প্রেস বিজ্ঞপ্তি:
প্রবীণ মানবাধিকার কর্মী এডভোকেট সুনীল কুমার সরকার এর আইন পেশায় ৫০ বছর পূর্তিতে মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন বিএইচআরএফ জেলা ও মহানগর শাখা আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিগণ বলেন, পেশায় সততা ও সাফল্যের সাথে অর্ধশত বছর পূর্তি গৌরবের। এ সাফল্য সকল পেশাজীবীর জন্যে অনুকরণীয়।
গত শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটায় নগরীর জিইসি মোড়স্থ প্যাভিলিয়ন রেস্টুরেন্টে বিএইচআরএফ মহাসচিব এডভোকেট জিয়া হাবীব আহসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বার কাউন্সিল সদস্য এডভোকেট বদরুল আনোয়ার, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বার এসোসিয়েশন এর সভাপতি এডভোকেট নাজিম উদ্দীন চৌধুরী, সম্পাদক এডভোকেট বজলুর রশিদ মিন্টু, জেলা জিপি এডভোকেট নাজমুল আহসান খান আলমগীর, জেলা পিপি এডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল, মহানগর পিপি এডভোকেট আব্দুর রশিদ, সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মোহাম্মদ হাশেম, সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি এডভোকেট সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, সাইবার আদালত চট্টগ্রামের পিপি এডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী ।
সভায় অন্যান্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন বিএইচআরএফ মহানগর শাখার সভাপতি ড.শফিকুল ইসলাম, সেক্রেটারী এডভোকেট সৈয়দ মোহাম্মদ হারুন, মানবাধিকার শাখা প্রতিনিধিবৃন্দ যথাক্রমে এডভোকেট আবুল খায়ের, এডভোকেট জান্নাতুল নাঈম রুমানা, এডভোকেট প্রদীপ আইচ দীপু, এডভোকেট আলমগীর ইউনুস, আব্দুল আজিজ, এডভোকেট সাইফুদ্দিন খালেদ সেলিম, এডভোকেট মোঃ হাসান আলী, এডভোকেট মোহাম্মদ বদরুল হাসান, এডভোকেট খুশনুদ রাইসা ঊশিকা, মাহমুদূর রহমান শাওন, এডভোকেট জিয়াউদ্দিন আরমান, এডভোকেট কে এম শান্তনু চৌধুরী, সিভিল কোর্ট কমিশনার মোঃ হাসান আল বান্না, রিদওয়ান করিম নাবিল, আহসান হাবীব, কানিজ ফাতেমা লীমা, নজরুল হোসেন শুকরিয়া, এডভোকেট শরীফ উদ্দিন, টুম্পা আইচ, ফাতিমা যাহ্রা আহসান রাইসা ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আশফা খানম, যাদুশিল্পী রাজীব বসাক প্রমুখ ।
সভায় সংবর্ধিত অতিথি এডভোকেট সুনীল কুমার সরকার সহ তৎ সহধর্মিণী অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষিকা যুথিকা সরকার, দুই পুত্র যথাক্রমে ডাঃ উদয় শংকর সরকার ও সিদ্ধার্থ সরকার প্রমুখ আয়োজকদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন। সংবর্ধনায় এডভোকেট সুনীল কুমার সরকার'কে ক্রেস্ট, মানপত্র ও ফুলেল শুভেচ্ছা দিয়ে প্রাণঢালা উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়।
বক্তাগণ এই ব্যতিক্রমী গুণীজনের সংবর্ধনার আয়োজনের জন্যে বিএইচআরএফ পরিবারের প্রতি ধন্যবাদ জানান। প্রবীণ মানবাধিকার কর্মী এডভোকেট সুনীল সরকারের আইন পেশায় ৫০ বছর পূর্তিতে মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন বিএইচআরএফ জেলা ও মহানগর শাখা আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিবৃন্দ আরো বলেন, মানবাধিকার অঙ্গনের দীর্ঘদিনের অকুতোভয় সহযোদ্ধা সুনীল কুমার সরকার ২৬/০৬/১৯৭৩ ইং তারিখে ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম জেলা বার এসোসিয়েশন এর সদস্য হিসেবে আইন পেশায় যোগদান করেন।
১৯৩৮ সনের ১২ই ফেব্রুয়ারী চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার পূর্ব গোমদন্ডী গ্রামের বর্তমান পৌর এলাকার চার নং ওয়ার্ডে এক সম্ভ্রান্ত সনাতন পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পিতা স্বর্গীয় রমনী মোহন সরকার ও মাতা স্বর্গীয় পূস্প বালা সরকারের অতি আদরের সন্তান তিনি । দুই ভাইয়ের বড়ো তিনি। মহানগরী চট্টগ্রামের লাভলেইনস্থ চট্টগ্রাম ন্যাশনাল প্রাইমারি স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা, ১৯৫৮ সনে বোয়ালখালী কধুরখীল হাইস্কুল থেকে এসএসসি (২য় বিভাগ), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চট্টগ্রাম সিটি কলেজ হতে বিএ ডিগ্রি ও চট্টগ্রাম আইন কলেজ থেকে এলএল.