আহমেদ হানিফ :
প্রতিনিয়ত পৃথিবীর নানা বিবর্তন হচ্ছে, মানুষের চিন্তা চেতনার সাথে বস্তুর সংশ্লেষে হচ্ছে নানান যুগান্তকারী আবিষ্কার। ভোরের সূর্যের আলো প্রভাতে আলোকিত করে মানুষকে কর্মতৎপর, চঞ্চল করে তুলছে শুধু এমন না,আলোকিত সত্তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মানুষ দিন দিন নিজেদের নানাভাবে, নানান সাজে সজ্জিত করছে।পুরাতনকে বর্জন কিংবা পরিমার্জন করে নতুনত্বের সৃজনে মানুষ সৃষ্টিলগ্ন থেকে পারঙ্গম।নিজেদের মেধাকে কাজে লাগিয়ে নতুনত্বের আহ্বানে একত্রিত করছে বিশ্বের তাবৎ শক্তি।
এই প্রতিনিয়ত পরিবর্তন, অনুকরণ, অনুসরণ যেমন ভালোত্বের সংস্পর্শে নিয়ে যায় মানবসত্তাকে তেমনি অনেক সময় অশুভ চিন্তার মানুষের জন্য জাতি নানা ভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
বলে রাখা ভালো পৃথিবীর প্রতিটা পরিবর্তন যেমন মানুষেরা সৃজনীশক্তির গুণকীর্তন করে তেমনি,পৃথিবী শ্রেষ্ঠ জীবের স্বীকৃতি প্রদান করে।
তাই এই পরিবর্তনের নেশায় মজে মানুষ পরিবর্তনের দিকে প্রতিনিয়ত অগ্রসরমান।
রুচিসম্মত আসবাবপত্রে সাজানো একটা ঘর যেমন সর্বজনে প্রশংসার উপলক্ষ্য করে তেমনি কর্তার ভূয়সী প্রশংসা করেন।
তাই ছোট ছোট পরিবর্তন করে হলেও মানুষ নিজের মহত্ত্ব, সৃজনশীলতার বিকাশ সাধন করতে চায়।
পুরাতনকে বদলের অভ্যাস সবসময় ভালো হবে এমন না অনেক সময় অশুভ সংকেতে নষ্ট হয়ে পড়ে সবকিছু।
আজ নানাবিধ পরিবর্তনের কথা না বললেও বর্তমানে বাংলাদেশের শিক্ষার পরিবর্তন এর কথা বলতেই হচ্ছে।
বর্তমানে শিক্ষার ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি,
পাঠদানে,পাঠ্যসূচিতে,পরীক্ষণ ও মূল্যায়নে আজ নতুনত্বের সৃজন।
সাধারণত আগেরকার মূল্যায়নের সাথে বর্তমানের শিক্ষা মূল্যায়নের পার্থক্য বেশি সূচিত হচ্ছে।
আমরা আগে দেখতাম বছরের পরীক্ষণ পদ্ধতিটা একদমই লেখার মাধ্যমে হতো,সশরীরে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে ১০০ নাম্বারের বিষয়ভিত্তিক পরীক্ষা দিতে হতো।তবে এখন ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণিতে নানামুখী পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি অ্যাসাইনমেন্ট জমা ও নানান কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে বার্ষিক মূল্যায়ন হচ্ছে।
তবে যে বিষয়গুলো জনগণ ও অভিভাবকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনা ও সমালোচনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে তা হলো, জীবনমুখী শিক্ষার বিষয় দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে রান্না করা,বিছানা গুছানো, সংস্কৃতির চর্চা।
এইসব কাজগুলো করাতে গিয়ে অভিভাবকদের নানান প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে শিক্ষকসহ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট নানা মহল।
