রফিকুল ইসলাম জসিম,
মেধার জোরে সব বাধা পেরিয়ে চান্স পেয়েছেন মেডিকেল পড়ার। কিন্তু স্বপ্ন পূরণের এখন সবচেয়ে বড় বাধা টাকা৷ মেডিকেল ভর্তি ও লেখাপড়া খরচ দেওয়া সামর্থ্য নেই দরিদ্র বিধবা মায়ের৷ এত টাকা কোথা থেকে আসবে সে চিন্তায় ঘিরে ধরেছে মেধাবী শিক্ষার্থী ও মায়ের৷
অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থীর নাম অয়ন কুমার দে। তিনি ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস কোর্সের প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। দরিদ্রতার কারণে মেডিকেলে ভর্তি হওয়া আর পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
শিক্ষা জীবনজুড়েই আর্থিক দুশ্চিন্তা ছিল অয়নের নিত্যসঙ্গী। মেধার জোরে সব বাধা জয় করে মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পেলেও আবার সেই আর্থিক দুশ্চিন্তাই তাকে ঘিরে ধরেছে। মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ স্বপ্ন পূরণে প্রথম ধাপ অতিক্রম করলেন অয়ন। কিন্তু মেডিকেল কলেজে ভর্তি ও লেখাপড়া চালিয়ে ডাক্তার হওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা।
ভর্তির সুযোগ পেলেও বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থ। কোথায় পাবেন অর্থ, কে দেবেন অর্থের জোগান- এ শঙ্কায় দিন কাটছে দরিদ্র পরিবারের অসহায় মা ও অয়নের। বাড়িতে রয়েছে একটি ছোট টিনের ঘর। সেই একটি ঘরেই থাকেন পরিবারের সে আর অসহায় মা । পরিবারে নুন আনতে পান্তা ফুরায় অয়নের বিধবা মা। মেডিকেলে ভর্তি ও পড়ার খরচ জোগানোর সামর্থ্য তাদের নেই।
স্কুলের বারান্দায় পা রাখার ছয় মাস আগে প্রাণঘাতী ব্রেন টিউমারের কাছে হার মানেন অয়নের বাবা নিধু রঞ্জন দে। বাবার স্বপ্ন ছেলে ডাক্তার হবে। মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ বাবার স্বপ্ন পূরণে প্রথম ধাপ অতিক্রম করলেন অয়ন। এবং অয়নের মা কুলাউড়ার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের সুলতানপুরের গৃহিণী অনিমা রাণী দে। বাবার অবর্তমানে দুই ছেলেকে নিয়ে ২০০৫ সাল থেকে সংগ্রাম করে পরিবার চালাচ্ছেন। স্বামীর স্বপ্ন পূরণে তিনি সন্তানদের লেখাপড়ায় অনুপ্রেরণা জুগিয়ে যাচ্ছেন। তাই অয়নের সাফল্যে সবচেয়ে খুশি মা অনিমা দে।
অয়ন ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী, সে ছোট থেকেই তার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ছিল। স্বপ্ন পূরণের জন্য তিনি অধিকাংশ সময়ই লেখাপড়ার পিছনে ব্যয় করেছেন। স্বপ্ন পূরণের এতো কাছে এসেও টাকার অভাবে স্বপ্ন ভেঙে যাবে তা মেনে নিতে পারছেন না অয়ন।
অয়ন বলেন, মেডিকেলে চান্স পাওয়ার পর এখন খুব চিন্তা হচ্ছে। মেডিকেলের বইয়ের দাম বেশি। ফরিদপুরে পড়াশুনা করতে গিয়ে সেখানে থাকা-খাওয়াসহ অনেক খরচ হবে। এত টাকা আমার হতদরিদ্র বিধবা মা কোথায় পাবে? কীভাবে পড়ালেখার খরচ চালাব বুঝতে পারছি না। আমার পরিবারে পক্ষে সেই খরচ চালানো সম্ভব না। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি আকুল আবেদন জানাচ্ছি, তিনি যেন আমার লেখাপড়া চালানোর দায়িত্ব নেন।
অয়ন আরো জানান, স্কুল-কলেজে পড়াশুনার সময় অর্থের অভাবে একসঙ্গে প্রয়োজনীয় সব বই কিনতে পারতাম না। একটা একটা করে বই কিনতাম। মন চাইলে একটা ভালো পোশাক কিনতে পারতাম না। কারণ আমার জন্ম গরিবের ঘরে। আমার মা খুশি হয়ে যা কিনে দিতেন, আমি তাতেই খুশি থাকতাম।
অয়নের মা অনিমা দে বলেন,বাবার অনুপস্থিতিতে সংসার চালানো যেখানে দায়, সেখানে ছেলেকে মেডিকেলে লেখাপড়ার খরচ চালানো আমার কাছে দুঃস্বপ্ন। তবে স্বপ্ন দেখি আমার ছেলে ডাক্তার হবে। কিন্তু টাকার অভাবে মেয়েকে ভর্তি করাতে পারবো কিনা জানি না।
অয়ন ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী, সে লংলা আধুনিক ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ এবং আলী আমজদ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পান। এছাড়া ৫ম ও ৮ম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি লাভ করেন।
ভর্তি পরীক্ষার তারিখ জানার পর প্রস্তুতি হিসেবে প্রতিদিন ১০ ঘন্টা করে পড়ালেখা করেছে সে। অবশ্য তার ফলও পেয়েছে মেডিকেলে ভর্তি হতে পেরে। ছোটবেলা থেকে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন নিয়েই পড়াশোনা করে অয়ন। তার পড়ালেখায় সে অনুপ্রেরণা পেয়েছে অসহায় মায়ের কাছ থেকে। এখন শুধুই চিন্তা স্বপ্নের সফল বাস্তবায়ন আর প্রয়াত বাবা ও দুঃখিনী মায়ের আকাঙ্খার পূরণের চেষ্ঠা। সমাজের বিত্তবান কোন সুহৃয় ব্যক্তি কি তাদের পাশে দাড়াবেন?
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০