নুরুল ইসলাম নূর
বর্তমানে নারী সমাজ ভয়ঙ্কর সময় পার করছে। গভীর উদ্বেগ নিয়ে ভোর আর রাত কাটে অজানা আতঙ্কে। ঘরে-বাইরে কোথাও নিরাপত্তা নেই, নেই স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি। এভাবে অন্ধকার পথে হেঁটে চলছে ১৬কোটি মানুষ। প্রত্যেক সমাজে একটি দায়িত্ব থাকে বিশেষ করে নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সব সমাজেই কিছু না কিছু অপরাধ ঘটে কিন্তু সমাজে নারী ও শিশুদের ঢালাওভাবে অনিরাপদ হয়ে পড়া নিঃসন্দেহে ইঙ্গিত দেয় নৈরাজ্য ও চূড়ান্ত পর্যায়ের সামাজিক বিপর্যয়ের। এদেশে খুন-গুম, ধর্ষণ, রাহাজানি, নৈরাজ্য নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। খুনের নিত্যনতুন স্টাইল, ধর্ষণের বর্ণনার শুনে আঁতকে উঠবে যে কেউই। বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা এমন রূপ ধারণ করেছে যে, যা জাহিলিয়াতকে ও হার মানায়। এ ভূখন্ড কিছু মানুষ এবং পশু ছাড়া বাকি সবার জন্যই ভয়ের এক জনপদ,বিশেষ করে নারীদের জন্য। অনেকদিন ধরে এদেশে চলছে ধর্ষণের অসুস্থ উৎসব।
বর্তমান সমাজের চিত্রঃ
বর্তমান সমাজ দিকে তাকান মেয়ে বাবার কাছে নিরাপদ নয়,বন্ধু সহপাঠীর কাছে নিরাপদ নয়, ছাত্রী শিক্ষকের কাছে নিরাপদ নয়, যাত্রী ড্রাইভারের কাছে নিরাপদ নয়, শিষ্য তার গুরুর কাছে নিরাপদ নয়, এখন কোমলমতি শিশু মাদ্রাসার হুজুরের কাছে নিরাপদ নয়। পুরো দেশটাই এখন নিরাপত্তাহীন এক নগরীতে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে নারীদের ঘরে-বাইরে কোথাও নিরাপদ নেই। আজ নারী জাতী বাকরুদ্ধ। কন্যা শিশুর মা আজ আতংকিত। নারী শিশুর মা তার কন্যার নিরাপদ চাই কিন্তু নিরাপত্তা দিবে কে? শত শত ধর্ষণের ঘটনা ঘটার পরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়নি। আমাদের দেশে আইন আছে কিন্তু তার যথাযথ প্রয়োগ নেই। যদি থাকত এই ঘৃণ্য ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটত না। আইনের ফাঁক ফোকারে বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে। তাই ধর্ষণের মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনার পরেও ধর্ষক বুক চিতিয়ে, মাথা উচু করে হাঁটে। আবার ধর্ষিতার পরিবারের উপর নির্যাতন চালায়। মনে হয় এই দেশে নারী হয়ে জন্ম নেওয়াই অপরাধ।আজ নারীদের প্রশ্ন, কেন কোথাও তাদের নিরাপত্তা নেই? নারীদের ধর্ষণের বলি হতে হচ্ছে কেন? যে দেশে নারীর নিরাপত্তা দিতে পারে না সে দেশে কি করে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে।
দিন দিন ধর্ষণের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে ৩-১০বছরের শিশু পযর্ন্ত ধর্ষণের শিকার। একটি পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, গত ছয়মাসে ৬৩০ নারী ধর্ষণ ও ধর্ষণ চেষ্টার স্কীকার হয়েছে। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৩৭ নারীকে। ছয়মাসে ৩৯৯ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ডেইলি স্টারের রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতি ১৫দিনে ৪৭জন শিশু ধর্ষিত হয়।
ধর্ষণ বৃদ্ধির কারণঃ
কি কারণে ধর্ষণ বৃদ্ধি হচ্ছে তা আমাদের খতিয়ে দেখা উচিত। কয়েকটি কারণ নিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন মনে করছি।
* নারীপক্ষ নামক একটি সংস্থা তাদের গবেষণার মাধ্যমে ধর্ষণ বৃদ্ধি পাওয়ার অন্যতম একটি কারণ খুঁজে বের করেছে। তাদের গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে যে,২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ধর্ষণ ও ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে ৬৭১টি মামলা করা হয়। কিন্তু ৬৭১টি মামলায় ৪জনের সাজা হয়েছে মাত্র। ধর্ষণ মামলার ৯০ শতাংশ আসামী খালাস পেয়ে যায়। এসব মামলার ভেতরে যেগুলোর রায় হচ্ছে সেগুলোতে আছে দীর্ঘসূত্রিতা এই দীর্ঘ সময়ে ধর্ষিতাকে মনস্তাত্ত্বিক ধর্ষণের শিকার হতে হয়।
* ধর্ষণের প্রত্যক্ষ্য ও পরোক্ষ কারণ পর্নোগ্রাফি। পর্নোগ্রাফি নারীকে ভোগ্যসামগ্রী হিসেবে উপস্থাপন করে। এক গবেষণায় বলা হয়েছে, কেউ যদি ২১দিন কোন অভ্যাস গড়ে তুলে বা একটি কাজ করতে থাকে সেটা অনেকদিন যাবৎ সক্রিয় হয়ে যায়। বাংলাদেশে এই porn addicition এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যা কোন মানুষ চিন্তাও করতে পারে না। ১১,০০০ হাজর স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের উপর করা গবেষণায় দেখা যায় যে, প্রতিমাসে বাংলাদেশে পর্ন শব্দটদ সার্চ করা হয় ৮,০০,০০০ বার। আর প্রতিমাসে সেক্স শব্দটা সার্চ করা হয় ২২,০০,০০০ বার। বর্তমান সমাজের মানুষ পাশ্চাত্যের এসব সংস্কৃতিকে আষ্টেপৃষ্টে গলাধঃকরণ করেছে। একজন মানুষ যখন পর্ন সিনেমায় জর্জরিত হয় তখন সে স্বাভাবিক কিছু ভাবতে পারে না। মানসিক ভাবে সে হয়ে পড়ে নোংরা। সবসময় তার মাথায় খারাপ চিন্তা ঘুরপাক খায়।
*ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাবে মানুষ নৈতিকতা হারিয়ে পশুর পর্যায়ে চলে যায়। একজন মানুষের যখন ধর্মীয় মূল্যবোধ থাকে না তখন তার কাছে অন্যায় কাজকেও অন্যায় মনে হয় না।
*কিছু কিছু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম রয়েছে যারা সর্বত্র নারীকে ভোগ্যপণ্য হিসেবে উপস্থাপন করে এবং অশ্লীলতার ব্যপক প্রচার প্রচারণা করে।
এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করতে হলে প্রথমে অশ্লীল সিনেমা, নাটক, কমেডি এবং পর্ন সাইটগুলো বন্ধ করে দিতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থায় ধর্মীয় শিক্ষা সংযোজন করতে হবে।আমরা সবাই আশাবাদী বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ ধর্ষণমুক্ত হবে। ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড করতে হবে তাহলে বাংলাদেশ ধর্ষণমুক্ত হবে। বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টায় ধর্ষণমুক্ত হয়ে দেশে সুখ-শান্তির প্রস্রবণ নেমে আসবে।