অধ্যাপক শামসুল হুদা লিটন,কাপাসিয়া ( গাজীপুর ) থেকেঃ
গাজীপুর কাপাসিয়া উপজেলা সদরের বাজার থেকে প্রায় পাঁচশত গজ দক্ষিণে কাপাসিয়া-বরুন-ভাকোয়াদী গামী সড়কের পাশে প্রায় ছয় কোটি টাকা মূল্যের জমি রয়েছে শারীরিক প্রতিবন্ধী ও অসহায় মাহবুব হোসেন ইরানের।
এ সম্পদই তার পরিবারের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। চমৎকার লোকেশনের মূল্যবান এ সম্পদের প্রতি প্রতিবেশি প্রভাবশালী মহলের লোলুপ দৃষ্টি পড়ায় ছলে বলে কৌশলে সমস্ত জমি দখল করে নেয় তারা। দীর্ঘদিন যাবৎ বিনা চিকিৎসায় থাকার পর গত মঙ্গলবার রাতে ইরানের মৃত্যু হলে গত বুধবার সকাল সাড়ে ১১ টায় লাশ দাফন করা হয়।
শারীরিক প্রতিবন্ধী মাহবুব হোসেন ইরানের স্ত্রী এমিলি আক্তার জানান, কাপাসিয়া বাজার সংলগ্ন বানার হাওলা ও খোদাদিয়া মৌজায় সিএস,এসএ ও আরএস রেকর্ড ও দলীল মূলে খাজনা খারিজ দিয়ে তার শ^শুর ৩১৫ শতাংশ জমি ভোগ দখল করে আসছিলেন।
২০১২ সালে তারা বসতভিটার একপাশে পাকা ঘর নির্মাণ শুরু করলে প্রায় ১২ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায় প্রভাবশালী এক প্রতিবেশি। এ সময় পূর্বের ঘরটিও গুড়িয়ে দিয়ে তাদেরকে উচ্ছেদ করে দেয় সে। তখন ন্যায় বিচারের আশায় ইরানের মা আদালতের স্মরণাপন্ন হলে আদালত মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জমি ও স্থাপনার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। কিন্তু সেই প্রতিবেশি ও তার লোকজন আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাতারাতি স্থাপনা নির্মাণ করে জমি দখল করে নেয়।
২০১২ সালে বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ হওয়ায় এবং জমি বেদখল হওয়ার শোক সইতে না পেরে স্ট্রোক করার এক পর্যায়ে অনেকটা বিনা চিকিৎসায় ২০১৫ সালে মারা যান ইরানের পিতা আব্দুল মালেক ভূইয়া। এ সময় তার মা মল্লিকা নেছা পাশ্ববর্তী গ্রামে আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে অসুস্থ হয়ে দীর্ঘ সময় দুঃখ কষ্টে থাকার পর ২০১৮ সালে মারা যান। তখন একমাত্র সন্তান মালয়েশিয়া প্রবাসী মাহবুব হোসেন ইরান দেশে ফিরে আসার কিছু দিনের মধ্যেই স্ট্রোক করলে শরীরের এক পাশ অবশ হয়ে পড়ে।
প্রথম দিকে অনেক কষ্টে চিকিৎসা করালেও এক পর্যায়ে দুই সন্তান নিয়ে তার স্ত্রী এমিলি আক্তার মানবেতর জীবন যাপন করায় স্বামীর চিকিৎসা করাতে পারেন নি। ২০১২ সাল থেকে তার পরিবারের লোকজন আদালত ও সংশ্লিষ্ট নানা মহলে ধরণা দিয়েও কোনো প্রতিকার পায়নি। অবশেষে ভব যন্ত্রণার অবসান ঘটিয়ে ইরানের মৃত্যু হলে গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১১ টায় তার লাশ দাফন করা হয়। বর্তমানে দুইটি কন্যা সন্তানসহ খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন ইরানের স্ত্রী এমিলি আক্তার। ন্যায় বিচারের আশায় এখনও তিনি বিভিন্ন মহলে ধরনা দিয়ে যাচ্ছেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০