমি ভয়ে কাঁপতে লাগলাম। কারণ কলমটি ছিল আমার পকেটে।
আমি যে কলমটি চুরি করেছি তা আবিষ্কার হওয়ার পর আমি যে লজ্জার মুখোমুখি হব, আমার শিক্ষকরা আমার সম্পর্কে যে ধারণা পাবেন, স্কুলে সবাই আমাকে ‘চোর’ বলে ডাকবে এবং এটি জানার পর আমার মা-বাবার কী প্রতিক্রিয়া হবে- এই সমস্ত ভাবতে ভাবতে আমার মরে যেতে ইচ্ছে হল।
একসময় আমার পালা এল । আমি অনুভব করলাম আমার পকেট থেকে আপনি কলমটি বের করছেন। কিন্তু আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম আপনি কিছু বলছেন না এবং আপনি বাকী শিক্ষার্থীদের পকেট অনুসন্ধান করে চলেছেন।
তারপর যখন অনুসন্ধান শেষ হল, আপনি আমাদের চোখ খুলতে বললেন এবং আমাদের সবাইকে বসতে বললেন। ভয়ে আমি বসতে পারছিলাম না, কারণ আমার মনে হচ্ছিল একটু পরেই আপনি আমাকে ডাকবেন। না, আপনি তা না করে কলমটি সবাইকে দেখালেন এবং মালিককে ফেরৎ দিলেন।
কলমটি যে চুরি করেছে তার নাম আপনি আর কখনও কাউকে বলেননি। আপনি আমাকে একটি কথাও বলেননি, এবং আপনি কখনও কারও কাছে গল্পটির উল্লেখও করেননি।
স্যার , আপনি সেদিন আমার মর্যাদা রক্ষা করেছিলেন।
এই ঘটনার পর আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম জীবনে আর অন্যের জিনিস ছুঁয়েও দেখব না। ”
“স্যার, এখন গল্পটি মনে পড়েছে কি ? গল্পটি আপনার ভোলার কথা না !!”
শিক্ষক জবাব দিলেন, ” হ্যাঁ! গল্পটি খুব ভালভাবেই মনে আছে আমার। তবে কার পকেটে কলমটি পাওয়া গিয়েছিল তা কখনো জানতে পারিনি। কারণ যখন আমি সবার পকেট চেক করছিলাম তখন আমি ইচ্ছে করেই তোমাদের মত নিজের চোখও বন্ধ করে রেখেছিলাম।”
এভাবেই প্রাথমিক শিক্ষকরা আত্মমর্যাদা বোধসম্পন্ন জাতি গঠনে কাজ করে চলেন নিরন্তর। কিন্তু তাঁরা যথাযথ মর্যাদা পায়না। যতদিন না জাতির কর্ণধাররা এটা বুঝতে পারবে, ততদিন প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব নয়, জাতির প্রকৃত বিকাশ সম্ভব নয়।
সুত্র :-প্রাথমিক শিক্ষা তথ্য#