রিপন মিয়া, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি।
দীর্ঘ পাঁচ বছর পর হতে যাচ্ছে মৌলভীবাজার জেলা যুবলীগের সম্মেলন। এই সম্মেলনকে ঘিরে তোরণ-ফেস্টুন- ব্যানারে অর্ধকোটি টাকা বাণিজ্যের আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছে, এক দিন পরই মৌলভীবাজার জেলা যুবলীগের সম্মেলন। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে শুধু পৌর শহরেই ৭৯টি তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। ডেকোরেটার্স শ্রমিকদের তথ্য মতে, শুধু তোরণেই ২০ লাখ টাকার ওপরে খরচ হয়েছে। তোরণের পাশাপাশি সড়কের দুই পাশে, বিদ্যুতের খুঁটি ও বিভিন্ন দেয়ালে ব্যানার-ফেস্টুনের ছড়াছড়ি।
কেন্দ্রীয় নেতাদের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য চেষ্টার কোনো কমতিই রাখছেন না পদ প্রত্যাশীরা। লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করছেন তোরণ-ব্যানার-ফেস্টুন। কেন্দ্রীয় নেতাদের শুভেচ্ছা ও স্বাগত জানিয়ে পদপ্রত্যাশী ও পছন্দের নেতাকে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক চেয়ে তাদের অনুসারী নেতা-কর্মীরা এসব ফেস্টুন-বিলবোর্ড লাগিয়েছেন। আর এসব কাজে ব্যয় করা হয়েছে লাখ লাখ টাকা।
সরেজমিনে মৌলভীবাজার পৌর শহর ঘুরে দেখা যায়, সরকারি কলেজ থেকে চাঁদনী ঘাটের ইসলামপুর পর্যন্ত ৪৬টি, পুরাতন হাসপাতাল রোড থেকে সম্মেলনস্থল পর্যন্ত ১৩টি, শাহ মোস্তফা রোড থেকে বেড়িরপাড় পর্যন্ত ১০টি ও শ্রীমঙ্গল রোডে ১০টি তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া প্রত্যেকটি রোডে নতুন নতুন তোরণ, ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ড লাগানোর কাজ চলছে। ডেকোরেটার্স শ্রমিকরা রাত-দিন কাজ করছেন। পুরো শহরটাই তোরণ, ব্যানার ও ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে।
শহরের পুরাতন হাসপাতাল রোডে তোরণ লাগানোর কাজ করছেন রাজ ডেকোরেটার্সের শ্রমিক সালাম। তিনি বলেন, একেকটি তোরণের জন্য ১৫ হাজার টাকা করে দেয়।
স্মার্ট সাইনের পরিচালক নাইম আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতিদিন অসংখ্য ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ডের অর্ডার আসছে। আমাদের স্টাফরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। অনেক নতুন মানুষ কাজের সুযোগ পেয়েছে। ব্যবসাও ভালো হচ্ছে। প্রতিদিন আমাদের মতো দোকানগুলোতে লাখ লাখ টাকার ব্যবসা হচ্ছে।
এদিকে জেলা যুবলীগের সম্মেলনকে ঘিরে জেলা শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ২০ জন প্রার্থী কেন্দ্রের কাছে তাদের জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে সভাপতি পদে ৯ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ১১ জন রয়েছেন।
সভাপতি পদপ্রত্যাশীরা হলেন- সৈয়দ রেজাউর রহমান, সৈয়দ সেলিম হক, পান্না দত্ত, শেখ রুমেল আহমদ, মবশ্বির আহমদ, মহিউদ্দিন চৌধুরী, মুজিবুর রহমান, সিতার আহমদ ও মতিউর রহমান। সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশীরা হলেন- হোসেন মোহাম্মদ ওয়াহিদ সৈকত, সুমেষ দাশ, গৌছ উদ্দিন নিক্সন, হাবিবুর রহমান, তুষার আহমদ, সাদমান সাকিব চৌধুরী, সন্দীপ দাস, আবদুল আজিজ, আসাদুজ্জামান রনি, সাইফুর রহমান ও সৈয়দ নাজমুল।
