শামীম পারভেজ – নাটোর থেকে ঃ
মাত্র ১৫ বছর বয়সে বিয়ে, আর দুই বছর পরই গর্ভে সন্তান নিয়ে তিনি একা। স্বামী শাহিন হোসেন দ্বিতীয় বিয়ে করে চলে গেলে বৃদ্ধ মা আর অনাগত সন্তানের ভবিষ্যৎ ভেবে রাজেদা হাত ধরেন রাজমিস্ত্রির জোগালির কঠিন কাজে।
নাটোরের গুরুদাসপুরের কান্দিপাড়ার সেই কিশোরী মেয়েটি—যাকে ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় স্বামী ফেলে রেখে গিয়েছিল—আজ নির্মাণশ্রমের মাঠে গর্বের সঙ্গে নিজের অবস্থান তৈরি করেছেন। জোগালি থেকে হেডমিস্ত্রি হয়ে ওঠার এই দীর্ঘ পথচলার নাম রাজেদা বেগম (৪১)।
প্রথম দিকে কিছুই জানতেন না—শুধু জানতেন টিকে থাকতে হবে। প্রতিবেশীর সহায়তায় কাজের সুযোগ মেলে। নির্মাণাধীন ভবনে ইট, বালি, সিমেন্ট তুলে দিতে দিতে কাটে দিন। অপমান, কটু কথা, ইঙ্গিতপূর্ণ প্রস্তাব—সবই আসে পথে। কিন্তু মা–সন্তানের মুখ মনে রেখেই এগিয়ে যান রাজেদা।
২৫ টাকা দৈনিক হাজিরা দিয়ে শুরু করেছিলেন ২৩ বছর আগে।
এরপর এক দশক পরিশ্রমের পর তিনি হন হেডমিস্ত্রি। এখন তাঁর অধীনে কাজ করেন ১০–১২ জন শ্রমিক। বর্তমানে দৈনিক মজুরি ৫০০ টাকা, যা দিয়ে কোনোভাবে সংসার টেনে নেন। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন; নাতি-নাতনিদের দেখভালও করতে হয়।
রাজেদার কাছে কাজ মানে শুধু রুজি-রোজগার নয়—এটা তাঁর আত্মমর্যাদার জায়গা। তাঁর ভাষায়—
> “নিন্দুকের কথায় কান না দিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। সাহস আর মানসিক শক্তি থাকলে নারী কিছুই অসম্ভব নয়।”
রাজেদার মা আমেনা বেগমের কণ্ঠেও মিশে থাকা আফসোস—
মেয়েকে দ্বিতীয় বিয়ের কথা বহুবার বলা হলেও রাজেদা নিজের সন্তানকে সামনে রেখে সেই পথে হাঁটেননি।
উপজেলা রাজমিস্ত্রি শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি জয়েন উদ্দিন বলেন—
> “রাজেদা বেগম আমাদের এলাকার একমাত্র নারী শ্রমিক। জোগালি থেকে হেডমিস্ত্রি—এটা তাঁর সততা, দৃঢ়তা আর পরিশ্রমের ফল।”
রাজেদা বেগমের গল্প আসলে শুধু একজন নারীর সংগ্রাম নয়; এটি আমাদের সমাজের সেই নীরব পরিশ্রমী মানুষের প্রতিচ্ছবি, যারা প্রতিকূলতার চেয়েও বড় হয়ে ওঠেন। এই শক্তিই একদিন সমাজকে বদলে দেয়।