বি ডিগ্রি (২য় বিভাগ) অর্জন করেন । তাঁর সহধর্মীনি বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মিসেস যুথিকা সরকার হাটহাজারীর ফতেয়াবাদ গ্রামের কৃতি সন্তান। তাঁর পিতা স্বর্গীয় মনিন্দ্র পাল। যুথিকা সরকার একজন অবসরপ্রাপ্ত কুসুমকুমারী সিটি কর্পোরেশন স্কুলের শিক্ষিকা। ১৪/১২/১৯৬৬ ইং তাঁরা পরস্পর বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের দাম্পত্য জীবনে দুই পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। একজন বিশিষ্ট শল্য চিকিৎসক (সার্জন) ডাঃ উদয় শংকর সরকার ও অপরজন ক্যামিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার সিদ্ধার্থ শংকর সরকার।
এডভোকেট সুনীল কুমার সরকার ১৯৯৭ সনে চট্টগ্রাম জেলা বার এসোসিয়েশন কার্যকরী পরিষদের নির্বাচিত সিনিয়র সহ সভাপতি ছিলেন । তিনি চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা পরিষদের কো-চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন সক্রিয় মুক্তিসেনা ছিলেন। ১৯৭১ সালের ০৮ ই মার্চ মিরেশ্বরাই এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য সরবরাহ করতে গিয়ে তিনি পাক হানাদার বাহিনীর হাতে ধরা পড়লে হানাদার বাহিনী তাঁকে গুলি করার নির্দেশ দিলে তিনি কৌশলে বিশুদ্ধানন্দ মহাথেরোর স্বাক্ষরিত আইডি "সুনীল কুমার বড়ুয়া " নাম ধারন করায় বেঁচে যান। মিরেশ্বরাই থানার তদানিন্তন ওসি জনাব নুরুল ইসলাম তাঁকে জীবন বাঁচাতে সাহায্য করেন ।
বীর মুক্তিযোদ্ধা, সহকারী সেক্টর কমান্ডার (সদর দক্ষিণ মহকুমা ও কক্সবাজার মহকুমা) এ.এফ.এম. আজম ( এম এফ) প্রদত্ত ০৭/০২/১৯৭২ সনদ পত্রে মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদান উল্লেখ করেন এবং তিনি ভারতের হরিনায় ১৮৮ নং ক্যাম্পে সম্পৃক্ত ছিলেন ও তাঁর অধীনে (সুনীল বড়ুয়া নাম ধারন করে) গোয়েন্দা শাখায় কাজ করেন। তিনি বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার চট্টগ্রাম জেলা শাখার প্রাক্তন দপ্তর সম্পাদক ও বর্তমানে দেশের অন্যতম বৃহত্তর মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন- বিএইচআরএফ এর চট্গ্রাম জেলা শাখার সহ-সভাপতি, বোয়ালখালী পৌর শাখার সভাপতি এবং সিনিয়র প্যানেল এডভোকেট হিসেবে মানবাধিকার অঙ্গনে যুগপৎ ভূমিকা পালন করে আসছেন। তিনি মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন - এম জে এফ - এর সহায়তায় পরিচালিত S.G.G.H.R "মানবাধিকার বাস্তবায়নের মাধ্যমে সুশান প্রতিষ্ঠা"প্রকল্পের লিগ্যাল রিটেইনার (L.R) এর দায়িত্ব পালন করেন ।
১৯৯০ -৯৬ সনে তিনি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ও এক যুগেরও বেশি সময়কাল যাবৎ চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ, চট্টগ্রামের স্টিয়ারিং কমিটির সম্মানিত সদস্য হন ।
তিনি ভারত, থাইল্যান্ড, মায়ানমার, ব্রিটেন সহ নানা দেশ সফর করেন। লন্ডন থেকে তিনি কোম্পানী আইনের ওপর ডিসিএল ডিপ্লোমা করেন । তিনি একজন গবেষক ও সু-লেখকও বটে। চারন কবি রমেশ শীল কে নিয়ে তাঁর গবেষনামূলক প্রবন্ধ, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে মাস্টার দা সূর্য সেন ও তাঁর সহযোদ্ধাদের প্রকৃত পরিচয় ও ভূমিকা নিয়ে তাঁর গবেষণা মূলক কয়েকটি লিখা পত্র-পত্রিকায় ছাপানো হলে ইতিহাসের অনেক ভুলভ্রান্তি নতুন প্রজন্মের সামনে অপনোদন হয়।
তাঁর লেখা " মুক্তিযুদ্ধের দিন গুলো" স্বাধীনতার ইতিহাসের মূল্যবান দলিল।তাঁর রচিত "ইসলামের আলোকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, প্রেক্ষিতঃ বাংলাদেশ"- লিখাটি এদেশের আন্তঃ ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষায় মূল্যবান অবদান রাখতে পারেন। ৮৬ বছর বয়সেও তিনি তারুণ্যে ভরপুর এক দেদীপ্যমান পুরুষ।
বিএইচআরএফ মহাসচিব এডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান বলেন, ''তিনি আমাদের প্রিয় মামা, ন্যাশনাল মামা, এডভোকেট সুনীল কুমার সরকার একজন সাদা মনের মানুষ, পেশায় হাফ সেঞ্চুরি ! বিরল এই সৌভাগ্যের জন্য প্রাণঢালা অভিনন্দন এবং শুভকামনা। আমরা মহান প্রভূ দয়াময় সৃষ্টিকর্তার কাছে তাঁর দীর্ঘ জীবন, সুস্বাস্থ্য ও শতবর্ষী সুন্দর জীবন একান্তভাবে কামনা করি।'' অনুষ্ঠান শেষে মনোজ্ঞ স্মৃতিচারণ, ফটোসেশান ও প্রীতিভোজ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০