মোহাম্মদ আবদুল্লাহ মজুমদার
ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে চাঁদাবাজি ও দুর্নীতির দায়ে দল থেকে বহিস্কার থেকে শুরু করে যুবলীগের নেতাদের ক্যাসিনো বাণিজ্য পর্যন্ত যাদের দল থেকে বিতাড়িত করা হলো এখন তাদের মনে অনেক দুঃখ। যার কোন সীমা-পরিসীমা নেই। কেউ কেউ বলছেন তাদের অবস্থা এখন হাশরের ময়দানের মতো। কেউ এখন তাদের চিনে না। অথচ গত জীবনে তারা অধিকাংশ কাজই নেতাদের নির্দেশে করেছেন। দলকে টিকিয়ে রাখার জন্য করেছেন। কত কিছু করেছেন তারা। খেয়ে, না খেয়ে সকাল দুপুর সন্ধ্যারাতে, ঝড়-বৃষ্টি দুর্যোগ উপেক্ষা করে নেতাদের ডাকে ছুটে গিয়েছেন। অথচ আজ আকাশের নিচে ভূপৃষ্ঠের উপরে তাদের চেয়ে অসহায় কেউ নেই। মনিরুজ্জামান মনিরের সে গানটিই মনে পড়ে যায়
‘আমি কত জনে কত কি দিলাম
যাইবার কালে একজনারও দেখা না পাইলাম’
যে আদর্শকে তারা বুকে ধারণ করেছিলো, যে রাজনীতির জন্য সহ¯্র মানুষের বুকে আঘাত করেছিলো, যে দলকে টিকিয়ে রাখার জন্য সাধারণ মানুষের ধিক্কারকে বরণ করে নিয়েছিলো। সে আদর্শ সে রাজনীতি সে দল সে নেতা নেত্রীরা আজ তাদের চেনে না। তাদের কথা বলে না। তাদের বেদনা অনুভব করে না। সবচেয়ে বুকফাঁটা আর্তনাদের বিষয় হলো সে আদর্শ ও দলকে ধারণ করা ছাড়াও এখন আর তাদের কোন উপায় নেই। কারন এখন তারা কোন মুখে অন্য অদর্শের সামনে কিংবা মানুষের সামনে গিয়ে দাঁড়াবে?
আমরা মাঝে মাঝে বলে থাকি যে, অমুক প্রধানমন্ত্রী চা বিক্রি করতেন। অমুক বিজনেস ম্যাগনেট এক সময় মুরগী বিক্রি করতেন। আবার আমরা এটিও ধারণা করে বসি যে, তারা হয়ত তাদের সততাকে পুঁজি করে আজকের এ আসন দখল করে নিয়েছেন। কিন্তু এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ধারণা। যিনি মুরগী বিক্রি করতেন তিনি যার নিকট থেকে মুরগী কিনতেন তাকেও ঠকাতেন যার কাছে মুরগী বিক্রি করতেন তাকেও ঠকাতেন। গাড়ির চালক-হেলপাররা তাকে দেখলে অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে চলে যেতেন। কারন তাদের অগাধ বিশ্বাস ছিলো তার কাছ থেকে কখনো ভাড়া পাওয়া যাবে না।
সুতারাং চা বিক্রির সততাকে পুঁজি করে যদি প্রধানমন্ত্রী হওয়া যেতো, মুরগী বিক্রি থেকে যদি বিজনেস ম্যাগনেট হবার পুঁজি যদি সততা হতো তাহলে অন্যান্য মুরগী বিক্রেতারা আমৃত্যু মুরগী বিক্রি করতে হতো না। আর মুরগীর মতো তাদের ধুকে ধুকে মরতেও হতো না। সুতারাং অসৎ দুনিয়াতে সততাকে পুঁজি মনে করা হলো পৃথিবীর নিকৃষ্টতম বোকামি।
আজ যাদের তাদের নেতারা চিনে না, যাদের ত্যাগকে ব্যবহৃত টিস্যুর মতো ছুঁড়ে মেরেছে, যাদের পায়ের তলা থেকে আজ মাটি সরে গেছে, মাথার ওপর থেকে সরে গেছে ছায়। তারা যদি এখনও জোকের মতো পূর্বের আদর্শকেই কাপুরুষত্বের মোহে আঁকড়ে ধরে তাহলে এখন থেকে তাদের জীবনে ব্যর্থতার আরেকটি অধ্যায় শুরু হতে যাচ্ছে।
তারা কি পারবে এখন বঞ্চিতদের কাতারে দাঁড়াতে? তারা কি পারবে বেকারত্বের অতিষ্ঠ যন্ত্রণা ও দারিদ্রতার নির্মম কষাঘাতে অভিশপ্ত জীবনের প্রহর গুনছে তাদের হয়ে কথা বলতে? পারবে! যারা মজলুম তাদের বিষাদের ভাগ নিয়ে নতুন একটি মানবিক আদর্শ ও গণসমৃক্ত রাজনীতির সূচনা করে অতীত জীবনের ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করতে?
লেখক: শিক্ষার্থী, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ও আলোকচিত্র বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০