—————–
দুপুরে বাবার কাছ থেকে ১২ হাজার ৮০০ টাকা নিয়ে উত্তরা ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হতে গিয়েছিলেন মেয়েটি। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে যখন টাকা জমা দেবেন, তখনই মুঠোফোনে জানতে পারেন বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়েছেন বাবা। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না হয়েই ছুটে যান হাসপাতালে। সেদিন রাতেই ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বাবা। বাবার দাফনে ব্যয় হয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য বাবার দেওয়া সেই টাকা। এখন বাবা নেই, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্নটাও উবে গেছে তাঁর।
মেয়েটির নাম বীথি আক্তার। তাঁর বাবা গাজী মাজহারুল ইসলাম ঢাকার উত্তরার তুরাগের রাজাবাড়ি এলাকায় ভাঙারি দোকানে বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ হয়ে মারা যান। গত শনিবার দুপুরের ওই বিস্ফোরণে মাজহারুলসহ আটজন দগ্ধ হন। এখন পর্যন্ত তাঁদের মধ্যে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রাতেও মারা গেছেন দুজন। দুজন এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মাজহারুল ছিলেন ওই দোকান ও গ্যারেজের মালিক।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজাবাড়ি এলাকায় মাজহারুলের বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের সঙ্গে কথা হয়। স্ত্রী রোকসানা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের তিন মেয়ের মধ্যে দুই মেয়ে তামান্না আক্তার ও যূথি আক্তারের বিয়ে হয়ে গেছে। ছোট মেয়ে বীথি আক্তার এবার উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন। ভালো ফল করায় বাবার ইচ্ছে ছিল বীথিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াবেন। বীথিরও অনেক ইচ্ছে ছিল পড়াশোনা চালিয়ে যাবেন। বাবার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে তাঁর স্বপ্নটাও শেষ হয়ে গেল।
কথা বলতে বলতে রোকসানা আক্তার কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় দুই মেয়ে তামান্না ও বীথি তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন। বীথি আক্তার বলেন, ‘ভর্তির জন্য টাকা জমা দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় বাবার দুর্ঘটনার খবর শুনি। তাই টাকা জমা না দিয়েই ফিরে এসেছি। এখন মনে হচ্ছে, টাকা জমা না দিয়ে ভালো হয়েছে। সেই টাকায় বাবার দাফন হয়েছে। এখন বাবা নেই, তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্নও আর দেখি না। কারণ, বাবার উপার্জনের টাকাতেই সংসার চলত।’