অ্যাডভোকেট মো. সাইফুদ্দীন খালেদ
দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে জীবনযাত্রার সর্ম্পক অত্যন্ত নিবিড়। একটি পরিবার কীভাবে তাদের দৈনন্দিন জীবনকে নির্বাহ করবে তা নির্ভর করে তাদের আয়, চাহিদা এবং দ্রব্যমূলের ওপর। রমজানে এবং করোনায় সৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে বাজারে দ্রব্যমূল্যের দাম স্বাভাবিক রাখা সংশ্লিষ্টদের নৈতিক দায়িত্ব। প্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্যের মূল্য যখন সহনীয় পর্যায়ে এবং সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে, তখন তাদের জীবন কাটে স্বস্থিতে। অন্যদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য যখন সাধারণ মানুষের আর্থিক সংগতির সঙ্গে অসামঞ্জস্যর্পূণ হয়ে যায়, তখন দরিদ্র এবং অতিদরিদ্র পরিবারে শুরু হয় অশান্তি। তাই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে একদিকে জনজীবনে নেমে আসে কষ্টের কালো ছায়া।
রোজা নির্ভর পণ্যের মধ্যে ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, ডাল, খেজুর এবং মসলাজাতীয় পণ্যের মধ্যে এলাচ, শুকনা মরিচ, রসুন ও আদার দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। দৈনন্দিন জীবনে আমাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা। আর এ মৌলিক মানবিক চাহিদাগুলোর মধ্যে অন্নের প্রয়োজন সর্বাগ্রে। কিন্তু খাদ্যদ্রব্য, চাল, ডাল, তেল, লবণ, মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, মাছ, তরকারি, চিনি, দুধ ইত্যাদি নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি জনজীবনের গতিকে অচল ও আড়ষ্ট করে তুলে। চাল বা ভোজ্যতেলের দাম বাড়তে থাকলে স্বল্প আয়ের মানুষের পক্ষে কেনা কঠিন হয়ে পড়বে।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি দেশের অন্যতম সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত। ন্যায়সঙ্গত মূল্য বলতে বর্তমানে কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র পাওয়া যায় না। অতীতের সেই কথাগুলো আজ আমাদের কাছে রূপকথার মতো মনে হয়। যেমন- শায়েস্তা খাঁর আমলে টাকায় আট মন চাল পাওয়া যেত। এখন আর সে মূল্য আশা করা যায় না। এক সের লবণ এক পয়সা, এক পয়সার এক সের দুধ, দু আনায় এক সের তেল, একটি লুঙ্গি এক টাকা এবং একটি সুতি শাড়ি দু টাকা- তা খুব বেশি দিনের কথা না হলেও এটা কেউ এখন আর আশা করে না। ব্রিটিশ শাসনামলেও আমাদের দেশে দ্রব্যমূল্য একটা নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় ছিল।
বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঘোড়া জনগণকে হতাশার রাজ্যে নিয়ে যাচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পাশাপাশি বাড়ছে বাসাভাড়া, পরিবহন-ভাড়া, চিকিৎসা ও শিক্ষা খাতের ব্যয়। সরকারি-বেসরকারি সেবার দামও বাড়ছে। সেই অনুপাতে বাড়ছে না মানুষের আয়। ফলে জীবনযাত্রার মানেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বাজার অস্থিতিশীল হওয়া মানেই দেশের বেশির ভাগ মানুষের ওপর চাপ পড়া। তাই সরকারকে বাজারে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠাই শুধু নয়, কর্মসংস্থানও বাড়াতে হবে। তখন উৎপাদন বাড়বে, বাড়বে ক্রয়ক্ষমতা। আয় বাড়লে মূল্যস্ফীতির আঘাতও হয় সহনীয়। কালোবাজারি, মুনাফাখোর, মজুদদার প্রভৃতির কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় ও অপরিহার্য দ্রব্যগুলোর মূল্যবৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতিদিন এবং ক্রমে এসব পণ্য সংগ্রহ করা কঠিনতর হচ্ছে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত মানুষের জন্য। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি জনজীবন বিপর্যস্ত করে তুলে এবং বুভুক্ষু মানুষ অর্ধাহার ও অনাহারে দিন কাটাতে হয়।
