মোঃ শিবলী সাদিক, রাজশাহী।
রাজশাহীতে হিজড়া গুরুর অধিনে বাড়িতে ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে চাঁদাবাজি করাই ছিল প্রতিদিনের কাজ। সেই চাঁদা আদায়ের টাকা দিন শেষে হিজড়া গুরুর হাতে তুলে দেয়ার পর গুরু খুশি মনে যা দিতেন তাই দিয়েই কোন মতে চলছিল জীবন। তবে এমন জীবন অভিশাপের, এমন অনুভব থেকে সমাজে গ্রহণযোগ্য পথে আয়ে নামতে সাধ জাগে। ইচ্ছা হয় সমাজের সোভ্য মানুষগুলোর মতো স্বাবলম্বী হয়ে বাঁচতে।
মুখে পান আর রাঙা ঠোটে একগুচ্ছ ফুল হাতে এভাবেই নিজের ফেলে আসা অভিশপ্ত জীবনের গল্প শোনাচ্ছিলেন তৃতীয় লিঙ্গের মিস প্রিয়া (তানভির আহমেদ রনি)। গত বছরের ১৯ জুন থেকে প্রিয়া রাজশাহী নগরীর বড়কুঠি সংলগ্ন পদ্মা পাড়ে প্রতিদিন ফুল বিক্রি করেন। নদী তীরে আসা কপোত-কপোতী সহ বিনোদন প্রেমীদের হাতে প্রিয়া লাল গোলাপ তুলে দেন। বিনিময়ে খুশি হয়ে যে যায় দেয় তাই দিয়েই অগের চেয়ে ঢের বেশি সুখেন জীবন পার করছেন তিনি। নিজের নতুন এই স্বাধীন জীবন সম্পর্কে প্রিয়া বলেন, ‘আগের জীবনের চেয়ে ভালো আছি, সবাই ভালো বাসে, ভালো বলে’।
প্রিয়া বলেন, আমাকে দেখে আমাদের অন্যান্য সদস্যরাও যেন আগ্রহী হয়। চাঁদাবাজি বা খারাপ পথে আয় করলে নিজের বভিষ্যত যেমন নষ্ট হবে তেমনি আমাদের মতো অন্য যারা আছে তাদের প্রতিও সমাজ খারাপ ধারণা পোষণ করবে। ভালো কাজ করলে সমাজ অবশ্যই সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেবে। অন্যের মুখাপেক্ষি না হয়ে থেকে প্রয়োজনে অটো চালাতে হবে, দোকানে সেলসম্যানের কাজ করতে হবে। নিজের ভাগ্য ও ভবিষ্যত নিজেকেই গড়ে নিতে হবে।
‘হাতে তালি, মুখে গালি আর অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি’ তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ সম্পর্কে এটাই হয়তো সমাজের ডিসকোর্স। তবে সেই ডিসকোর্সের পরিবর্তণ ঘটবে প্রিয়ার এই স্বাবলম্বী হবার গল্প।