আত্মসমালোচনা ও Inferiority Complex
বৃষ্টিস্নাত মধ্যাহ্নে শ্রমবিমুখতায় শয্যায় শুয়ে শুয়ে কত মনোহর অতীত স্মৃতি যেন নয়নের সম্মুখে ফ্লাস ব্যাক রীতিতে চলমান।
ঘন কালো কাদম্বিনীতে দ্যুলোক ছেয়েছে, তীব্র মারুত বইছে মনে হচ্ছে এখনই বুঝি বিশাল অট্টালিকা সহ আমাকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে!
সৌদামিনীর শব্দের প্রাবল্যে মনে হচ্ছে কোনো এক জীবন্ত মৃতের অন্তরে দাবিয়ে রাখা হাহাকা*র যেন হঠাৎ উন্মুক্ত হয়ে সাউন্ড বক্সের মাধ্যমে চারদিকে শ্রুত হচ্ছে!
শয্যায় শয়নরত অবস্থায় আচমকা আমার হৃদপিন্ডের ধুকপুকানি বেড়ে গেল।
মাতামহীর শাড়ি দিয়ে বানিয়ে দেয়া মোটা কাঁথাটা টেনে মস্তকের উপরে নিয়ে নিজেকে যেন আড়াল করে নিলাম ভয়ানক দৈত্যের কবল থেকে!
ভয়াতুর অবস্থায় হঠাৎ সেদিন মিত্রগণের সাথে চিড়িয়াখানায় ঘুরতে যাওয়ার স্মৃতি যেন আঁখির সম্মুখে ভিডিওর মতো চলতে প্রারম্ভ করল।
মহা বিক্রমশালী পশুরাজ হর্ষক্ষ বন্দী লোহার খাঁচার ভেতর।
কত প্রলোভন দেখালাম তবুও সে পারল না শিকল ভেঙে আমার কাছে এসে আমার নরম গোস্ত ভক্ষ*ন করতে।
মহা প্রতাপশালী শার্দুল বন্দী লোহার তৈরি এক ক্ষুদ্র কক্ষে!
তাকে উপহাস করেছিলাম ব্যঙ্গ করেছিলাম ভীষন
বেহায়াভাবে।
কারণ আমি গর্বিত ছিলাম আমি স্বাধীন বলে।
হঠাৎ মস্তিষ্কের নিউরনে বৈদ্যুতিক তাড়না দিয়ে কি যেন এল তারপর দেখলাম ওই শার্দুল ওই হর্ষক্ষ আমাকে বলছে, “এত উপহা*স এত তাচ্ছি*ল্য করছিস হে মূর্খ মানব নিজের অন্তরআত্মাকে জিজ্ঞাস করে দেখ আসলে কি তুই স্বাধীন? ”
অট্টহাসি হেসে আমি প্রত্যুত্তরে বললাম, “হ্যাঁ আমি সৃষ্টির সেরা জীব মানব আমি যেখানে খুশি গমন করতে পারি, খেয়ালখুশি মতো সব কর্ম পারি! ”
আমার উত্তরে তারা অট্টহাসিতে মেতে উঠল।
আমি তাদের উপেক্ষা করার অভিনয় করছি
কিন্তু এ উত্তরে আমার হৃদয়ে তুষ্ট হচ্ছে না, কোথায় যেন একটা খটকা থেকেই যাচ্ছে!
আদৌ কি মনুষ্যজাতি স্বাধীন?
ওই যে নবজাতকটি যার জন্মপূর্বেই তাকে আত্মীয় স্বজনদের অভীস্পার খাঁচায় অবরুদ্ধ করা হয়েছিল সেকি স্বাধীন?
ডাক্তার মোক্তার হওয়ার অভিলাষে নগরের নোংরা ব*স্তির সেই সন্তানটি যে রোজ ছেড়া গাত্রাবরণ পড়ে হস্তে পুস্তক নিয়ে মহানন্দে বিদ্যালয়ে যেত আজ পিতৃবিয়োগে তাকে তার স্বপ্নের শিক্ষা ছেড়ে দিনমজুরী করতে হচ্ছে দুমুঠো অন্নের জন্য।
দারিদ্রের লোহার খাঁচায় আজ সে বন্দী।
সে কি করে স্বাধীন হলো?
অভিনেতা বা খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্ন দেখা সেই মেয়ে অথবা ছেলেটি যে নিজেকে পরম যত্নে গড়ছে অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছাবে বলে, আত্মীয় স্বজনদের তাচ্ছিল্যে, বাবা মায়ের অভীস্পা পুরোনে যারা আজ সব জলাঞ্জলি দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার জাতাকলে পিষছে প্রতি মুহুর্তে শুধু আত্মীয় স্বজনদের অভিলাষ পুরোন করবে বলে।
সে তো আবেগের ত্যাগের খাঁচায় বন্দী।
সে কি করে স্বাধীন হলো?
হঠোকারীতায় এক কর্ম করে পরক্ষনে তার জন্য অনুশোচনায় কাতর মনুষ্যটি যে প্রতি মুহুর্তে মৃত্যু যন্ত্রণা ভোগ করছে সে কি স্বাধীন?
চারিদিকে কত দৃষ্টান্ত রয়েছে চেয়ে দেখ কেউ স্বাধীন নয়।
জন্ম পূর্ব হতে মানব বন্দী আবেগের অভিলাষের খাঁচায়।
এ জগৎ যেন এক মানব চিড়িয়াখানা!