সিলেট প্রতিনিধি ঃ
-প্রফেসর ড. সৈয়দ মাকসুদুর রহমান
আল হাদীস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের মরহুম প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মুজাম্মিল আলী স্যারের এর পরিবারের সদস্যদের সাথে এক আবেগ ঘন পরিবেশে বিভাগীয় সভাপতি প্রফেসর ড. সৈয়দ মাকসুদুর রহমানের অফিসে সৌজন্যে সাক্ষাত গত ২৩ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে অনুষ্ঠিত হয় । বিভাগীয় চেয়ারম্যান গভীর শ্রদ্ধার সাথে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মুজাম্মিল আলী স্যারের অবদানের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন- স্যারের স্মৃতি ও অবদান সংরক্ষণ করতে বিভাগ বিভিন্নভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আল হাদীস বিভাগ সব সময় আপনাদের সাথে থাকবে। আপনারা অবশ্যই বিভাগের সাথে সম্পর্ক রাখবেন। এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আল-হাদীস বিভাগের অধ্যাপক ড. আ হ ম নুরুল ইসলাম এবং বিভাগের সাবেক সভাপতি প্রফেসর ড. মো: শফিকুল ইসলাম। এ সময় পরিবারের সদস্যদের পক্ষ থেকে স্যারের বড় জামাতা বক্তব্য রাখেন। তিনি বিভাগের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
দীর্ঘ প্রায় আড়াই বছর অসুস্থ থাকার পর সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে ১৬ নভেম্বর, ২০১৯ রোজ শনিবার সকাল ১১.৪৫ মিনিটে কুষ্টিয়ার নিজ বাসায় মহান রবের ডাকে সাড়া দিয়ে চলে যান বহু গ্রন্থ প্রণেতা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মুজাম্মিল আলী। যিনি ছিলেন বাংলাদেশের একজন কিংবদন্তি ইসলামী চিন্তাবিদ, লেখক ও গবেষক। সকলের প্রিয় স্বনামধন্য অধ্যাপক, নম্র অহংকারহীন এক বিশিষ্ট ইসলামী পণ্ডিত।
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মুজাম্মিল আলী (রহ.) আনুমানিক ১ লা মার্চ, ১৯৬৩ সালে সিলেট জেলার, কানাইঘাট উপজেলার ৮ নং ঝিংগাবাড়ী ইউনিয়নের বাঁশবাড়ী গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মরহুম আব্দুল জলীল ও মাতার নাম মরহুমা ফুলজান বিবি। তাঁর পিতামহ ছিলেন ভারত উপমহাদেশের বিশিষ্ট হাদীসবেত্তা মাওলানা নজির হুসাইন দেহলভির (রহ.) এর একজন বিশিষ্ট ছাত্র মরহুম মাওলানা মুহাম্মদ তাহের সিলেটী।
তাঁর নিজ দাদা র্কতৃক প্রতিষ্ঠিত বাঁশবাড়ি তাহিরিয়া মাদরাসায় দাখিল পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। অত:পর ঐতিহ্যবাহী গাছবাড়ী জামিউল উলুম আলীয়া মাদরাসা থেকে কৃতিত্বের সাথে দাখিল, আলিম ও ফাযিল পরীক্ষায় উক্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে, ১৯৮৩ সনে ঐতিহ্যবাহী মাদরাসা-ই আলীয়া ঢাকা থেকে কামিল (মুহাদ্দিস) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে চতুর্থ স্থান অর্জন করেন। ১৯৮৯ সনে ওহীর অবতরণ স্থানে অবস্থিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় মদিনা থেকে শরীয়ার উপর লিসান্স ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৯০ সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আরবি বিভাগ থেকে এম.এ পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। চাকুরী জীবনে তিনি সৌদি আরব থেকে ফিরে আসার পর কিছুদিন দায়ী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৪ সনে দারুল ইহ্সান বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ভাষা শিক্ষা ইন্সষ্টিটিউটে প্রভাষক পদে যোগদান করেন।
১৯৯৫ সনে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার আল-হাদীস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করেন।
উক্ত বিভাগের অধীনে “বাংলাদেশের মুসলিম সমাজে শিরক ও বেদআত: একটি সমীক্ষা” বিষয়ে সম্পূর্ণ আরবি ভাষায়” পিএইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ইতোমধ্যে তাঁর অনেকগুলো গবেষণামূলক প্রবন্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের র্জানালসহ অন্যান্য মাসিক ও জাতীয় দৈনিক এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর লেখাসমূহ মৌলিক ও গবেষণামূলক হওয়ায় জ্ঞানপিপাসু মহলে বেশ চাহিদা রয়েছে।
তিনি ইসলামের বিভিন্ন বিষয় সহজ ও প্রাঞ্জল ভাষায় উপস্থাপন করতেন। শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী তাঁর গভীর তত্ত্বাবধানে লাভ করেছে এম.ফিল এবং পিএইচ.ডি ডিগ্রি। তিনি শিরক, বিদআত, সুন্নাতের গুরুত্ব ও সুন্নাহ অনুসরণ, বান্দার হক আত্মীয়তার হক, সমকালীন প্রসঙ্গ, সামাজিক ও পারিবারিক বিষয়সহ অন্যান্য সমাজ ও জীবন ঘনিষ্ঠ প্রয়োজনীয় বিষয় সহজ ও সাবলীলভাবে আলোচনা করতেন।
এছাড়া সাধারণ মানুষের ইসলামী জ্ঞান লাভ সহজ করার লক্ষ্যে বাংলা ভাষায় ধর্মীয় বই-পুস্তক রচনা করেছেন। তিনি অসংখ্য অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও গবেষণামূলক মৌলিক গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর লিখিত রচনা সামগ্রীর মধ্যে অন্যতম হলো-
(১) কুরআন ও সুন্নাতের দিকে ফিরে চলো,
(২) কুরআন ও হাদীসের আলোকে দ্বীন প্রতিষ্ঠায় মুসলমানদের করণীয়,
(৩) ইসলাম ও আধুনিকতা,
(৪) অনুসরণ, অনুকরণ ও তাক্বলীদ: বৈধ সীমারেখাসহ অসংখ্য গবেষণা প্রবন্ধ; যা পাঠক সমাজে খুবই সমাদৃত।
অত্যন্ত নম্র ও বিনয়ী স্বভাবের কারণে তিনি বিভাগের শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে সম্মান ও মর্যাদার মহান আসন লাভ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি রেখে গেছেন স্ত্রী, ১ ছেলে, ৪ মেয়ে, অসংখ্য গুণগ্রাহীসহ হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী আর ইলমের দ্বীনের খেদমতের মতো সদকায়ে জারিয়া।
মহান রাব্বে কারীমের নিকট আকুতি আর মিনতি তিনি যেন তাঁর এ মুখলিস বান্দার দ্বীনের এ মহান খেদমত ও লেখনীকে সদকায়ে জারিয়া হিসেবে কবুল করেন। এর বিনিময় দান করেন। জান্নাতুল ফিরদাউসের মেহমান বানিয়ে দেন। কঠিন কিয়ামতের ময়দানে তাঁকে আরশের ছায়ায় স্থান করে দেন। ভুলক্রটি থাকলে ক্ষমা করে দেন। আমিন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০