জে.জাহেদ, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
যখন দেখি বিএনপি জামাত আবরার হত্যাকান্ড নিয়ে অপরাজনীতি ও ষড়যন্ত্র শুরু করে তখন বলতে হয় ‘ডাল মে কুচ কালা হে’। যখন পার্বত্য শান্তিচুক্তি হয় তখন বেগম জিয়া বলেছিলেন পাহাড়ী এলাকা ভারত হয়ে যাবে। আজ শান্তি চুক্তির কত বছর পূর্ণ হলো পার্বত্য এলাকা কী ভারত হয়ে গেছে।
চট্টগ্রামের ১২তম সম্মেলনে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বিপ্লবী মাস্টার দা সুর্যসেন ও প্রয়াত কমরেড আবুল বাশারকে স্মরণ করে এসব কথা বলেন।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বলেন, আমি পাটকল শ্রমিকের কথা বলতে এখানে এসেছি। আমি গার্মেন্টস শ্রমিকের কথা বলতে আজ দাঁড়িয়েছি। যে গার্মেস্টস নারী শ্রমিকেরা তাদের কর্মস্থলে নিরাপদ নয় তাদের কথা বলতে আমি চট্টগ্রামে এসেছি। চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী ঘোষণার বাস্তবায়নে কথা বলতে এখানে এসেছি।
এই স্বাধীন দেশে একটা সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে সহপাঠি কতৃক মেধাবী ছাত্র আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করছে এটা নতুন ঘটনা নয়। প্রতিদিনেই হচ্ছে এ রকম ঘটনা কোন না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।
সাবেক মন্ত্রী ও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেমন বলেন, এই চট্টগ্রামে এরশাদ সরকারের আমলে নিহত হয়েছিল ছাত্রনেতা ফারুক। তারপর শিবিরের দখলে গেল চট্টগ্রাম কলেজ। কিন্তু আজ ছাত্রলীগের হাতে জিম্মি হয়ে গেছে বুয়েট, রাতের নিশিতেই পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে মেধাবী ছাত্রদের।
ছাত্রলীগ অপকর্মে সীমা ছাড়িয়ে গেছে, শিবির ছাড়িয়ে যেতে পারেনি। আমার প্রশ্ন খুনিদের আপনি বিশ্ববিদ্যালয় দখল করতে দিতে পারেন না। এরা মৌলবাদীদের চেয়ে ভয়ংকর। পিটিয়ে হত্যা করা গণতন্ত্রের জন্য ভয়ংকর সংকেত। হত্যা খুনের রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। শুধু হাতকড়া দিয়ে বন্ধ করা নয়। আমরা ছাত্র রাজনীতি করে আজ এ পর্যন্ত এসেছি। ছাত্র রাজনীতি করে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। কারো মাথা খারাপ হলে মাথা কাটা নয়, ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হলে মৌলবাদীরা সুযোগ নেবে।
তিনি আরো বলেন, আমি বিএনপির কথা বুঝি কিন্তু সিপিপির কথা বুঝিনা। কি চুক্তি হলো ভারতের সাথে? বিএনপি বছরের পর বছর গঙ্গার পানি আনতে পারেন নি, শান্তিু চুক্তি করতে পারেননি আবার বড় বড় কথা বলেন-শেখ হাসিনা নাকি দেশ বিক্রি করে ফেলেছে। শেখ হাসিনা যদি দেশের স্বার্থ বিরোধী কোন চুক্তি করে তাহলে প্রথমেই বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি এর প্রতিবাদ করবে।
বিএনপি জামাত দুঃশাসনের আমলে কি হয়েছে আমরা জানিনা, পর পর তিনবার তারা দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন্স হয়েছিল। দেশের উন্নয়ন হয়েছে। দেশের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে, আমাদের প্রধানমন্ত্রী পর পর অনেক পদক পাচ্ছেন। এ উন্নয়ন কে করেছে? এ উন্নয়নে কিন্তু কৃষকের অবদান রয়েছে।
৭৪ সালে দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। বিদেশী খাদ্য সাহায্যের উপর নির্ভর হতে হয়েছিল। তখন নাইলন কাপড় পড়তে হতো। সেই কৃষক আজ ৩ কোটি ৫৪ হাজার মেট্টিক টন ধান উৎপাদন করেছে। কিন্তু ধানের মুল্য দেয় নাই, আলুর মুল্য দেয় নাই, টমোটোর মুল্য দেয় নাই। আমরা বলছি কৃষকের মুল্য দেন। সরকার বলেছে মজুরী বেড়েছে মাঠে। অথচ শ্রমিক পাচ্ছেনা পাটের মূল্য।
প্রধান অতিথি আরো বলেন, ২% শতাংশ মানুষের কাছে দেশের সব সম্পদ চলে যাচ্ছে। ৩৩ হাজার মানুষের কাছে দেশের সম্পদ বন্দি হয়ে হচ্ছে। এই বৈষম্য কেন? কারণ এতে ক্ষমতার শীর্ষে থাকা অল্প কিছু লোক জড়িত। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন উন্নয়নের টাকা উইপোকা খেয়ে নিচ্ছে। আমি বলবো আপনার পাশে দেখুন কারা রুপপুর প্রকল্পে কোটি মিলিয়ন ডলার দেখিয়েছে। মতিঝিলে দেখুন প্রশাসনের ২০০ গজের মাথায় কোটি কোটি টাকার ক্যাসিনো চলছে। গত ১১ বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। অথচ তা ফেরত আনা হলে দুবার বাজেট পেশ করা যেতো। জানি; পারবেন না এসব টাকা ফেরত আনতে। আমি বলবো আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি এমন দেশের জন্য নয়।
