শিবলী সাদিক।
মমতাজ জাহান দেহলভী (যিনি মধুবালা নামেই বেশি পরিচিত) একজন অন্যতম ভারতীয় অভিনেত্রী, যিনি অনেক হিন্দি ধ্রুপদী চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তার সমসাময়িক নার্গিস এবং মীনা কুমারীর বিপরীতে তাকে হিন্দি চলচ্চিত্রের সর্বাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি ভারতীয় চলচ্চিত্র ইতিহাসের সর্বাধিক সুন্দর-আকর্ষনীয় অভিনেত্রী হিসেবেও গণ্য হন।
মমতাজ জাহান নাম দিয়ে অভিনয় শুরু করলেও অভিনেত্রী দেবিকা রানী তার নাম দেন মধুবালা। মধুবালা শিশুশিল্পী হিসেবে বলিউডে অভিনয় শুরু করলেও মূল নারী চরিত্রে অভিনয় শুরু করেন ১৪ বছর বয়সে কিদার শর্মার 'নীলকমল' ছবিতে রাজকাপুরের নায়িকা হয়ে। ১৯৪৯ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত মাত্র ২৯ বছরের অভিনয় জীবনে প্রায় ৭০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। 'মুঘল-ই-আজম' (১৯৬০) মধুবালার জীবনের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র।
মধুবালা ১৯৩৩ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারী একটি দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তার বাবা পাকিস্তানের পেশোয়ারের এক টোব্যাকো কোম্পানিতে চাকরি করতেন; কিন্তু তার চাকরি চলে যাওয়াতে সংসারে অভাবের কারনে মধুবালা অভিনয়ে যোগ দেন। এগারো ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন পঞ্চম এবং পাঁচ জন মারা যায় খুব ছোটোবেলায়। এরপর তার পিতা বোম্বে (বর্তমান মুম্বাই) চলে অাসেন।
কথিত অছে, মধুবালা যখন খুব ছোট তখন এক দরবেশ তাকে দেখে ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন যে, তিনি জীবনে অনেক খ্যাতি অর্জন করবেন কিন্তু সুখী হতে পারবেন না এবং তিনি অকালে মারা যাবেন।
মধুবালা ব্যাক্তিগত জীবনে কয়েকবার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। সে সময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা দিলীপ কুমারের সাথে তার প্রেম কাহিনী বেশ সাড়া জাগিয়েছিল। পাঁচ বছর প্রেমের পর দিলীপ কুমার দুটো শর্ত দিয়েছিলেন মধুবালাকে। প্রথমত, নিজের পরিবার ছাড়তে হবে। দ্বিতীয়ত, ছাড়তে হবে অভিনয়ও। বলিউড ছাড়তে রাজি হলেও নিজের মা-বাবাকে ছাড়তে নারাজ ছিলেন মধুবালা। এর পরই দিলীপ কুমার-মধুবালার সম্পর্ক ভেঙ্গে যায়।
এরপর 'চলতি কা নাম গাড়ি' ছবিতে সে সময়ের একজন বিখ্যাত গায়ক ও কমেডি কিং নামে খ্যাত কিশোর কুমারের সাথে পরিচয় হয় এবং ১৯৬০ সালে তাকেই বিয়ে করেন। মধুবালাকে নিয়ে তার বোনের লেখা জীবনীতে জানা যায়, কিশোর কুমারকে বিয়ে করলেও তিনি দিলীপ কুমারকেই ভালবাসতেন। এমনকি দিলীপ কুমারকে দেখানোর জন্যই কিশোর কুমারকে বিয়ে করেছিলেন।
এছাড়া মধুবালাকে নিয়ে পরিচালক কিদার শর্মা, কমল আমরোহি, প্রেমনাথ এবং পাকিস্তানি রাজনীতিবিদ জুলফিকার আলী ভুট্টোর প্রেমের গুজব ছড়িয়েছে সে সময়।
মধুবালার হৃদপিন্ডে জন্মগত ছিদ্র ছিল। ১৯৫০ সালে তার শারীরিক এ সমস্যা ধরা পড়ে যার অধুনিক নাম ভেন্ট্রিকুলার সেফটাল ডিফেক্ট (ভিএসডি) এবং তখন ভারতে এর চিকিৎসা ছিল না। মধুবালার ক্যারিয়ারের স্বার্থে পরিবারের পক্ষ থেকেই অসুখটা তখন গোপন করা হয়। কাজের চাপ আর বদ্ধ স্টুডিওয়ে দিনের পর দিন কাটাতে কাটাতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। শুটিং সেটে প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়তেন। ১৯৬০ সালে কিশোর কুমারকে বিয়ের পর লন্ডন যান মধুবালা। কিন্তু চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, বড়জোর এক বছর বাঁচবেন তিনি। কিন্তু পরে আরো নয় বছর অসুখের সাথে লড়াই করে অবশেষে ২৩শে ফেব্রুয়ারী, ১৯৬৯ সালে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০