———
আপনার শিশু সন্তান সাড়ে চার বছর বা পাঁচ বছর কিংবা তারও পরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যায়। সেখানে অক্ষর জ্ঞান শেখে। কিংবা তোতাপাখির মতো মুখস্থ কিছু বুলি শেখে। যেমন সুন্দর সুন্দর ছড়া, ইসলামিক ইনস্টিটিউট হলে কুরআন হাদীসের অংশবিশেষ ও দোয়া দরূদ এসব। কিন্তু পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত কিংবা তারও বেশি বয়স পর্যন্ত সে শেখে পরিবার থেকে।
সেখানে আপনার সন্তানের প্রথম শিক্ষক তার মা, দ্বিতীয় তার বাবা, তৃতীয় তার দাদা/দাদি, চতুর্থ শিক্ষক তার ছোট চাচা/ফুপিমণি, যে বেশি আদর করে, তারপর কাজিন, বড় চাচা এবং প্রতিবেশী। এভাবেই আপনার আত্মীয় স্বজন সবাই আপনার সন্তানের শিক্ষক। সবাই বেতন বিহীন শিক্ষক। যারা নানান সময়ে, নানান আলাপে, নানান সংস্কৃতিতে, নানান আয়োজনে, নানান বিষয়ের ঝগড়াঝাটিতে আপনার সন্তানকে শেখায়। শেখায় বুলি, শেখায় সংস্কৃতি এবং আচরণ। সব মিলিয়ে গঠন হয় নৈতিকতা।
আপনার শিশু সন্তান ছোট বলে আপনি তাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। অনায়াসে তার সামনে অনৈতিক কাজ করে যাচ্ছেন। অনর্গল মিথ্যা বলে যাচ্ছেন। সন্তানের সামনে স্বামী/স্ত্রীর সাথে ঝগড়া, রাগারাগি এবং গালিগালাজ করতেও দ্বিধা করছেন না। প্রতিবেশীকে বিশ্রী ভাষায় গালিগালাজ করে একহাত নিচ্ছেন। পাওনাদার আসলে সন্তানকে শিখিয়ে দিচ্ছেন – ‘আব্বু বাসায় নাই বল’। বাসায় বসে থেকে মোবাইলে বলছেন অফিসে। অফিসের বসকে বলছেন ‘আমি অসুস্থ’। সন্তানের সামনে স্টার জলসা, জি বাংলার সিরিয়াল দেখছেন, বাংলা মুভির ফাইটিংস, ইংলিশ মুভির গান, হিন্দি মুভির পরকীয়া দেখছেন।
এসব আপনার সন্তান শিখেছে। শেখার পরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যায় অক্ষর জ্ঞানের জন্য। অক্ষর জ্ঞানের পর ডিগ্রী। ডিগ্রির পর চাকরি। ডিগ্রী, সার্টিফিকেট, বিদ্যা, চাকরি, ভালো বেতন সব আছে কিন্তু নৈতিকতা নেই। কারণ নৈতিকতা আপনার কাছ থেকে পায়নি। পরিবারে তার প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাস ছিল যেখানে অনৈতিক কাজ, অনৈতিক আলাপ, মিথ্যা প্রলাপ বেশি ছিল।
অনেকেই আফসোস করে বলে – অনেক চেষ্টা করেও সন্তানকে মানুষ করতে পারলাম না। সন্তান মানুষ হবার আগে সন্তানের শিক্ষক মানুষ হওয়া চাই। কারণ শিশু সন্তানেরা অনুকরণীয় হয়ে থাকে বেশি। তারা যাকে বেশি ভালোবাসে তাকে বেশি অনুকরণ করে। যেটা বেশি পছন্দ সেটাই গ্রহণ করে।
ছেলে সন্তান হলে বাবার মতো হতে চায়, মেয়ে হলে মায়ের মতো। তারা তাদের কাজিনের মতো করে কথা বলতে চায়। একটু বড় হলে চাচার মতো চুল রাখতে চায়, কিংবা মেয়ে হলে ফুপিমণির মতো সাজতে চায়। তারা দাদা/দাদির মতো করে খাবার গ্রহণ করতে চায়। বড়দের মতো জিনিস ব্যবহার করতে চায়। হ্যাঁ এখানে তারা শেখে।
সুতরাং শিশুদের ভালো কিছু শেখান। সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলো পরিবার। মাধ্যম হলো আপনার ব্যবহার। উপকরণ হলো আপনার পরিবারের সংস্কৃতি। সেসব ভালো হলে আপনার সন্তান ভালো হবে।
শিশুদের নৈতিক শিক্ষালয় তার পরিবার
✍️মুহাম্মদ রমিজ উদ্দিন