আগামীতে মুজিব বর্ষ পালন করবেন। যারা পালন করবেন তারা কি পড়েছেন বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবিনী। যেখানে বার বার বলা হয়েছে শ্রেণী বৈষম্যের কথা। এই বাংলাদেশে হিন্দু বৌদ্ধ মুসলিম মিলেই তো ধর্মীয় উৎসব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ন্যায্যতা ও সমতার ভিত্তিতে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার। তাহলে কেন এত বৈষম্য?
আমার নেতা মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানী বলেছিলেন, কেউ খাবে আর কেউ খাবেনা তা হবেনা তা হবেনা। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি গণমানুষের পার্টি, মেহনতি মানুষের বিজয় আনতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে আমাদের সকলের।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘মৌলবাদীরা যখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দখল করেছিলো। বিমু চৌধুরীকে যখন কু্পেিয় হত্যা করেছিলো। খুন করে যখন ঐ শিবিরের খুনিরা উল্লাস করেছিলো। আমরা রাজশাহী হতে ফিরে সংসদে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিয়েছিলাম জামাত শিবিরের রাজনীতি এই দেশে নিষিদ্ধ করতে হবে।
১১ অক্টোবর (শুক্রবার) বিকেলে নগরীর জে এম সেন হলে চট্টগ্রাম জেলার বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির ১২তম সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।
চট্টগ্রাম জেলা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহান এর সঞ্জালনায় মহানগর সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু হানিফের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আমিরুল হক আমিন।
‘দুনিয়ার মজদুর এক হও’ শিরোনামে চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী ঘোষণা বাস্তবায়ন এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ন্যায্যতা ও সমতাভিত্তিক অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার শ্লোগানে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি র্যালী শুরু করেন।
জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক আমিন বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন হচ্ছে সত্য। বাংলাদেশের সড়ক দুই লেন হতে চার লেনে উন্নীত হচ্ছে। কিন্তু আমাদের জেনে রাখা উচিত কৃষকের বর্তমান অবস্থাও। শ্রমিকের মজুরী কমিশন যদি বাস্তবায়ন না হয় তাহলে কাদের উন্নয়ন হলো দেশে? শ্রমিকের উন্নয়ন হয়নি এ কেমন উন্নয়ন? দেশের ৯৫ ভাগ মানুষ শ্রমিক তাদের উন্নয়ন করতে হবে। বাকি ঐ ৫ ভাগ লুটপাটকারী লুট করবে তা হয়না। আমরা ঐ বাংলাদেশ চাই, যে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিকেরা তাদের বেতন পাবে সঠিক সময়ে। আমরা চাই উন্নত বাংলাদেশ যেখানে সকল মানুষের অধিকার সমভাবে রক্ষিত হবে। সেই পথ দেখাবে আমাদের বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি।
সম্মলনে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ১৪ দলের শরিক দল জাসদ চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন বাবুল, যুব মেত্রী নেতা কায়সার আহমেদ, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন নেতা দিদারুল আলম চৌধুরী, সাংবাদিক নেতা হাসান ফেরদৌস, ছাত্রনেতা এমএস আলা উদ্দিন প্রমূখ।
সম্মলেনের শুরুতেই সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও সংগঠনের নেতাকর্মীরা মাস্টার দা সুর্য সেনের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে সম্মান প্রদর্শন করেন। জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনা করেন উদীচী চট্টগ্রাম জেলা কমিটি। পরে বেলুন উড়িয়ে সম্মলনের আনুষ্ঠানিকতা উদ্বোধন ও মঞ্চে সংগ্রামী কবিতা আবৃত্তি করেন রাশেদ হাসান।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০