– মোহাম্মদ আবদুল্লাহ মজুমদার:
সাদা টি-শার্ট। টি শার্টের ওপর নানা রঙের ছোড়াছুড়িতে ভিন্ন রঙ ধারণ করা। শার্টের ওপর প্রিয় বন্ধু-বান্ধবদের স্মরণে ইচ্ছামতো লেখালেখি। ক্যাম্পাসজুড়ে দাপিয়ে বেড়ানো। গানের তালে একসঙ্গে নাচা। খাওয়া-দাওয়া আর নিজেদের আয়োজনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এসব মূলত বর্তমান সময়ে র্যাগ ডের উপজীব্য বিষয়।
শার্টের ওপর বন্ধু-বান্ধবরা সবাই একে অপরে ইচ্ছে মতো যাচ্ছেতাই লিখেছে। এসব লেখায় বিভিন্ন ধরনের আপত্তিকর বাক্য-শব্দচয়ন ও অশ্লীলতার ফুলঝুড়ি দেখা যায়।
স্নাতক ডিগ্রি লাভের শেষ সময়ে শিক্ষা সমাপনী বা র্যাগ ডে পালিত হয়ে থাকে। শিক্ষার্থীরা এ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে চান নানা রকম বর্ণাঢ্য আয়োজনের মাধ্যমে। বিভাগকে বর্ণিলভাবে সাজানো, ঘোড়ার গাড়িতে করে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ, সাউন্ডস্পিকারে গান বাজানো, স্ট্রিট ড্যান্স, রঙ মেখে আনন্দ আর ক্যাম্পাসে ফ্লাশ মব এখন র্যাগ ডের অপরিহার্য অনুষঙ্গ। শুধু আনন্দই নয়, সেদিন সবাই টিএসসি অডিটরিয়ামে সম্মানিত শিক্ষকদের পরামর্শও মনোযোগ দিয়ে শোনেন। যে লাজুক ক্লাসমেটটি কোনো দিন কারও সামনে পারফর্ম করেননি, তাকেও বন্ধুদের জোরাজুরিতে সেদিন মাইক্রোফোন হাতে কিছু একটা পারফর্ম করতে দেখা যায়। সে সঙ্গে চলতে থাকে সেলফি স্টিক দিয়ে দফায় দফায় ছবি তোলা আর পারফরম্যান্সগুলো ভিডিও করে রাখা। সবার জন্য দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে সাদা টি-শার্টের ব্যবস্থা করা হয়, যেখানে শিক্ষার্থীরা রঙিন কলমে একে অন্যের প্রতি বিগত ক্যাম্পাস জীবনের অনুভূতিগুলো সংক্ষেপে লিখে দেন। কিন্তু এসব উল্লাসের মধ্যে আছে এক বেদনা বিধুর অনুভূতি। ছেড়ে যাবার আর্তনাদ। কিছুই করবার নেই, ছেড়ে তো যেতেই হয়- তবুও যাওয়া হয় না-
বিদায় সেতো তুচ্ছ অনুভব
ছিঁড়ে যাবেনা বাঁধন।
ছুটে যাবো বিভিন্ন প্রান্তরে
তবুও আমরা স্বজন।
হ্যাঁ, ছেড়ে গিয়েও বন্ধুত্বের বাঁধন, ক্যাম্পাসের টান ও স্মৃতিচারন কোন অংশেই কমে যায় না। তবে পৃথিবীর সকল মানুষ জানে এ দিনটিতে শিক্ষার্থীরা শুধু বিদায়ের হাহাকার নয়, ক্যাম্পাস থেকে আরো কিছু নিয়ে যায় রাষ্ট্র, মানবতা ও স্বজাতির জন্য। এরপর হয়ত তারা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে নতুন আলো ছড়ায়। নতুন কোন শান্তির পথ খুঁজে আনে মানব গোষ্ঠির জন্য।
কিন্তু ক্যাম্পাস, শিক্ষক ও পরবর্তী অনুজদের জন্য আমরা কী রেখে যাই!
মাগিবাজ, বোকা চোদা, কনডম ব্যাবসায়ী, সুন্দরী বৌদী দপ্তর মালিক, ডলির আব্বু, মাগিখোর, চুদির ভাই, লুইচ্চা, মাল মিমি, সুন্দরী নলনা, ময়দা সুন্দরী, এসব বাক্যগুলো? ক্যাম্পাসের আকাশ-বাতাস, শিক্ষক ও পরবর্তী অনুজরা কী আমাদের কাছে এসব আশা করে? নিঃসন্দেহে কেউই আমাদের নিকট এসব যৌন সুড়সুড়ি আশা করে না। তারা চায় শিক্ষা, সংষ্কৃতি, রাষ্ট্র, সমাজ, অর্থনীতি ও কূটনীতি পরিচালনার ক্ষেত্রে নতুন কোন ফর্মূলা, নতুন কোন নির্দেশনা। আমাদের বিগত জীবনের সর্বোত্তম রিভিউগুলো। এমন শব্দগুলো যদি আমাদের জীবনের বিশেষ একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশের রিভিউ হয় তাহলে শিক্ষাঙ্গন গুলোর পাঠদান ও শিক্ষাগ্রহনের ব্যপারেও প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক নয়।
মনে রাখতে হবে, আমাদের শিক্ষা জীবনের রিভিউগুলো শিক্ষাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে নয়। তার মাধ্যমে আগামী দিনের সুন্দর একটি মানবগোষ্ঠি ও বসবাসের উগযোগী একটি পৃথিবী তৈরি করতে।
লেখক: শিক্ষার্থী, টেলিভিশন চলচ্চিত্র ও আলোকচিত্র বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়