--আরিফ ইকবাল নূর
-----------
শিশু জন্ম নিলে পরিবারের সবার মনে আনন্দের দোলা দিয়ে যায়। শিশু জন্মের সাথে সাথে একটা নতুন দিগন্তের উন্মোচন হয়। মানুষ বাবা-মাকে সন্তানের নামের সাথে মিলিয়ে ডাকতে শুরু করে। তাই সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পর পিতা-মাতার প্রথম দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে সন্তানের একটি সুন্দর অর্থবহ নাম রাখা। নামের গুরুত্ব অপরিসীম। যে কোন ব্যক্তি বা বস্তুকে শনাক্তকরণের জন্য নির্দিষ্ট নামকরণ করতে হয়। সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পর কোনভাবেই একটি নাম দিলে দায়িত্ব আদায় হয়ে যাবে না। আমাদের অসচেতনতা বা বিদেশি অপসংস্কৃতির কারণে সন্তানের এমন নাম রাখি যা ইসলামী ভাবধারার বিপরীত। নাম শুনে বুঝার উপায় থাকে না যে, সে কি মুসলিম না অমুসলিম, ছেলে না মেয়ে। যেমন- টিটু, ঝন্টু, শান্ত, ময়না, বৃষ্টি, মিষ্টি, পলাশ ইত্যাদি। আমরা বিদেশি অপসংস্কৃতির কাছে এতোই হার মেনেছি যে, তাদের কুকুর, বিড়ালের নামের সাথে আমাদের সন্তানের নামের মধ্যে কোন পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায় না।
এক জন শিশু জন্মগ্রহণ করার পর তার নাম রাখতে হয়। সে সময় তার যে নাম রাখা হয় সবাই তাকে সেই নামেই ডাকে। দুধ পানরত অবস্থায় তাকে ডাকলেও সে বুঝতে পারে, তাকে ডাকছে। তাই কেউ ডাকলে তার দিকে তাকায়। আর বড় হবার পর এ নামেই সে পরিচিতি লাভ করে। রাসুল (স) বলেছেন, হে মানবজাতি, কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে তোমাদের পিতার নামের সাথে সম্পর্ক রেখে ডাকা হবে। কাজেই তোমরা ভালো নাম রাখো। (আবু দাউদ)
রাসুল (স) আরো বলেছেন, যে নামের মধ্যে মানুষের আল্লাহর বান্দা হওয়ার কথা রয়েছে এবং যে নামে আল্লাহর প্রশংসা প্রকাশ পায় সে নাম আল্লাহর কাছে পছন্দনীয়। (বুখারী শরীফ)
রাসূল (স) এর সামনে কোনো লোক আসলে তিনি তার নাম জিজ্ঞাসা করতেন। কারো নাম সুন্দর হলে তিনি খুশী হতেন। আর কারো নাম অসুন্দর হলে তিনি তা পরিবর্তন করে দিতেন।
আধুনিক বিজ্ঞানও ভালো নাম রাখার ওপর বেশ গুরুত্ব দিয়েছে। প্যারাসাইকোলজি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর প্যারল মাস্টার তার সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রকাশ করেছেন, নাম জীবনের ওপর বেশ প্রভাব ফেলে। এমনকি নামের শব্দের অর্থেরও উপকারিতা এবং প্রভাব রয়েছে। প্রফেসর প্যারাল বলেন, আমি রহীম এবং পারভেজ নামের তুলনা করে লক্ষ্য করেছি যে, রহীম নাম থেকে সবুজ আলোকরশ্মি বের হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আউযু বিল্লাহর উপকারিতা সম্পর্কেও গবেষণা করেছি। শক্তি প্রকৃতপক্ষে শব্দের মধ্যেই রয়েছে। সে শব্দ নাম হিসেবে হোক অথবা অন্য কোনভাবে হোক। নাম মানুষের জীবনে বিরাট প্রভাব বিস্তার করে। হাদিসে এসেছে, হজরত সাঈদ ইবন মুসাইয়্যাব (রা) এর দাদা হাযন রাসূল (স) এর নিকট গেলে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নাম কি? তিনি বললেন আমার নাম হাযন (শক্ত)। রাসুল (স) বললেন, না বরং তোমার নাম হওয়া উচিত সাহল (সহজ, সরল)। তিনি উত্তরে বলেন, আমার পিতা যে নাম রেখেছেন তা আমি পরিবর্তন করব না। সাঈদ ইবনু মুসাইয়্যাব বলেন, এরপর আমাদের পরিবারে পরবর্তীকালে কঠিন অবস্থা ও পেরেশানি লেগে থাকত। (বুখারি, মিশকাত)
ভাল নাম জীবনকে যেমন সুন্দর করে, অনদিকে খারাপ নাম মানব জীবনে অনেক ক্ষেত্রে বয়ে আনে দুঃখ, দুর্দশা ও অশুভ পরিণতি। মন্দ নাম মানব জীবনে করুণ পরিণতি ডেকে আনে এর একটি ঘটনা উল্লেখ রয়েছে ইমাম মালেক (র) এর মুয়াত্তা নামক গ্রন্থে। হযরত ইয়াহইয়া বিন সাঈদ (রাঃ) বর্ণনা করেন, হযরত উমর বিন খাত্তাব (রাঃ) জনৈক ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নাম কি? সে বলল, জামরাত (অগ্নিস্ফুলিঙ্গ)। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কার ছেলে? সে উত্তর দিল, ইবনে শিহাব (অগ্নিশিখার পুত্র)। তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, তোমার বাড়ী কোথায়? সে উত্তর দিল, বাহরুন নার (অগ্নিগর্ভে)। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, কোন অংশে? সে উত্তর দিল, বিযাতিল লাযা (শিখাময় অংশে) হযরত উমর (রাঃ) তাকে বললেন, যাও, তোমার গোত্রের লোকদের নিকট গিয়ে দেখ তারা ভস্মীভূত হয়েছে। লোকটি বলেন, তাদের কাছে এসে দেখলাম যে, সত্যিই তারা ভস্মীভূত হয়েছে।
সন্তানের ভালো নামকরণ করা পিতার দায়িত্ব। হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) এবং হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলূল্লাহ (সঃ) বলেছেন যার সন্তান জন্মগ্রহণ করে, সে যেন তার সন্তানের নাম সুন্দর করে রাখে এবং তাকে উত্তম আদব কায়দা শিক্ষা দেয়। অর্থবোধক, মার্জিত, রুচিসম্পন্ন ইসলামী নামকরণের দ্বারা মানুষের চিন্তা-চেতনা ও মানসিকতার উন্নতি ঘটে। ভাল নামের বদৌলতে সন্তানের অনাগত দিনগুলো বয়ে আনতে পারে মঙ্গল ও কল্যাণ। তাই শিশুর সুন্দর, অর্থবোধক, মার্জিত, ইসলামী ভাবধারায় উজ্জীবিত, সুন্দর নাম রাখা পিতার কর্তব্য।
আরিফ ইকবাল নূর
শিক্ষার্থী : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০