মানুষের একটু ভালোভাবে বাঁচার দাবি আজ সর্বত্র। কিন্তু বাস্তব পরস্থিতি তাদের প্রতিকূলে। সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার সীমাকে অতিক্রম করে অশ্বগতিতে বেড়ে চলছে ব্যয়ের খাত। এরূপ হারে পানির বিল, গ্যাস বিল, জ্বালানি তেলের মূল্য ও দ্রব্যমূল্যের অতিরিক্ত খরচ জনগণের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। আর নি¤œবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত শ্রেণীই মূল্যের এরূপ বৃদ্ধিতে অসহায় ও নিরূপায় হয়ে পড়েছে। অথচ তারাই মূল্যবোধ দিয়ে সমাজকে ধরে রাখে; তারাই গণতান্ত্রিক বিধি ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের মূল শক্তি হিসেবে কাজ করে। জনগণ আশা করছেন তাদের এরূপ অবস্থার উন্নতি হবে, দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিসের মূল্য কমবে। কিন্তু তাদের সে স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাচ্ছে। বাজারের ওপর সরকার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে কি ব্যর্থ হচ্ছে- বিদ্যমান পরিস্থিতে এমন প্রশ্ন দাঁড়ায়। অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে বাজারে যাচ্ছেতাই কা-কীর্তি চালাতে না পারে, এ জন্য টিসিবিকে শক্তিশালী করার তাগিদ ইতিমধ্যে বহুবার নানা মহল থেকে এসেছে।
কিন্তু এ ব্যাপারে আশানুরূপ উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। শুধু যে পণ্যদ্রব্যের দামই বড়েছে তাই নয়, বড়েছে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম, পরিবহন ব্যয়, বাসা ভাড়া। অর্থনীতির সূত্রমতে, উৎপাদন ব্যয় ছাড়াও জিনিসপত্রের দাম বাজারের চাহিদা-জোগানের ভারসাম্যের ওপর নির্ভর করে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির মূলে বহুবিধ কারণ রয়েছে- স্বার্থপরতা, অসাধু সমাজবিরোধী তৎপরতা, অর্থলোভী মানুষের অমানবিক আচরণ। তাছাড়া প্রাকৃতিক কারণে অর্থাৎ অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টির কারণে জমিতে আশানুরূপ ফসল উৎপাদিত না হলে দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে যায়। আবার কৃষি ও শিল্প কারখানাগুলোর উৎপাদনে সীমাবদ্ধ এবং বিদেশী মুদ্রার অভাবে পণ্যদ্রব্য চাহিদা পরিমাণ আমদানি করা সম্ভব না হলে চোরাকারবারি, মজুদদারি ও দুর্নীতিপরায়ণ ব্যবসায়ীরা এর সুযোগ গ্রহণ করে। তারা জিনিসের কৃত্রিম অভাব সৃষ্টি করে, ফলে দ্রব্যের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পায়।
পণ্যমূল্য নির্ধারণে যুগোপযোগি আইন প্রণয়ন ও তা প্রয়োগের ব্যবস্থা নিতে হবে। এ আইনের আওতায় দ্রব্যমূলের মূল্য নির্ধারণ, চোরাকারবারি প্রতিরোধ, ফড়িয়া ও অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য হ্রাস, দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি ব্যবস্থা গ্রহণ করে এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যেতে পারে। সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয় অথবা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এ পদক্ষেপ নিতে পারে। ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) কে আরো শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে হবে। নিয়ম বহির্ভূতভাবে কেউ কেনাবেচা করলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ব্যবসায়ী বিশেষজ্ঞ কমিটি নামে একটি কমিটি গঠন করে এ অবস্থার উন্নতি করা যেতে পারে। ব্যবসায়ীদের নীতি-নৈতিকতা, জবাবদিহি ও ইসলাম সম্মত জনসেবামূলক ভূমিকা রমজানে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল ও সহনীয় পর্যায়ে রাখতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।
