রফিকুল ইসলাম জসিম
মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের হোমেরজান গ্রামের মণিপুরী মুসলিম (পাঙাল) সম্প্রদায়ের মেধাবী শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার এবারের এসএসসি পরীক্ষায় গৌরবজনক সাফল্য অর্জন করেছে।
তেতই গাঁও রসিদ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে অংশ নিয়ে সে জিপিএ-৫ পেয়ে তার নাম করেছে। এই সাফল্য শুধু তার পরিবারের জন্য নয়, পুরো এলাকার জন্য গর্বের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মেধা, নিষ্ঠা ও নিরবচ্ছিন্ন পরিশ্রমের এক উজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি সুমাইয়া আক্তার। প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে সে অসাধারণ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। শিক্ষা, নৈতিকতা ও সাংস্কৃতিক চর্চার সমন্বয়ে এক অনন্য প্রতিভার নাম তিনি।
ছোটবেলা থেকেই মেধাবী, মায়ের স্বপ্ন ডাক্তার
শুধু নিজের নয়, পরিবারের স্বপ্নও বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে চলেছে সুমাইয়া। কৃষক পিতা আর গৃহিণী মায়ের কঠিন সংগ্রামের ফল আজ তাদের মেয়ের সাফল্যে প্রতিফলিত।
সুমাইয়ার পিতা শওকত আলী, বলেন, “আমি একজন কৃষক হলেও আমার স্বপ্ন ছিল আমার মেয়েকে ভালো মানুষ ও শিক্ষিত করে তোলা। সুমাইয়া ছোটবেলা থেকেই পরিশ্রমী ছিল। তার এই সাফল্যে আমি গর্বিত।”
অন্যদিকে, সুমাইয়ার মা হোসনে আরা বেগমের হৃদয়ে বহু বছর ধরে লালিত এক স্বপ্ন আজ ধীরে ধীরে বাস্তব হয়ে উঠছে। তিনি বলেন— জানান,“আমার ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল আমার মেয়ে একজন ডাক্তার হোক। এই স্বপ্ন নিয়ে ওর পড়াশোনায় সবসময় আমি দোয়া করেছি। এখন সে জিপিএ-৫ ও মেধাবৃত্তিতে শীর্ষ অবস্থানে এসেছে, এটা আমাদের জন্য বড় গর্বের বিষয়। সবাই যেন তার জন্য দোয়া করেন, যেন সে তার স্বপ্ন পূরণ করতে পারে।”
শিক্ষক ও পরিবারের অকুণ্ঠ উৎসাহ
সুমাইয়া শিক্ষাজীবনের প্রতিটি ধাপেই অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে। তার মামারা — ডা. নজরুল ইসলাম, শিক্ষক হামিদুল ইসলাম, এবং ব্যাংকার রফিকুল ইসলাম — সবসময় তার পাশে থেকে উৎসাহ দিয়েছেন।
তেতই গাঁও রসিদ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক কামাল উদ্দিন বলেন,“সুমাইয়া আমাদের বিদ্যালয়ের একজন মেধাবী ও শৃঙ্খলাবদ্ধ ছাত্রী। বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ অর্জন ও মেধাবৃত্তিতে শীর্ষস্থান পাওয়া তার অধ্যবসায় ও দৃঢ়তার প্রমাণ। আমরা তার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা জানাই।”
মামা ডা. নজরুল ইসলামের বক্তব্য “সুমাইয়া ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ও নিষ্ঠাবান। পড়াশোনায় তার উৎসাহ ও মনোযোগ অন্যদের জন্য অনুকরণীয়। তার কঠোর পরিশ্রম এবং আত্মবিশ্বাসের ফলেই আজ সে এসএসসিতে জিপিএ-৫ অর্জন করেছে। সকলের দোয়া ও সহযোগিতা তাকে এগিয়ে নিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি তার প্রতি গর্ব অনুভব করি এবং তার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা জানাই।”
সুমাইয়ার কৃতজ্ঞতা ও স্বপ্ন
সুমাইয়া আক্তার বলেন, “আমি আমার এই সাফল্যের জন্য খুবই খুশি ও গর্বিত। এই ফলাফল শুধুমাত্র আমার একার নয়, বরং আমার বাবা-মা, মামা এবং শিক্ষকদের অবদান ছাড়া সম্ভব হত না। তারা সবসময় আমার পাশে থেকেছেন, উৎসাহ দিয়েছেন এবং সঠিক পথে চালিত করেছেন। বিশেষ করে আমার মা-বাবার কঠোর পরিশ্রম ও ভালোবাসা আমাকে সবসময় এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। আমার মামা ডা. নজরুল ইসলাম, মাস্টার হামিদুল ইসলাম এবং ব্যাংকার রফিকুল ইসলামও যে পরিমাণ সাহায্য ও প্রেরণা দিয়েছেন, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। ভবিষ্যতে আমি একজন ভালো চিকিৎসক হয়ে দেশের সেবা করতে চাই। সকলের দোয়া ও আশীর্বাদ চাই যাতে আমি আমার স্বপ্ন পূরণ করতে পারি।”
সাফল্যের ধারাবাহিকতা
২০১৯: পঞ্চম শ্রেণিতে সাধারণ বৃত্তি ও বাংলাদেশ মণিপুরী মুসলিম এডুকেশন ট্রাস্ট (BMET)-এর বৃত্তি পরীক্ষায় প্রথম স্থান ও সম্মাননা অর্জন।
২০২২: অষ্টম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জন করে পুনরায় BMET বৃত্তি পরীক্ষায় সম্মাননা ও ক্রেস্ট লাভ।
২০২৪: কিশোরকণ্ঠ মেধাবৃত্তি পরীক্ষায় ট্যালেন্টপুলে উত্তীর্ণ হয়ে মৌলভীবাজার জেলা পর্যায়ে সম্মাননা অর্জন।
২০২৪: দশম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে আবারও BMET বৃত্তি পরীক্ষায় সম্মাননা ও ক্রেস্ট অর্জন।
উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা
সুমাইয়ার মেধা ও পরিশ্রম প্রমাণ করেছে, সঠিক চেষ্টা ও সমর্থন থাকলে সফলতা নিশ্চিত। তার এই সাফল্য শুধু নিজেকে নয়, পুরো মণিপুরী মুসলিম সমাজের শিক্ষার্থীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। তরুণরা তার থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যেতে পারে।
সুমাইয়ার ধারাবাহিক সাফল্য শুধু তার পরিবার নয়, গোটা মণিপুরী মুসলিম (পাঙাল) সমাজের গর্ব। সবাই আশাবাদী যে, সে তার মেধা, সততা ও মানবিকতা দিয়ে দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সবার জন্য অনুপ্রেরণা—সুমাইয়ার অধ্যবসায় ও সাফল্যের অনন্য গল্প।