জেলা যুবলীগের নেতাকর্মীরা জানান, দীর্ঘ পাঁচ বছর পর ১০ অক্টোবর মৌলভীবাজার জেলা যুবলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন হচ্ছে। সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১৭ সালের ৪ মে। করোনা মহামারির কারণে জেলা কমিটির ধারাবাহিক ত্রিবার্ষিক সম্মেলন আয়োজন পিছিয়ে যায়। কমিটিও মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়ে। গত মাসে যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি ১০ অক্টোবর মৌলভীবাজার জেলা সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করে দেয়।
জেলা যুবলীগের সহ-সম্পাদক মিনার আহমদ বলেন, আমরা এমন নেতৃত্ব চাই যে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়ন করতে পারবে। যে সম্মেলন হচ্ছে তাতে আমরা উজ্জীবিত। মৌলভীবাজারের ইতিহাসে এত বড় পরিসরে কোনো সম্মেলন হয়নি। আমরা এই সম্মেলনের সফলতা কামনা করছি। নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়ে নিজেদের খরচে এ রকম হাজার হাজার বিলবোর্ড, ব্যানার লাগিয়েছেন।
সমাজকল্যাণ সম্পাদক জাহেদুল করিম মনু বলেন, আমরা নেতৃত্বে কোনো চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ কিংবা মাদকের সঙ্গে জড়িত কাউকে দেখতে চাই না। আমরা সৎ, দক্ষ ও আদর্শিক নেতৃত্ব চাই।
জেলা যুবলীগ সূত্রে জানা গেছে, ১০ অক্টোবর মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সম্মেলন হবে। প্রধান অতিথি ও উদ্বোধক হিসেবে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সভাপতি শেখ ফজলে শামস পরশের থাকার কথা রয়েছে। প্রধান বক্তা থাকবেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান।
অতিথি থাকবেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন ও শফিউল আলম চৌধুরী এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন। বিশেষ অতিথি থাকবেন মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য মো. আবদুস শহীদ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সংসদ সদস্য নেছার আহমদ, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দা জোহরা আলাউদ্দিন ও জেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক মিছবাহুর রহমান। ২০১৭ সালের ৪ মে জেলা যুবলীগের সম্মেলন হয়। তবে পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন মেলে ২০১৯ সালে।
জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ রেজাউর রহমান সুমন বলেন, শহরে এলেই বোঝা যায় আমাদের প্রস্তুতি কেমন। মাঠেও কাজ চলছে। জাঁকজমক আয়োজনের প্রস্তুতিতে আমরা আছি। উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে চলছে আমাদের বর্ধিত সভা। আমরা প্রায় ১০ হাজার নেতাকর্মী সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। আমি বর্তমান দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার চেষ্টা করেছি। আমাদের দাবি হচ্ছে সংগঠনের স্বার্থে, যারা কখনো ছাত্রলীগ করেনি, রাজনীতির দুঃসময়ে মাঠে-ময়দানে ছিলেন না, এমন হাইব্রিড নেতৃত্ব যেন না আসে।
মৌলভীবাজার জেলা যুবলীগের সভাপতি নাহিদ হোসেন বলেন, আমাদের সব প্রস্তুতিই ধীরে ধীরে সম্পন্ন হচ্ছে। সম্মেলনে আমরা প্রায় দশ হাজার মানুষের সমাগমের প্রস্তুতি নিচ্ছি। ৩০১ জন কাউন্সিলর নির্ধারিত হয়েছেন। তাদের মতামত ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সিদ্ধান্তের আলোকে নতুন নেতৃত্ব আসবে। আমি দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছি। এখন নতুন নেতৃত্ব আসার জন্য আমি এবার আর পদপ্রত্যাশী নই।
তিনি বলেন, নেতাকর্মীরা নিজ উদ্যোগে এসব তোরণ লাগাচ্ছে। তোরণ লাগানোর জন্য আমরা কাউকে নির্দেশ দেইনি এবং কেন্দ্রও আমাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেনি।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০