জেমস আব্দুর রহিম রানা, স্টাফ রিপোর্টার :
করোনার কারনে সারা বিশ্ব যখন থমকে গেছে তখন ঘরে বসে অনলাইনে গাছের নার্সারি ব্যবসা করে সারা দেশে সাড়া ফেলেছে যশোরের মেয়ে কোহিনুর আক্তার। একই সাথে মাছ ও গাছের স্বমন্বয়ে নিজের ছাদকে পরিনত করেছেন ছাদ কৃষির রোল মডেলে। এদিকে অনলাইন নার্সারি ব্যবসা থেকে তিনি প্রতি মায়ে আয় করছেন কয়েক লাখ টাকা। বর্তমানে তিনি স্ট্রবেরির চারা বিক্রী করে নেট দুনিয়ায় ব্যপক সাড়া তৈরি করেছেন। নিজের উৎপাদনের পাশাপশি তিনি অনলাইনের মাধ্যমে অর্ডার করে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে চারা সংগ্রহ করে আবার দেশের প্রত্যেকটি জেলা উপজেলাতে কুরিয়ার সার্ভিস এবং পরিবহনের মাধ্যম্যে পাঠিয়ে দিচ্ছেন ছাদ কৃষকদের হাতে। একইসাথে বিভিন্ন কৃষকরাও তার কাছ থেকে চারা সংগ্রহ করছেন। উন্নত জাতের আমেরিকান হাইব্রীড ফেস্টিভল স্ট্রবেরির চারার চাহিদা বেশি থাকায় তার চারা চাহিদা অনেক বেশি বলে তিনি জানান।
সরজমিনে কোহিনূর আক্তারের ছাদ কৃষি দেখে দেখা গেলো, ছাদের উপরে হচ্ছে হাইড্রোফনিক পদ্ধতিতে মাছের চাষ, সেখানে রয়েছে দেশীয় প্রজাতির বিলুপ্ত প্রায় সব ধরনের মাছ। তার পাশাপাশি ছাদ জুড় রয়েছে কয়েকশ প্রকার ফল গাছ, রয়েছে ভেষজ ও হরেক রকমের জানা অজানা সব রং বেরঙের ফুল গাছ। এ ব্যাপারে কোহিনূর আক্তার আমাদের প্রতিনিধি জেমস আব্দুর রহিম রানাকে বলেন, আমার পিতা সিরাজুল ইসলাম যশোর জজ কোর্টের অবসারপ্রাপ্ত প্রধান তুলনা সহকারী। আমি মাস্টার্স শেষ করে সাংসারিক কাজকর্মের পাশাপাশি অনলাইনে গাছের চারাসহ পোষাক কেনা বেচা করি। শখের বসে করতে গিয়ে এখন পেশায় পরিনত হয়ে গেছে। তিনি বলেন, পিতা এবং স্বামীর সহযোগিতায় আমি বর্তমানে উন্নত জাতের আমেরিকান হাইব্রীড ফেস্টিভল স্ট্রবেরির চারা যেটি বাংলাদেশের আবহাওয়ার জন্য উপযোগী চারা সেটি নিয়ে কাজ করছি। এছাড়া আমি লেটুস, আইস প্লান্ট, পিটুনিয়া, জার্বেরা, গ্লাডিলিয়সসহ বেশ কিছু রেয়ার গাছের চারা নিয়ে কাজ করছি। একই সাথে এগুলোর রোপন পদ্ধতি, পরিচর্যা, গুনাগুন সম্পর্কেও অনলাইনে ট্রেনিং দিয়ে থাকি। তিনি বলেন, ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি সময়ে রোপণকৃত বারি স্ট্রবেরি-১ এর ফল সংগ্রহ পৌষ মাসে শুরু হয়ে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত চলে। ফল পেকে লাল বর্ণ ধারণ করলে ফল সংগ্রহ করতে হয়। স্ট্রবেরির সংরক্ষণ কাল খুবই কম বিধায় ফল সংগ্রহের পর পরই তা টিস্যু পেপার দিয়ে মুড়িয়ে প্লাস্টিকের ঝুড়ি বা ডিমের ট্রেতে এমনভাবে সংরণ করতে হবে যাতে ফল গাদাগাদি অবস্থায় না থাকে। ফল সংগ্রহের পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাজারজাত করতে হবে। স্ট্রবেরির সংরক্ষণ গুণ ও পরিবহন সহিষ্ণুতা কম হওয়ায় বড় বড় শহরের কাছাকাছি এর চাষ করা উত্তম। দেশেই চাষ হচ্ছে এ ফল। স্ট্রবেরির আদি বাস ইতালির রোমে। দারুণ স্বাদ আর নানা উপকারিতার জন্য দ্রুত ফলটির কদর ছড়িয়ে পড়ে সারা ইউরোপে। ফ্রান্সে স্ট্রবেরিকে বিশেষ কদর করা হয়। লাল টুকটুকে স্ট্রবেরি দেখলে লোভ সংবরণ করা দায়। এতে ক্যালরির পরিমাণ বিস্ময়করভাবে কম। কিন্তু এর পুষ্টিমান আবার অনেক বেশি। সুগন্ধি এ ফলে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আর ভিটামিন সি থাকে। পুরো এক কাপ স্ট্রবেরিতে মাত্র ৫০ ক্যালরি! দইয়ের সঙ্গে, সালাদে, জুসে, এমনকি সালসা তৈরি করে খেতে পারেন স্ট্রবেরি।
স্ট্রবেরি মূলত শীতপ্রধান অঞ্চলের ফল। তবে বর্তমানে বাংলাদেশের যেসব এলাকায় শীত বেশি পড়ে ও বেশি দিন থাকে সেসব এলাকায় বারি স্ট্রবেরি-১ নামে একটি উচ্চফলনশীল জাতের স্ট্রবেরি চাষ করা হচ্ছে। অক্টোবর থেকে নভেম্বর দুই মাস স্ট্রবেরির চারা লাগানোর জন্য উপযুক্ত। যাদের বড় করে বাগান করার মতো জায়গা আছে তারা অনায়াসেই করতে পারেন কিন্তু যাদের জায়গা নেই তারা চাইলে বারান্দা কিংবা ছাদে ছোট্ট পরিসরে স্ট্রবেরি চাষ করতে পারেন। তিনি শিক্ষিত মেয়েদের উদ্দেশ্যে বলেন, ঘরে বসে না থেকে আপনারা প্রযুক্তির আশির্বাদকে কাজে লাগান, তাহলে আপনি সাবলম্বি হতে পারবেন, হবে কয়েকজনের কর্মসংস্থান।