অপরদিকে আধুনিক রাষ্ট্রে নাগরিকের পাঁচ মৌলিক অধিকারের মধ্যে একটি খাদ্যের অধিকার। নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা এর মধ্যেই পড়ে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (ঋঅঙ) এর মতে খাদ্য নিরাপত্তা হলো এমন একটি অবস্থা পৃথিবীর সব স্থানের সকল মানুষের সুস্বাস্থ্যে নিশ্চিন্তে পর্যাপ্ত প্রয়োজনীয় পছন্দের খাবার পাওয়ার দৈহিক ও আর্থিক সুযোগ সৃষ্টি করা। যে খাদ্যে কোনো ক্ষতিকারক কেমিকেলস নেই, জীবানু দ্বারা দুষ্ট নয়, প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ ও প্রাকৃতিকভাবে তৈরি, সেটাই নিরাপদ খাবার। সাম্প্রতিককালে খাদ্যে ভেজালের ছড়াছড়ি। মানুষ কেন খাদ্যে ভেজাল দেয় তার কারন পর্যালোচনা করলে মানুষের ভোগী মনোবৃত্তির পরিচয় মেলে। স্বল্প সময়ে যাতে অধিকতর উপার্জন করা যায় সেদিকেই ভেজালকারীদের প্রধান লক্ষ্য থাকে। এতে পরিশ্রম কম হয়, কিন্তু রাতারাতি বিত্তবান হয়ে ওঠা যায়। স্বার্থান্ধ মানুষ নিজেদের স্বার্থের কথা মনে রেখে ভেজাল দিতে গিয়ে মানুষের যে চরম সর্বনাশ সাধন করে তা কখনই তারা ভেবে দেখে না। অন্যের ভালমন্দ বিবেচনা করার মত বিবেক তাদের নেই। ভেজাল মিশ্রিত জিনিস খাওয়ার ফলে নানা প্রকার রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনার যথেষ্ট নিদর্শন সহজেই পাওয়া যায়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় যেসব রাসায়নিক পদার্থ নিরাপদ খাদ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে তার অন্যতম ফরমালিন। এটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে মূলত মানুষের মৃতদেহ সংরক্ষণসহ নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে। কিন্তু দ্রুত পচন রোধে সহায়ক বিধায় অসাধু ব্যবসায়ীরা ফরমালিনকে একরকম সহজ মুনাফার পদ্ধতি হিসেবে খাদ্যদ্রব্যে ব্যবহার করছে। ফলমূল, শাকসবজি ও মাছ-মাংসে এর ব্যবহার যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। বস্তুত বর্তমানে এর অপব্যবহারই হচ্ছে বেশি। জটিল প্রক্রিয়ায় তৈরি ফাস্টফুড, রাস্তার খোলা খাবার এবং অন্যান্য প্রক্রিয়াজাত খাদ্য তৈরি করছে ক্যান্সারের মতো দুরারোগ্য ব্যাধি। পাশাপাশি রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার জনস্বাস্থ্য এবং পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করছে। মানুষ খাদ্য গ্রহণ করে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য। কিন্তু ভেজাল ও ক্ষতিকর খাদ্য মানুষের সুস্থতার বদলে অসুস্থতা বরণ করছে। অনিরাপদ খাদ্যে নানান জটিল রোগের বিস্তার ঘটছে। জনস্বাস্থ্যের জন্য তা হুমকি হয়ে দেখা দিচ্ছে।
সরকার ২০০৯ সালে 'ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯' এবং নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০১৩ সালে ‘নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩' প্রণয়ন করেছে। নিরাপদ খাদ্য আইনে- মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর অথবা বিষক্রিয়া সৃষ্টিকারী রাসায়নিক দ্রব্য বা উহার উপাদান বা বস্তু, কীটনাশক বা বালাইনাশক, খাদ্যের রঞ্জক বা সুগন্ধি বা অন্য কোন বিষাক্ত সংযোজন দ্রব্য বা প্রক্রিয়া সহায়ক কোন খাদ্যদ্রব্য বা খাদ্যোপকরণে ব্যবহার বা অন্তর্ভূক্তি অথবা উক্তরূপ দ্রব্য মিশ্রিত খাদ্যদ্রব্য বা খাদ্যোপকরণ মজুদ, বিপণন বা বিক্রয় করলে অনূর্ধ্ব ৫ বছর কিন্তু অন্যূন চার বছর কারাদ- বা অনূর্ধ্ব ১০ লক্ষ টাকা অন্যূন পাঁচ লক্ষ টাকা অর্থদ- বা উভয় দ-ের বিধান রাখা হয়েছে। পুনরায় একই অপরাধ সংঘটন করলে ৫ বছর কারাদ- বা ২০ লক্ষ টাকা অর্থদ- বা উভয় দ-।
