বাপ্পী রাম রায়,
সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধিঃ
ঘুড়ি উড়াতে গিয়ে বিদ্যুৎ স্পৃষ্টে দু'টি হাত হারানো তের বছর বয়সী শিশু মতিউর চায় দু'টো কৃত্রিম হাত, চায় সমাজের অন্যান্য শিশুদের মত দুরন্তপনায় মেতে উঠতে, খেলতে ও স্কুলে যেতে। শিশু মতিউরের বাড়ি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের তিস্তার দুর্গম চরাঞ্চলের পূর্ব বেলকা গ্রামে। বেলকা বাজার থেকে দু'টো খেয়া ঘাট পার হয়ে, তবেই মতিউরের বাড়ি। মতিউরের মা মমতাজ বেগমের বিয়ে হয় হরিপুরের মৃত আঃ মজিদের ছেলে আবুল আইচের সাথে। বছর যেতে না যেতেই মা মমতাজের কোল জুড়ে আসে মতিউর। ঠিক তখন থেকেই বনিবনা চলছিল না মতিউরের বাবা-মার। তিন বছর পর জন্ম হয় তাদের দ্বিতীয় সন্তান আলেয়ার। মেয়ে আলেয়ার জন্মের ৪ মাস পর পালিয়ে যায় বাবা আবুল আইচ। মমতাজের সংসারে নেমে আসে অন্ধকার। সে (মমতাজ) বছর খানেক তার দিনমজুর বাবা মশিয়ার রহমানের বাড়িতে থেকে নিজের ও সন্তানের পেট বাঁচাতে দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে চলে যান নারায়নগঞ্জে।কর্মী হিসাবে যোগদেন একটি পোশাক কারখানায় । মতিউরের বয়স যখন সাত তখন মা মমতাজ তাকে ভর্তি করিয়ে দেন ফতুল্লা স্টেডিয়ামের কাছাকাছি একটি হাফেজি মাদ্রাসায়। আশা ছিল মতিউর একজন হাফেজ হয়ে মায়ের দুঃখ ঘুচাবে। কিন্তু মতিউরের মায়ের সে স্বপ্ন আর পুরণ হয়নি। একদিন বন্ধুদের সাথে ঘুড়ি উড়াতে গেলে ঘুড়ি গিয়ে পড়ে বিদ্যুতের তারে, আর তিন তলা ভবনের উপর উঠে সেই ঘুড়ি নামাতে গিয়ে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয় মতিউর। কেটে ফেলতে হয় তার দুই হাত। মতিউর চলে আসে বেলকার দুর্গম চরাঞ্চলে তার নানার বাড়িতে। সে আজ অবধি সেখানেই আছে। সমবয়সী শিশুরা যখন দুরন্তপনায় মেতে ওঠে, পাশের নদীতে সাঁতার কাটে, খেলাধুলা করে, স্কুলে যায় তখন অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মতিউর। ভাবতে থাকে তার হাত দু'টো যদি ফিরে পেতো। তাহলে স্কুলে যেতে পারতো, কাটতে পারতো সাঁতার আর করতে পারতো খেলাধুলা।
মতিউর জানায় ইচ্ছেগুলোর কথা। ফিরে পেতে চায় তার দু'টো হাত, হোক না তা কৃত্রিম! যেতে চায় স্কুলে, করতে চায় পড়াশোনা। এ জন্য সে প্রধানমন্ত্রীসহ দেশের বিত্তবান ও দানশীল ব্যক্তিদের সাহায্য কামনা করেছেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০