অভিভাবকদের বরাতে জানা যায় তারা এই পরিবর্তনের দিকে আঙ্গুল তুলছে তারা বলতে চাচ্ছে এইসব কাজ কর্মগুলো তো আমাদের সন্তানদের পারিবারিক শিক্ষার অংশ,শিক্ষার্থীদের বাড়িতে বড়দের দেখাদেখিতে এইসব বিষয় আয়ত্ত করতে পারে।কেন আপনারা আমাদের সন্তানদের এইসব শিক্ষা দিবেন,আমরাতো আপনাদের দায়িত্ব দিয়ে রাখিনি।এমন শত প্রশ্নের মাধ্যমে অভিভাবকের জেরার পরেও অনেক মানুষ আবার তাদের শিক্ষা পরিবর্তনের পক্ষে নানান যুক্তি উপস্থাপন করছেন।
এমতাবস্থায় বলা যাচ্ছে না কোনটা ভালো কোনটা খারাপ।
তবে পরিতাপের বিষয় হলো শিক্ষার্থীরা করোনাকালীন সময়ে যে মোবাইল ও ইন্টারনেট নির্ভর হয়ে পড়েছিলো তা থেকে এখনো বের হতে পারছেনা, বর্তমানে মূল্যায়নের যে অ্যাসাইনমেন্টগুলো প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদান করা হচ্ছে তা অনুসন্ধান করতে শিক্ষার্থীরা ইন্টারনেটের সহায়তা নিচ্ছে।
এখানে প্রশ্ন উত্থাপিত হয় তাহলে এই পরিবর্তন শিক্ষার্থীদের কতটা পরিবর্তন করছে,তারা যদি তাদের কৃত কাজের সমাধান ইন্টারনেট ব্যবহার করে পেতে হয় তাহলে এত আয়োজন করে পরিবর্তন করার কি দরকার পরেছে।
শিক্ষার্থীরা পাঠ্যপুস্তক পড়া বাদ দিয়ে নিশ্চিত হয়ে বসে থাকে কেউ না কেউ এই প্রশ্ন গুলোর উত্তর ইউটিউব ও নানান পেজে আপলোড করবে তখনতো পাবোই।
বর্তমানে অনেক অশিক্ষিত অভিভাবকদের তাদের গৃহশিক্ষকে বাদ দিয়েও দিয়েছে কারণ তার সন্তানকে তো আর পড়াতে হচ্ছে না,সব কিছুইতো ইন্টারনেটের বদৌলতে পেয়ে যাচ্ছে।
এইসব পরিবর্তন ফলপ্রসূ হউক শিক্ষার্থীরা শিখুক,জানুক তার মেধা দিয়ে নতুন করে সাজাক পৃথিবী।
তবে আমিও সমাজের একজন সুচিন্তক হিসেবে বলতে চাই,
আজকের শিশুরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ, তারাই সুন্দর আগামী বিনির্মাণে নিয়োজিত হবে।তাদের সৃজনশীলতার বহুমাত্রিক বিকাশে আমরা লাভ করবো সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।
তাই এই সুন্দর প্রজন্মের জন্য ভাবতে হচ্ছে আমরা যদি আজ চুপ করে থাকি তাহলে হয়তো আমাদের আগামী প্রজন্ম হারাবে তার সৃজনী শক্তি।
এই বাংলাদেশ কেউই কামনা করবে না,নীতির চর্চা হউক সবক্ষেত্রেই।
তাই বলতে চাই,
আমাদের এই পরিবর্তন গুলো যেনো হয় শিক্ষার্থীদের সুন্দর আগামী নির্মাণের প্রথম পদক্ষেপ, তারা যেন এই পরিবর্তন থেকে শিখতে পারে নতুনত্বের নানান দিক,গল্প কথার এই শিখনী যেন তাদের মেধার বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করে।ভালোত্বের সয়লাবে যেন জীবন পরিবর্তন করতে পারে।
পরিশেষে বলতে চাই, এই পরিবর্তন যেন হয় শিক্ষার্থীদের মনন ও মেধার বিকাশে সহায়ক,এই পরিবর্তন যেন হয় সর্বজন জ্ঞাত ও অনুশীলন যোগ্য।
এই শিক্ষা পরিবর্তন যেন অভিভাবক মনে আতঙ্ক না ছড়িয়ে ছড়াক নতুনত্বের বার্তা।
তবেই আমরা সূর্যের কিরণের মতো আলোকিত করতে পারবো আমাদের আগামী ভবিষ্যৎ, শিক্ষার্থীরা পাবে অবারিত চিন্তার,সৃজনীর সুযোগ।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০