এছাড়া খাদ্য নিয়ে মিথ্যা বিজ্ঞাপন, নিবন্ধন ছাড়া খাদ্যপণ্য বিপণন, ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত কাউকে দিয়ে খাদ্য বিক্রি করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদ-ের বিধান রাখা হয়েছে। ২০১৯ সালের প্রথম দিকে ভেজাল বিরোধী তৎপরতা লক্ষ্য করা গেলেও পরবর্তীতে তা অনেকটা ভাটা পরে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এ যেসব কার্যকলাপকে অপরাধ গণ্য করা হয়েছে তা হলো-আইন ও বিধি দ্বারা নির্ধারিত হওয়া সত্ত্বেও পণ্যে মোড়ক ব্যবহার না করা; মূল্যের তালিকা প্রদর্শন না করা; সেবার মূল্যের তালিকা সংরক্ষণ ও প্রদর্শন না করা; ধার্যকৃত মূল্যের অধিক মূল্যে পণ্য, ঔষধ বা সেবা বিক্রি করা; ভেজাল পণ্য বা ঔষধ বিক্রি করা; খাদ্যপণ্যে নিষিদ্ধ দ্রব্য মিশ্রণ করা; মিথ্যা বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রেতাসাধারণকে প্রতারিত করা; প্রতিশ্রুত পণ্য বা সেবা যথাযথভাবে বিক্রি বা সরবরাহ না করা; ওজনে কারচুপি করা; বাটখারা বা ওজন পরিমাপক যন্ত্রে প্রকৃত ওজন অপেক্ষা অতিরিক্ত ওজন প্রদর্শন করা; পরিমাপে কারচুপি করা; দৈর্ঘ্য পরিমাপক কার্যে ব্যবহৃত পরিমাপক ফিতা বা অন্য কিছুতে কারচুপি করা; পণ্যের নব প্রস্তুত বা উৎপাদন করা; মেয়াদ উত্তীর্ণ কোনো পণ্য বা ঔষধ বিক্রি করা; সেবাগ্রহীতার জীবন বা নিরাপত্তা বিপন্নকারী কার্য করা এবং অবহেলা, দায়িত্বহীনতা বা অসতর্কতা দিয়ে সেবাগ্রহীতার অর্থ, স্বাস্থ্য বা জীবনহানি ঘটানো।
ভোক্তা অধিকার আইন ও নিরাপদ খাদ্য আইন এর যথাযথ প্রয়োগ করতে পারলে খাদ্যে ভেজাল দেওয়ার দুষ্টচক্র থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব। পাশাপাশি দেশের প্রধান খাদ্য নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই) কে আরো সতর্ক ও সক্রিয় হয়ে ভেজাল খাদ্য নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখতে হবে। শহরের দোকান ও রেস্টুরেন্টে ভেজাল বিরোধী অভিযান চালানোর পর কিছুদিন ভেজালমুক্ত খাদ্যদ্রব্য পাওয়া যায় কিন্তু পরে যেই-সেই হয়ে যায়।
এর থেকে পরিত্রানের জন্য আমাদের সমাজিক ভাবেও নীতি-নৈতিকতা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আর এর জন্য দরকার ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা। কুরআন ও হাদিসের আলোকে ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে। হারাম পদার্থ সম্পর্কে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স.) বলেছেন- ‘যতক্ষণ পর্যন্ত বান্দা হারাম পদার্থ বর্জন না করে, ততক্ষণ পর্যন্ত পরহেজগার শ্রেণীর মধ্যে গণ্য হতে পারে না।’ মুসলিম ব্যবসায়ীদেরকে সৎ পন্থা অবলম্বন করতে হবে। অন্য ধর্মাবলম্বীদেরকে তাদের ধর্মনীতি অনুসারে নৈতিক দায়িত্ববোধ থেকে সততা, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার আলোকে ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে। মনে রাখতে হবে যারা ভেজাল খাদ্য তৈরী করে তাদের তৈরী ভেজাল দ্রব্যের ফাঁদে তারা নিজেরা কিংবা তাদের পরিবার পরিজনও পতিত হতে পারে কোনো না কোনো সময়।
অবশেষে বলবো- রমজানে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখতে ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এর আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং ভেজাল প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের নৈতিকতাবোধ, উৎপাদক, বিপণনকারী, ভোক্তা সবাইকেই সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। পাশাপাশি রাষ্ট্রকে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
লেখক ঃ অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০